পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ఏSD83) “থাকগে ওসব কথ, চল বৃডন স্বরলিপিগুলো বাজিয়ে দেখা স্বাকৃ গ পিয়ানোর কাছে বসিয়া সৌমেন্দ্র বাঙ্গাইতে লাগিল । এইবার তেজেন্দ্র কথা কহিতেছে, এই তাঁহার যথার্থ ভাষা । ‘বাসষ্ঠীর ছেলেখেলার স্বর আর নাই, জীবনের গভীরতম রহস্যময় অতলে সে আজ নামিক্স গিয়াছে। সৌমেন্দ্রও সমস্ত হৃদয় বাঙ্গনায় যেন ঢালিয়া দিল। সে থামিবার পর শকুন্তলা বলিল, “তিনি কত উচুতে উঠে গেছেন দেখেছ ? এই শেষের কয়টা বছরে তার পুর্ণ পরিণতি হয়েছে । আগে খালি ভালবাসার বেদনার কথাই লিখঙেন, কিন্তু এবার লিখেছেন জীবনের বিফলতার বেদনার কথা, মানুষ প্রাণপণে চেষ্টা করছে কিন্তু বিফল হচ্ছে। একেই কবি কীট্‌স নরক বলেছিলেন। এই নরকে আজ আমি বাস করছি। সঙ্গে ধারা ছিল, তারা দৌড়ে এগিয়ে যাচ্ছে, আমি খালি গুয়ে ওয়ে তাদের পারে শব শুনছি।” শকুন্তলা পাশ ফিরিয়া দুই হাতে নিজের মুখ ঢাকিল। সেমেক্স তাঙ্কার পাশে গিয়া ইটুে গাড়িয়া বলিয়া পড়িল। এত দিনের মধ্যে আজ প্রথম শকুন্তলা নিজের ব্যর্থ জীবনের বেদনাকে ভাষায় প্রকাশ করিল। ঠাট্ট-তামাশা ভিন্ন এ-বিষয়ে সেমেক্স তাহার মুখে কিছুই এতদিন শোনে নাই। তাহার সাহুল সোমেক্সকে মুগ্ধ করিস্থাছিল । সে ভগ্নকণ্ঠে বলিল, “e-রকম কোয়ো না, ও-রকম কোরো না। আমি সন্থ করতে পারছি না।” শকুন্তলা আবার সোমেন্সের দিকে ফিরিল, তাহার মুখে আবার সেই বিরূপের হাসি, সে-হাসি তার অশ্রীর চেয়েও করুণ। সে বলিল, “থাক, এ-সব রাত্রের জন্য থাকৃ, তখন ত আর কেউ আমার সঙ্গী থাকবে না । তুমি আবার বাজাও। এই গানগুলি রচনার কথা প্রথম লাহোরে তার মনে আসে, আমি তখন সেখানে ছিলাম । খাবার টেবিলে বসে কেবল গুল্গুন করে স্বল্প ভাঙ্গতেন, আর ঠকৃঠক করে টেবিল বাজাতেন, তারপর ড কাশ্মীর চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে “ত অমুখে পড়লেন। বাব, কি ভীষণ ভুগেছিলেন, তোমার মনে আছে ? তার স্ত্রী তখন বোম্বাইছে, আমি কলকাতায়। খবর পেয়ে আমিই সবার আগে গিয়ে তার কাছে পৌঁছলাম। উ, সে কি চেহারা ! গিয়ে দেখি একটা পুরানো বাড়ির লাইব্রেরীর মত একটা ঘরে চুপ করে বলে আছেন। আমাকে দেখে অমুখের কোনো কথা না বলে প্রথমেই বললেন যে, একটা গানে স্বন্দর স্বর দিতে পেরেছেন। বাইরে তখন কি ঝড়বৃষ্টি, পুরনো বাড়িটাকে ঠকঠক করে কঁাপিয়ে দিচ্ছিল। সে রাত্রিটাকে এখনও বেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি। ঝড়ের মধ্যে আমরা দু-জন শুধু।” শকুন্তলার মুখে আবার সেই অদ্ভূত রহস্যময় হাসি। সে যেন দুরে ধাড়াইমা নিজেকে শুধু বিশ্লেষণ করিতেছে, নিজেকে দেখিয়া হাদিতেছে। এই হাদির উজ্জল বৰ্ম্মে সে নিজে কঠিনভাবে আবুত । সৌমেন্দ্র নিজের হাতের উপর মাথা রাখিয়া বলিল, “তাঁকে তুমি এতখানিই ভালবেসেছিলে ?” শকুন্তলার চোখদুটি মুদ্রিত হইয়া আসিল। সে বলিল, " সত্যই ভালবাসতাম। তোমাকে বলতে পেরে আমার বুকের বোঝা অনেকখানি হালকা হয়ে গেল।” সোমেন্দ্র ব্যথিতদৃষ্টিতে চাহিয়া রহিল, বলিল, “আমাকে এ-কথা জানাতে ঢাও কি-না, প্রথমে আমি বুঝতে পারিনি।" শকুন্তলা বলিল, “দাদার সঙ্গে প্রথম যখন তুমি এলে, তখনই বুঝেছিলাম তোমাকে আমি বলতে পারব। তুমি এত তার মত দেখতে, এ-বেন তাকে নিজেকেই বলা। এপন নিশ্চিন্ত হলাম, তিনি কোনদিন-না-কোনদিন জানতে পারবেনই, আর আমাকে করুণা করে অপমান করবেন না।" সোমেন্দ্র গাঢ়স্বরে জিজ্ঞাসা করিল, “কোনদিন যদি না জানতেন, তাহলে কি হ’ত ?" শকুন্তল বলিল, “এক রকম ক’রে ত তিনি জানেনই ? নারীর চোখের ভিতর তাকিম্বে প্রেমোজ্জল দৃষ্টি দেখতে তিনি অভ্যস্ত। ঘদি কোথাও তা না দেখেন, তাহ’লে মনে করেন তার নিজের ব্যবহারে কোন ক্রটি হয়েছে, কোন অভদ্রত তিনি করেছেন। নারীর সঙ্গ তাকে চিরকাল আনন্দ দেয়, সেনারী যদি নিৰ্ব্বোধ এবং কুৎসিত না হয়। আমিও অন্যদের সঙ্গে তার হাসি, তার ঠাট্টা, তার রসাল কথাবাৰ্ত্ত সমানে উপভোগ করেছি । সমস্ত দিনগুলোই ধেন এক-একটা উদ্যান-সম্মিলনের মত ছিল, সবাই সেঞ্জেগুঙ্গে আছে, হাসছে আর মিষ্টি কথা বলছে। উীর অসীম সৌজন্যট সহ্য করাই সব চেয়ে শক্ত ছিল।” |