পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

جوای বাধা শৃঙ্খল ভেঙে সে তার নিজ যাত্রাপথ ক’রে চলে, আমি তার পথচলার কাহিনী লিখি । দোলানো-চেয়ার থেকে দীর্ঘ কৃষ্ণ অক্ষিপঞ্জু কঁাপিয়ে মাধবী আমার দিকে চাইল । বললুম, মুৰ্ত্তিমতী বেদনার মত তুমি মুক বসে আছ, মাধবী, তুমি ত কিছু বলছন , আমার আত্মার সুগভীর বেদন দিয়ে তোমায় সৃষ্টি করেছি, তুমি আমার প্রেমের কাহিনী জান । শোন, তোমর আমার গল্প শোন : আমি যথন কিশোর ছিলুম, এক কিশোরীকে ভালবেসেছিলুম, সে ছিল আমার জীবন-রূপকথার রাজকন্য], তাকে ঘিরে রচতুম যৌবনস্বপ্ন, জীবন-মায়াজাল । কিন্তু সে সুন্দরীর মন ছিল আন্তমনা, সে ভালবাসত আর এক যুবককে, আনমনা হয়ে সে বসে থাকত আমার পাশে । জিদ হ’ল জয় করব ওই কিশোরী-চিত্তকে । আমার প্রেমের সাধনায় সে মুগ্ধ হ’ল, তাকে জয় করলুম ; যৌবনে তাকে জীবনসঙ্গিনীরূপে পেলুম । তারপর বাহির হলুম পৃথিবীর বিপণিতে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার লুটে আনতে হবে প্রিয়ার পদ প্রাস্তে ; সেখানে স্বর্ণের জন্ত হানাহানি, কাড়াকড়ি, স্বার্থের সঙ্গে স্বার্থের সংখত, অর্থ-আহিবণের প্রবল সংগ্রামে মেতে গেলুম। প্রথম যৌবনের প্রেম-বিন্সল দিনগুলি স্বপ্ন হয়ে গেল, প্রিয় যথন গান গায় আমার এস্রাজ বাজাবার সময় হয় না, প্রিয় যখন ছবি অঁাকে, আণার রং গুলে দেবার অবসর কোথায় । বাণিজ্য ক’রে আনলুম স্বর্ণ, ব্যাঙ্কে তহবিল উঠল উপছে । প্রিয়াকে সাজালুম, কর্ণে মুক্তার দুল, কণ্ঠে হীরার মাল, অঙ্গুলিতে নীলার অঙ্গুরীয়, কটিতে স্বর্ণময় কাঞ্চী, পদে মণির নুপুর । গঙ্গাতীরে তৈরি করলুম বিচিত্র প্রাসাদ প্রিয়ার জন্ত । জাৰ্ম্মান দেশ হ’তে এল স্থপতি, ইতালী হ’তে এল বিচিত্র বর্ণের মৰ্ম্মরপ্রস্তর, চৈনিক কারিগর তৈরি করল গবাক্ষ, পারসিক রীতিতে নিৰ্ম্মিত হ’ল স্নানাগার । প্রাসাদের চারিদিকে রমণীয় উদ্যান, পূৰ্ব্বদ্বারে অশোকবীথিক, পঞ্চিমে তলতমালশ্রেণী, . উত্তরে পদ্মদীঘি, দক্ষিণে নীপবন, করবীকুঞ্জ । ఏ38S কিন্তু শ্রিয়ার মন রইল অন্যমন", আনমনা হয়ে সে সুদূরে চেয়ে থাকে, প্রেমভূষিত । সেদিন সন্ধ্যায় পশ্চিমাকাশের বর্ণোৎসবে পৃথিবী রঙীন, হেনা-হ্রাস্নাহানাকুঞ্জের গন্ধোচ্ছ,াসে বাতাস মাতাল, নদীর জল কুলে কূলে ভর। বিপণি থেকে গৃহে ফিরলুম ; চন্দনকাষ্ঠের দ্বার খুলে পারস্য কার্পেটমণ্ডিত অধিরোহনী অতিক্রম ক’রে প্রিয়ার কক্ষের দিকে গেলুম। সে সন্ধ্যায় প্রিয় প’রছিল মাধৰী-রঙের শাড়ী, কণ্ঠে ছিল রজনীগন্ধর মাল ; আমাকে দেখে প্রিয়। স্মিতমুথে, চকিত পদে এগিয়ে এল, শ্বেতপ্রস্তরের গৃহতল দর্পণের মত দীপ্তিময়, পদযুগল ফুটে উঠল রক্তকমলের মত, কিন্তু প্রিয়ার মন ছিল আনমন, কাচের মত মস্বণ মেজেতে পা গেল পিছলে, সে মুচ্ছিত৷ হয়ে পড়ল, শুভ্ৰ মৰ্ম্মরে রক্তপদ্মের পাপড়ি ছড়িয়ে লুটিয়ে পড়ল ; সে মুচ্ছ ভাঙল না, অস্তমনা হয়ে আমার গৃহে চলতে চলতে প্রিয়ার চরণ স্খলিত হ’ল, মৃত্যু এল । পশ্চিমাকাশের বর্ণোৎসব শেয গুয়ে অন্ধকর এল, আমার অগণিত অশ্রীবিদ অনন্ত আকাশ ভ’রে জলে উঠল । সে-রাতে বিধাতাকে জিজ্ঞাস করেছিলুম, তাকে যদি পেলুম, কেন তার ভালবাস পেলুম না, তাকে এমন ক’রে কেন তুমি আমার কাছ থেকে নিয়ে গেলে ? বোবা আকাশ কোন উত্তর দিল না । উন্মাদ হয়ে প্রাসাদ ভেঙে দিলুম, প্রিয়ামৃত্যুবেদন অহৰ্নিশি অস্তরে বহন ক’রে মহা উন্মদনায় দেশ হ’তে দেশস্তিরে ঘুরেছি । জীবনের সেই অপরিসীম বেদন|সমুদ্র মন্থন ক’রে তুমি এলে মাধবী, তুমি এলে তরুণ কবি রেবস্ত ; তোমরা আনলে নবদৃষ্টি, নববাণী মানবজীবনে, ংসারের সুখদুঃখ, পৃথিবীর সৌন্দর্য্য নুতন চোখে গভীর ভাবে দেখলুম। আগে যাদের হৃদয়ের ব্যথা বুঝিনি, যাদের তুচ্ছ অবহেলা করেছি, তাদের বীরত্ব, তাদের মহত্ব দেখলুম, আত্মার নবজন্ম হ’ল । তুমি খুনী, তুমি খুণিত, তুমি পাগল, তুমি ক্লাউন, তোমাদের সঙ্গে অস্তরের পরিচয় হ’ল, তোমাদের সমবার্থী হলুম। তোমাদের কুঃখের কথা লিখেছি, তোমার আত্মার সংগ্রাম বেদনার কাহিনী । প্রিয়াবিরহকাতর আমার অন্তর দিয়ে যা অনুভব করেছি তাই লিখেছি, আমি কথাশিল্পী,