পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৬ "ఏ38S ঘুমুবেন না, কাউকে ঘুমুতে দেবেনও না—সারারাত চীৎকার, বকুনি, ইংরিজি বক্তৃতা, গান– এই সব করবেন। সবাই বলে ঘুমূলে না-কি বাবার রোগ সেরে যেত। শেষ পর্য্যন্ত হয়ত মা মত দিয়েছিলেন, হয়ত বলেছিলেন— তোমরা যা ভাল বোঝ করে! বাপু ! মোটের ওপর এক দিন স্কুলে দাদা এসে বললে—সকাল সকাল বাড়ি চল অঞ্জ জিতু—আজ বাবাকে আড়াগায়ের জলার ধারে ছেড়ে দিয়ে আসতে হবে—তুই আমি নিতাই সিধু আর মেজকাক যাব । একটু পরে আমি ছুটি নিয়ে বেরুলাম। গিয়ে দেখি মা দালানে বসে র্কাদচেন, আমরা যাবার আগেষ্ট নিতাই এসে বাবাকে নিয়ে গিয়েচে । আমরা খানিক দরে গিয়ে ওদের নাগাল পেলাম — পাড়ার চার-পাঁচ জন ছেলে সঙ্গে আছে, মধ্যিখানে বাবা । ওর বাবার সঙ্গে বাজে বকর্চে -- শিকারের গল্প করচে, বাবাও খুব বক্‌চেন । নিতাই আমাকে বাবার সামনে যেতে বারণ করাতে আমি আর দাদা পেছনেই বুইলাম। ওর মাঠের রাস্ত ধরে অনেক দূর গেল, একটা বড় বাগান পার হ’ল, বিকেলের পড়ন্ত রোদে ঘেমে আমরা সবাই নেয়ে উঠলাম। রোদ যখন পড়ে গিয়েচে তখন একটা বড় বিলের ধারে সবাই এসে পৌঁছলাম। নিতাই বললে—এই তে আড়াগায়ের জলা—চল, বিলের ওপারে নিয়ে যাই - ওই হোগল বনের মধ্যে ছেড়ে দিলে আর পথ খুজে পাবে না রাত্তিরে । আমরা কেউ ওপারে গেলুম না গেল স্বধু সিধু আর নিতাই । খানিকট পরে ওরা ফিরে এসে বললে চল পালাই—তোর বাবাকে একটা সিগারেট থেতে দিয়ে এসেচি — বসে বসে টানচে । চল ছুটে পালাই— সবাই মিলে দৌড় দিলাম। দাদা তেমন ছুটতে পারে ন, কেবলই পেছনে পড়তে লাগল সন্ধ্যার ঘোরে জল আর জঙ্গলের মধ্যে পথ খুজে পাওয়া যায় ন!— এক প্রহর রাত হয়ে গেল বাড়ি পৌছুতে । কিন্তু তিন দিনের দিন বাবা ভাবার বাড়ি এসে হাজির ৷ চেহারার দিকে আর তাকানো যায় না-কাদা-মাথা ধুলো-মাথা অতি বিকট চেহারা । বেল না কি ভেঙে খেয়েচেন-সারা মূপে, গালে বেলের আট ও শ স মাখানে । মা নাইয়েধুইয়ে ভাত খেতে দিলেন, বাবা খাওয়া-দাওয়ার পর সেই যে বিছানা নিলেন, দু-দিন চার দিন ক'রে ক্রমে পনের দিন কেটে গেল, বাবা আর বিছান থেকে উঠলেন না । লোকট যে কেন বিছানা ছেড়ে ওঠে না–তাঁর কি হয়েচে—এ-কথা কেউ কোনো দিন জিগ্যেসূও করলে না। মা যেদিন যা জোটে খেতে দেন, মাঝে মাঝে নাইয়ে দেন–পাড়ার কোনো লোকে উকি মেরেও দেখে গেল না । জ্যাঠামশাইরা হতাশ হয়ে গিয়েচেন । তারা আর আমাদের সঙ্গে কথা কন না, তাদের ঘরে-দোরে ওঠা আমাদের বন্ধ । আমরা কথা বলি চুপি চুপি, চলি পা টিপে টিপে চোরের মত, বেড়াই মহা অপরাধীর মত— পাছে ওঁর রাগ করেন, বিরক্ত হন, আবার ঘর থেকে তাড়িয়ে দিতে আসেন । এক দিন না খেয়ে স্কুলে পড়তে গিয়েচি–অন্য দিনের মত টিফিনের সময় সীত। খাবার জন্যে ডাকৃতে এল না। প্রায়ই আমি ন থেয়ে সূলে আসতাম, কারণ অত সকালে ম{ রান্না করতে পারতেন না – রান্ন। শুধু করলেই হ’ল না, তার জোগাড় ম। কোথা থেকে কি জোগাড় করতেন, কি ক’রে সংসার চালাতেন, তিনিহ জানেন । আমি কখনও তা নিয়ে ভাবিনি । আমি ক্ষুধাতুর অবস্থায় বেল একটা পৰ্য্যস্ত ক্লাসের কাজ ক’রে যেতাম আর ঘন ঘন পথের দিকে চাইতাম এবং রোজই একটার টিফিনের সময় সীতা এসে ৬াক দিত— দাদা ভাত হয়েচে, থাবে এস । এ-দিন কিন্তু একট। বেজে গেল, দুটো বেজে গেল, সীত এল না । ক্লাসের কাজে আমার আর মন নেই—আমি জানাল দিয়ে ঘন ঘন বাইরে পথের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখচি । আরও আধ ঘণ্টা কেটে গেল, বেলা আড়াইট । এমন সময় কলুদের দোকানঘরের কাছে সীতাকে আসতে দেখতে পেলাম । আমার ভারি রাগ হ’ল, অভিমানও হ’ল । নিজের সব থেয়েদেয়ে পেট ঠাণ্ড ক’রে এখন আসচেন ! মাষ্টারের কাছে ছুটি নিয়ে তাড়াতাড়ি বাইরে গেলাম। সীতার দিকে চেয়ে দূর থেকে বললাম— বেশ দেখচি—আমার বুঝি আর খিদে-তেষ্ট পায় না ? কটা বেজেচে জানিস ? সীতা বললে—বাড়ি এস ছোড়দা, তোমার বই দপ্তর নিয়ে ছুটি করে এস গে— আমি বললাম—কেন রে ? করাও তো চাই ।