পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰাৱণ লেখকের বিচার 8心 আশ্বাসবাণী শুনে তুমি ভাবলে রাতে একটু ঘুমোবে, শ্রাস্তিতে তুমি তার শয্যাপাঙ্গে ঘুমিয়ে পড়লে, আমি কিন্তু বিনিদ্র নয়নে জেগে রইলুম । শ্রাবণের মধ্যরাতে আকাশের সব তারা নিবিয়ে বৃষ্টি এল, স্বারে দেখলুম কার করাল কৃষ্ণ ছায়, সে যম । স্বার রোধ ক’রে দাড়ালুম, বললুম, নিদ্রিত মায়ের কোল থেকে রুগ্ন পুত্রকে তুমি নিতে পারবে না, আমি মাকে জাগিয়ে দেব | যম বললে,—তুমি বাধা দিও না, স্বষ্টির সত্যকে তুমি লঙ্ঘন করতে চাও ; আমি যম, আমি অমোঘ শাশ্বত নিয়ম, আমি আজ্ঞবহনকারী ভূত্য মাত্র, আমার কাছে প্রার্থনা কর বৃথা ; যিনি জন্মমৃত্যুর অধিপতি র্তার কাছে প্রার্থনা কর, কিন্তু সে প্রোর্থনাও বুথ হবে, স্বাক্টকৰ্ত্ত নিজ নিয়ম-জালে আপনি ব"াধা পড়েছেন । পারলুম না যমকে বাধা দিতে, নিশীথ রাত্রে তোমার ঘর থেকে সে তোমার ছেলেকে নিয়ে গেল, তুমি নিদ্রিত ছিলে, ঝঞ্চমুন্ধ শ্রাবণ নিশীথাকাশের মত আমার চোখে অশ্রীর বস্ত উথলে উঠেছিল । ত৷ যদি না হ’ত তা হ’লে পারতুম কি তোমায় স্বষ্টি করতে, তোমার কথা লিখতে কি পারতুম ? তোমার মনের বেদন। আমার রেখাঙ্কিত ললাটে, আমার শীর্ণ কপোলে ; তোমার আশাহীন কালো চোথের দিকে চেয়ে বিশ্বস্রষ্টাকে আমিও রাতের পর রাত প্রশ্ন করেছি ; উত্তর পেলুম না, কিন্তু শোকাতুর মাতার দিব্য মূৰ্ত্তি দেখলুম ; তুমি ছিলে চঞ্চল বালিক, নিজ স্বথকামিনী, স্থাম্বেষিণী, তুমি বদলে গেলে, নিজ মুখ-সম্পদের দিকে চাইলে না, তুমি হ’লে সেবিক। পৃথিবীর সব মা-হারা সস্তানদের তুমি বুকে টেনে নিলে ; তোমার দুঃখ বেদন যদি না-জানতুন, তোমার কথা কি লিখতে পারতুম এমন ক’রে । পুত্ৰ-মৃত্যুপীড়িত মাত কোন উত্তর দিল না, দীপ্ত নয়ন দুটি অশ্রুতে অন্ধ হয়ে গেছে । বিরহিণী অপরাজিত বললে, অজিতকে ত মৃত্যুতে নিয়ে স্বায়নি, নিয়ে গেল এক ডাইনী, সে মারাবিনীকে তুমিই ত আমাদের জীবনে আনলে, তোমার গল্প হয়ত বেশ জমল, কিন্তু আমার জীবন হ’ল ব্যর্থ, শূন্য। তুমি তোমার উপন্যাসের একটা উপসংহার লেখ—জজিত বুঝতে পেরেছে මුං ইন্দ্রাণী মেকী, তার ক্ষণিক রূপের মোহ ভেঙে গেছে, আ৩– বুঝবে আমার প্রেম কত সত্য, আমি তার জন্য প্রতীক্ষা করছি, সে আমার কাছে ফিরে আয়ক, তোমার উপন্যাসের কি সুন্দর শেষ হবে বল দেথি । বললুম,—আমার সমস্ত দেখছ না, অজিতকে তোমর দু-জনেই ভালবাস, আমি কার সঙ্গে তার মিলন ঘটাই ? অজিত যাকে ভালবাসবে, তার সঙ্গে মিলন হওয়া ভাল নয় কি ? তোমার সঙ্গে যদি অজিতের বিবাহ দিতুম আজ ইন্দ্রাণী এসে আমায় প্রশ্ন করত, আমাদের মিলন কেন হবে না, আমরা পরম্পর পরম্পরকে ভালবাসি ? হয়ত তোমাদের বিবাহ-বন্ধন ছিন্ন হয়ে যেত । —মিথ্যা কথা, ইগ্রাণী কি অজিতকে আমার মত ভালবাসে I ও অজিতের টাকায় ভুলেছে । —মানলুম, কিন্তু জীবনের বিপুল পথে মানব-দেহমনের লোভ মোঃ ক্ষুধ বাসন কামনা জালাকে তুমি কোন নিয়মে নিরক্ষিত করতে পার ? আমি দিতে পারি অজিতকে তোমার হাতে, কিন্তু তুমি রাখতে পারবে কি ? দীর্ঘ বিচিত্র জীবনপথে কত নবীন ইন্দ্রাণী অজিতের হৃদয়-দ্বারে আঘাত করবে, অজিতের হৃদয় উদাস হবে, তার পায়ে শৃঙ্খল দিয়ে রাথতে পার, কিন্তু তার প্রেম পাবে কি ? চাও তুমি তোমার ব্যর্থ প্রেমের কারাগারে তার অশান্ত বুভূক্ষু দেহ-মনকে বন্দী ক’রে রাখতে ? —কেন সে আমায় ভালবাসবে না ? তুমি ত উপস্তাসে লিখতে পার, সে আমায় মন প্রাণ দিয়ে ভালবাসল, তুমি ত তাকে তেমনি ক’রে স্বষ্টি করতে পার। —অজিতকে আমি তোমার প্রেমিকরূপেই স্বষ্টি করতে চেয়েছিলুম, আমি লিখতে চেয়েছিলুম, সত্যিকার প্রেমিক আজীবন অনুরক্ত স্বামীর কথা, অণকতে চেয়েছিলুম আদর্শ গার্হস্থ্য-জীবন । কিন্তু মানুষের মন ত আমার হাতের পুতুল নয়, সে সঙ্গীব, সক্রিয়, অগ্নিগর্ভ, পৰ্ব্বতগুচাবতীর্ণ নদীধারার মত সে যে কোন পথে বাবে পুরানো পাড় ভাঙবে, নুতন তীর গড়বে, তার পথের নিৰ্দ্দেশ কে করতে পারে t সজীব মানুষ যখন আমার উপন্যাসে আসে তাকে ত শৃঙ্খলিত সামাজিক অনুশাসনপীড়িত ক’রে আপন ইচ্ছ। আদর্শ মত চালাতে পারি না,