পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ k পাট উঠিয়া গিয়াছে ; এখন কৰ্ত্ত গিল্পী, ছেলে বউ সকলে শ্রামলীর পিছনে হয়রাণ –কোথায় নধর ঘাস জন্মাইয়াছে, কোচড় ভরিয়৷ তুলিয় আনা ; কে কোথায় গাছ কি ডাল কটিয়াছে, পাত সংগ্রহ করা ; ওদিকে গ্রামে সবার বাগানে যে কি হইয়াছে—নেউল তাড়ানে চুনদাগ ছাড়িতে আর কাজ হয় না । নিমাই ত সুধাকে তুষ্ট করিবার এমন সুবর্ণ সুযোগ পাইয়া একেবারে মাতিয়া উঠিয়াছে ; এতদিন স্কুলে যে সময়ট নষ্ট হইত তাহারও বহুলাংশ এখন শু্যামলী-পরিচর্য্যায় সার্থক হইয়া উঠিতেছে। এই সব করিয়া যে সময়টুকু উদ্বত্ত হয় তাহাতে ধে সকলকে গে|-তত্ত্ব শিক্ষা দেয় । বলে—“তোমরা যে মনে কর মশাই, ওর আসল গরু, বুদ্ধিমুদ্ধি নেই—ত নয় । সব বোঝে—দেখচ না কি রকম ক’রে আমাদের কথা শুনচে ?--সত্য যুগে ওর কথাও কইত---” ননী বলে—“ওরা ত ভগবতী !” বাৎল্যের মৃদুহাস্তের সহিত সুধা বলে—“হঁ্যা ভগবতী, তা ব’লে কি লক্ষ্মী-সরস্বতীর মা ভগবতী ?—ত নয় ; ও অন্তরকম ভগবতী ! হ্যা, কি যে বলছিলাম—সত্য যুগে ওর কথাও বলত, তার পর কোন মুনির শাপে বোবা হয়ে যায়। অনেক কান্নাকাটির পর মুনি বলেন—“আচ্ছা যা, তোদের কোন কষ্ট হবে না-তোদের বুদ্ধি একটু মানুষের মাথায় সাদ করিয়ে দিচ্চি—তোদের নিজের জাত যেমন তোদের ইসারা বুঝবে, মানুষেও সেইরকম বুঝতে পারবে । কাছে গেলে শামূলী যখন তোমার হাত চাটে তখন তোমার ত বুঝতে বাকী থাকে না যে ঘাস-পাত তুলে আনতে ব’লচে—সে কেমন ক’রে বোঝ মশাই ? যখন--” ভক্তিমান ননী বলে—“আর গরু ত স্বর্গ, ওদের গায়ে তেত্রিশ কোটি দেবত থাকেন।” জধা বলে—“থাকেনই ত ; মুখে বেহ্মা থাকেন, মাথায় জগন্নাথ থাকেন, দ্যাজে কাৰ্ত্তিক থাকেন-••” সই করুণাপরবশ হইয়া বলে—“আহ, কাত্তিকের বড় কষ্ট ভাই ; সববদ। দ্যাজ ধ’রে ঝুলতে হয়---” স্বধ বাল—“চুপ, বলতে নেই ।” তাহার পর নিমাইয়ের পানে অর্থপূর্ণ দৃষ্টি হানিয়া বলে—“আর অত দেবতা থাকেন বলেই ত গরুর জন্তে চুটুিরি করলে কোন শ্যপমাল-ৰূপী 意* দোষ হয় না, বরং পুণ্যিই হয় । এই দেখ মা, একটা পিপড়ে মারলেও কত পাপ হয় ত ?—কিন্তু মা-কাঙ্গীর সাম্নে পাঠ-বলি দিলে কোন দোষ হয় কি ?” যুক্তিটা অকাট্য ; ইঙ্গিতটাও অস্পষ্ট নয়,—ফলে নিমাইদের গোয়ান্স হইতে কেঁচড় ভরা খোল কুড়ো, কলাই হাজির হইয়া শু্যামলীর উদরে প্রবেশ করে। সইও সাধ্যমত পুণ্যসঞ্চয়ে মনোযোগী হইয় ওঠে । এদিককার খবর সংক্ষেপত এই— জেলায় মিটিং হইয়াছিন্স ; হরবিলাস শৰ্দ্দাকে যথাযোগ্য গালাগালির পর ছেলেদের বিবাহযোগ্য বয়স ষোল এবং মেয়েদের বারো ধাৰ্য্য করিয়া প্রস্তাব গৃহীত হইয়াছে । সরকারদের চণ্ডীমণ্ডপে এর তুমুল আলোচনা হইয়াছিল, তাহাতে হরবিলাস শর্দা এবং জেলার উকিল ও অন্তান্ত উদ্যোক্তাদের যথাযোগ্য গালাগালির পর ছেলেদের নূনতম বয়স চোদ্দ এবং মেয়েদের দশ বলিয়া স্বীকৃত হইয়াছে। ও-পাড়ার তিনকড়ি-খুড়ীর বাড়িতে উৎকট রকমের এক মেয়ে মিটিং বসিয়াছিল, তাহাতে হরবিলাস শা, গবর্ণমেণ্ট বাহাদুর, জেলার উকিল এবং সরকারদের চণ্ডীমণ্ডপে যাহার তামাক পোড়ায় সকলকেই একশাটে ‘ভাগাড়ে দেওয়া হইয়াছে। গ্রামের নানারূপ কেচ্ছাকাহিনী আলোচনার পর সকলের মনের বোঝা হাল্কা হইলে ধাৰ্য্য হইয়াছে যে, ইহাদের পুরাপুরি মতিচ্ছন্ন হইবার পূৰ্ব্বেই বয়স-নিৰ্ব্বিশেষে গ্রামের সমস্ত অনুঢ়া কস্তাকে পাত্রস্থা করিয়া জাতকুল বাচাইতেই হইবে ;–“ত বর কানা হোক, ঘোড়া হোক, মুলো হোক, কুজো হোক, মস্তরটা কোনরকমে আউড়ে দিতে পারলেই হ’ল---” বিধিব্যবস্থার যথেষ্ট অভাব থাকিলেও ফুপুরের এই মহিলা-মজলিসই সাধারণত জাতির ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত করে ; বিশেষ করিয়া মজলিলের কর্ণধার যদি তিনকড়িখুড়ীর মত কেহ থাকেন । পাড়ায় পাড়ায় কন্ত-মহামারী পড়িয় গেল । কয়েক দিন পরের কথা। বিকালে সুধা বাগানের এক