পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীৰাপ দৃষ্টি-প্রদীপ 8:స్సి ক্রমে তিনি সেরে উঠলেন । একদিন আমার ‘চয়নিক’ খানা তিনি চেয়ে পাঠালেন–দিন দুই পরে কালো বই ফিরিয়ে দিয়ে গেল । চার-পাচ দিন পরে “চয়নিক খান। কি জন্তে খুলতে গিয়েচি, তার মধ্যে একখানা চিঠি, ছোটবৌঠাকৃরুণের হাতের লেখা । নাম নেই কারুর । লেখা আছে— আমার অসুখের সময় সবাই এল, আপনি এলেন না কেন ? আমি কত আশা করেছিলাম যে আপনি দেখতে আসবেন, জানেন তা ? আমার মরে যাওয়াই ভাল ছিল । কেন যে আবার সেরে উঠলাম ! অসুখ থেকে উঠে মন ও শরীর ভেঙে গেছে । কালোর মুখে শুনেচি, আপনি আপনার দেবতার ছবি ঘরে টাড়িয়ে রেথেচেন, শুনেচি যীশুখৃষ্ট্রের ছবি, তিনি হিন্দুর দেবতা নন—কিন্তু আপনি র্যাকে ভক্তি করেন—আমি তাকে অবহেলা করতে পারি নে । আমার জষ্ঠে ষ্ঠার কাছে প্রার্থনা করবেন ! আর একটা কথা---একটিবার দেখতে কি আদবেন না । যীশুখুষ্টের ছবির দিকে চাইলাম। সম্প্রতি একখানা বুদ্ধেব ছবি, আর একখান চৈতন্তের ছবিও এনে টাঙিয়ে ছিলাম। রোগশীর্ণ পত্ৰলেখিকার করুণ আকুতি ওঁদের চরণে পৌছে দেবার ভার আমার ওপর পড়েচে । কিন্তু আমি কি পারব ? অন্তকম্পায় মমতায় আমার মন তখন ভরে উঠেচে । যে প্রার্থনা ওঁদের কাছে জানালাম, তা ভাষাহীন, বাক্যহীন। আমি এ-ছাড়া আর কিছু করতে পারি নে। সামনে হঠাৎ যেতে পারব না তার । এ-বাড়িতেও আর বেশীদিন থাকা হবে না আমার । চলে যাব এখান থেকে । টেষ্ট পরীক্ষা দিয়েই আটঘরান্ন পালাবো, ঠিক করলাম। সেখানে যাইনি অনেক দিন। মা চিঠি লিখেছেন, দেখবার জন্যে ব্যস্ত হয়েচেন । আমার সেখানে যেতে ইচ্ছে হয় না শুধু জ্যাঠাইমাদের ব্যবহারের জন্যে। গেলেই মায়ের দুঃখ দেখতে হবে । দাদা এক বাতাসার কারখানাম চাকরি পেয়েচে, মাসে কিছু টাকা অতিকষ্টে পাঠায়। সীতা বড় হয়ে উঠল— তারই বা কি করা যায় ?.-দাদা একাই বা কি করবে ! পিকারিং সাহেব আমার হাতে গীতা দেখে একদিন বললে—তুমি এ সব পড় নাকি ? বাইবেল কি তোমার সকল আধ্যাত্মিক অভাব পুর্ণ করে না ? আমি বললাম—পড়ে দেখতে দোষ আছে সাহেব ? তা গড় আমি ত খৃষ্টান নই, আমি এখনও হিন্দু। —ফু-নৌকোতে পা দেওয়া ধায় না, মাই বয় । তুমি খৃষ্টান ধৰ্ম্মে দীক্ষিত হও-নয়তে তুমি বাইবেল পড় কেন ? — সাহেব, যদি বলি ইংরিজী ভাষা ভাল ক’রে শেখবার জন্যে ? পিকারিং সাহেব হে হে ক’রে হেসে উঠল। বললে— তোমার আত্মার পরিত্রাণ তার চেয়েও বেশী দরকারী । ধীশুতে বিশ্বাস না করলে আত্মার ত্রাণ নেই। তিনি আমাদের সকলের পাপের ভার নিজে নিয়ে ক্রুশের নিষ্ঠুর স্বত্যু বরণ করেছিলেন। যীশুর ধৰ্ম্মে দীক্ষিত হও, তোমার পাপ তার রক্তে ধুয়ে যাবে। এস, আমার সঙ্গে গান কর । তারপর সাহেব নিজেই গান ধরল— Nothing but the Blood of Jesus Oh, Precious is tho flow, That can make mo white as Sriow, No other Fount I know, Nothing but the Blood of Jesus. পিকারিং সাহেবকে আমার খুব ভাল লাগে । খুব সরল, ধৰ্ম্মপ্রাণ লোক । স্ত্রী মারা গিয়েচে আজ দশ-বারে। বছর, আর বিয়ে করেনি,—টেবিলের ওপর নিকেলের ফ্রেমে বঁধানো স্ত্রীর ফটো সৰ্ব্বদা থাকে। মাঝে মাঝে আমাম জিগ্যেস করে—আমার স্ত্রী দেখতে কেমন ছিল, ভাল না ? ফটো দেখে মিসেস পিকারিংকে মুন্দরী মনে হয়নি আমার, তবুও বলি খুব চমৎকার । পিকারিং সাহেবের ধৰ্ম্মমত আমার কাছে কিন্তু অনুদার ঠেকে—কিছুদিন এদের সঙ্গে থেকে আমার মনে হয়েচে জ্যাঠাইমারা যেমন গোড় হিন্দু—খৃষ্টানদের মধ্যেও তেমনি গোড়। খৃষ্টান আছে। এরা নিজের ধৰ্ম্মটি ছাড়া আর কারুর ধৰ্ম্ম ভাল দেখে না । এদেরও সমাজে সংকীর্ণত আছে— এদেরও আচার আছে—বিশেষত: একটি নিদিষ্ট ধরণে ঈশ্বরের উপাসনা না করলে উপাসন ব্যর্থ হ’ল এদের মতে । একখানা কি বইয়ে একবার অনন্ত নরকের গল্প পড়লাম। শেষবিচারের দিন পর্য্যন্ত পাপীরা সেই অনন্ত নরকের অনন্ত আগুনের মধ্যে জলবে পুড়বে, খৃষ্টধৰ্ম্মে দীক্ষিত হবার আগেই যদি কোন শিশু মারা যায়—তাদের আত্মাও যাবে অনন্ত নরকে । এসব কথা প্রথমে যেদিন শুনেছিলাম, আমাকে ভয়ানক ভাবিয়ে তুলেছিল। তারপর মনে হ’ল কেন যীশু কি এতই নিষ্ঠুর ? তিনি পরিত্রাণের দেবতা, তিনি সকল পাপীকেই কেন পরিত্রাণ করবেন না ? যে তাকে জানে, যে তাকে ন-জানে—সবাইকে