পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখ এই সব বেচে চলছিল—সব সময়ে তার খদের জুটতো না । মা বৌমানুষ, বিশেষতঃ এটা অপরিচিত স্থান, নিজের শ্বশুরবাড়ি হলেও এর সঙ্গে এত কাল কোনো সম্পর্কই ছিল না— কিন্তু মা ওসব মানতেন না, লজ্জ করে বাড়ি বসে থাকৃলে তার চলত না, যে-দিন ঘরে কিছু নেই, পাড়ায় বেরিমে যেতেন, দু-একটা জিনিষ বেচবার কি বন্ধক দেবার চেষ্টা করতেন পাড়ায় মেয়েদের কাছে –প্রায়ই সৌধীন জিনিষ, হয়ত একটা ভাল কাচের পুতুল, কি গালার থেলন, চন্দনকাঠের হাতপাখা—এই সব। সেলাইয়ের কলটা ছোটকাকীম সিকি দামে কিনেছিলেন । বাবার গায়ের ভারি পুরু পশমী ওভারকোটটা সরকােরর কিনে নিয়েছিল আট টাকায় মোটে এক বছর আগে পঞ্চাশ টাকা দিয়ে বাব তৈরি করেছিলেন । চাল না-হয় একরকম ক’রে জুঢ়লো, কিন্তু আমাদের পরণের কাপড়ের দুর্দশ ক্রমেই বেড়ে উঠছিল । আমাদের সবারই একথান ক'রে কাপড়ে এসে ঠেকেচে—তাও ছেড়া, আমার কপিভখানা তে তিন জায়গায় সেলাই । সীতা বলত তুই বড় কাপড় চিড়িসূ দাদা । কিন্তু আমার দোষ কি ? পুরোনো কাপড়, একটু জোরে লাফালাফি করাতেই ছিড়ে যেত, মা অমৃনি সেলাই করতে বসে যেতেন । বাব। আজকাল কেমন হয়ে গেছেন, তেমন কথাবার্তা বলেন না—বাড়িতেও থাকেন না প্রায়ই । তাকে পাওয়াই স্বায়ু না যে কাপড়ের কথা বল। তা ছাড়া বাবার মুখের দিকে চেয়ে কোনো কথা বলতেও ইচ্ছে যায় না। তিনি সব সময়ই চাকুরির চেষ্টায় এখানে-ওখানে ঘুরে বেড়ান, কিন্তু কোথাও এপর্য্যস্ত কিছু জোটেনি। মাস দুই একটা গোলদারী দোকানে থাত্যপত্র লেখ বার চাকুরি পেয়েছিলেন, কিন্তু এখন আর সে চাকুরি নেই-সেঞ্জঞ্জাঠামশাম্বের ছেলে নবীন বলছিল নাকি মদ খেয়ে গেছে। কিন্তু এখানে এসে বাবা এক দিনও মদ থেয়েছেন ব’লে আমার মনে হয় না, বাবা মদ খেলেই উৎপাত করেন আমর ভাল করেই জানি, কিন্তু এধানে এসে পৰ্য্যস্ত দেখচি বাবার মত শাস্ত মানুষটি আর পৃথিবীতে বুঝি নেই। এত শাস্ত, এত ভালমানুষ স্নেহময় লোকটি মদ খেলে কি হয়েই ষেতেন ! চা-বাগানের সে-সব রাতের কীৰ্ত্তি মনে হলেও ভয় করে । রবিবার। আমার স্কুল নেই, আমি সারাদিন বসে বসে छू8ि-●धऔ* ২৩ ম্যাজেণ্টা গুলে রং তৈরি করেছি, দু-তিনটে শিশিতে ভৰ্ত্তি করে রেখেছি, সীতার পাচ-ছখানা পুতুলের কাপড় রঙে ছুপিয়ে দিয়েছি—ক্লাসের একটা ছেলের কাছ থেকে অনেকখানি ম্যাজেণ্টার গুড়ে চেয়ে নিয়েছিলুম। সন্ধ্যার একটু পরেই খেয়ে শুম্বেচি। কত রাত্রে যেন ঘুম ভেঙে গেল একটু অবাক্ হয়ে চেয়ে দেখি আমাদের ঘরের দোরে জ্যোঠাইম, আমার খুড়তুতো জ্যাঠতুতো ভাই বোনের দল, ছোটকাকা-সবাই দাড়িয়ে । মা কাদচে —সীতা বিছানায় সবে ঘুম ভেঙে উঠে বসে চোথ মুছচে । আমার জ্যাঠতুত ভাই হেসে বললে ঐ দ্যাথ, তোর বাবা কি করছে । চেয়ে দেখি ঘরের কোণে খাটে বাবা তিনটে বালিসের তুলো ছিড়ে পুটুলি বাধচেন । তুলোতে বাবার চোখমুখ, মাথার চুল, সারা গ৷ এক অদ্ভুত রকম হয়েচে দেখতে । আমি অবাক হয়ে জিগ্যেস করলুম - কি হয়েচে বাব ? - বাবা বললেন-চ-বাগানে আবার চাকরি পেয়েচি-– ছোট সাহেব তার করেচে ; সকালের গাড়ীতে ঘাব কি-না তাই পুটুলিগুলো বেঁধেছেদে এখন না রাথলে—ক’টা বাজল রে খোকা ? আমার বয়েস কম হলেও আমার বুঝতে দেরি হ’ল ন। যে এবার বাবা মাতাল হন নি । এ অন্য জিনিষ। তার চেয়েও গুরুতর কিছু । ঘরের দৃশুট। আমার মনে চিরকালের একটা ছাপ করে দিয়েছিল – জীবনে কখনও ভুলিনি— চোখ বুজলেই উত্তরঞ্জীবনে আবার সে রাত্রির দৃশ্যট মনে এসেচে। একটা মাত্র কেরোসিনের টেমি জলচে ঘরে-তারই রাঙা ক্ষীণ আলোয় ঘরের কোণে বাবার তুলে-মাখ। চেহারা— মাথায় মুখে, কানে পিঠে সৰ্ব্বাঙ্গে ছেড়া বালিসের লালচে পুরানে বিচি-ওয়ালা তুলে মেজেতে বসে ম কাদচেন— দরজার কাছে কৌতুক দেখতে খুড়ীমা জ্যেঠাইমারা জড় হয়েচেন-খুড়তুতো ভাই বোনেরা হাস্চে ...দাদাকে ঘরের মধ্যে দেথতে পেলাম না, বোধ হয় বাইরে কোথাও গিয়ে থাকৃবে । পর দিন সকালে আমাদের ঘরের সাম্নে উঠানে দলে দলে লোক জড় হ’তে লাগল। এদের মুখে শুনে প্রথম বুঝলাম বাবা পাগল হয়ে গিয়েচেন | সংসারের কষ্ট, মেয়ের বিম্বের ভাবন, পরের বাড়ির এই যন্ত্রণা--এই সব দিনরাত ভেবে ভেবে