পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ সাহিত্য ও সমাজ 8షేt বিজ্ঞানের সাহায্যে বিভিন্ন দেশের মানুষ আজ যতই ক্রমশঃ পরম্পরের নিকটবর্তী হচ্চে, যতই তাদের মেলামেশার ফলে সামাজিক রীতিনীতি অনেকট এক ছাচে ঢালাই হয়ে আসচে, ততই সাহিত্যের আস্তর ও বহিমূৰ্ত্তির একট। শাশ্বত রূপ স্থির করার চেষ্টা বিভিন্ন দেশে চলচে। বিভিন্ন দেশের বাহ রূপ কোন দিন একটা বাধাধরা নিয়মে বিচাৰ্য্য হবে কি না বলা শক্ত, কিন্তু তার আস্তর রূপ সৰ্ব্বদেশে সৰ্ব্বকালে একই ছিল, আছে এবং পৃথিবীর মানুষ যদি আত্মঘাতী হতে প্রস্তুত না হয় তাহলে থাকবে—একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। এই আস্তর রূপ হচ্চে মামুষের বৃহত্তর সত্তার প্রতি প্রত্যেক মানুষের ক্ষুদ্রতর সন্তার কল্যাণবুদ্ধির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত সূক্ষ্ম রসাতুর্ভূতি। তাই বিভিন্ন দেশের সাহিত্যের বহিঃপ্রকাশের ভাষা সাহিত্যিকের রুচি ও রচনাপ্রণালী ভেদে বাহ্যতঃ বিভিন্ন রূপে প্রতিভাত হলেও আস্তরিক তাদের অনৈক্য নেই। তাদের সমাজনিরপেক্ষ নিজস্ব স্বতন্ত্র অস্তিত্ব না থাকলেও তাদের উৎকর্ষ অপকর্ষ বিচারের একটা শাশ্বত মানদও আছে। সাহিত্য একদিক দিয়ে সমাজের প্রতিচ্ছবি হলেও সে তার হুবহু নকল বা ফটোগ্রাফ নয়। অন্যান্য ললিতকলার মত সে প্রকৃতির সঙ্গে শ্ৰষ্ট মানুষের মনকে মিলিয়ে দক্ষ শিল্পীর হাতের আঁকা ছবি, যাহাতে বহির্জগৎ বা এক্ষেত্রে সমাজের প্রতিচ্ছবিটার উপরে সাহিত্যস্রষ্টার শিক্ষা দীক্ষা রুচি প্রবৃত্তি এমন কি তার দেশকালের প্রভাবও খুব সুস্পষ্ট হয়ে ফুটে আছে । একটি প্রাকৃতিক দৃশু দশ জনের চোখে ঠিক একরকম হয়ে প্রতিভাত হয় না। একই বিষয়বস্তু নিয়ে যেমন পাচ জন শিল্পী পাচ রকম বিভিন্ন ছবি অঁাকতে পারেন, তেমনই একটি সামাজিক চিত্রই বিভিন্ন সাহিত্য-শ্রষ্টার হাতে বিভিন্ন রূপ পেয়ে থাকে। এ-সম্বন্ধে বাধাধরা কোন নিয়ম করা যায় না এবং প্রয়োজনও নেই ; কারণ কোন স্বকুমার শিল্পই একঘেয়ে হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। কেবল একটি গোড়ার কথা মনে রাখা দরকার । সাহিত্যিক সমাজবদ্ধ মাতুবের জন্য যে আনন্দলোক স্বজন করবেন, তাহা যেন যুগপৎ তাদের পক্ষে কল্যাণলোক এবং সত্যলোক হয়। কবির নিরঙ্কুশ হবার অধিকার যুগে যুগে দাবি করেছেন এবং পেয়েছেন, কিন্তু কেবল তাদেরই দাবি সমাজ মেনেছে, ধার কাব্য স্থষ্টি করতে গিয়ে সমাজের কল্যাণকে বিসর্জন দেননি, যারা সমাজকে মেনে নিয়ে স্থপথে পরিচালনা করেচেন। সংযমের দ্বারাই স্বাধীনতার অধিকার লাভ করা যায়। সমস্ত তর্ক বিচারের উপরে আমাদেরও একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, মানুষ তার স্বই সাহিত্যের চেয়ে বড় । যে কল্পনার বিলাস মানুষকে তার প্রতিদিনের হীনতার দীনতার ক্লেদকর্দম থেকে, তার স্বার্থসংঘাতের নিৰ্ম্মম রণক্ষেত্র থেকে উৰ্দ্ধে তুলে নিয়ে বিমলত দান করে, শাস্তস্কিন্ধ সরস করে, তার মূল্য খুব বেশী ; কিন্তু তা বলে সে-আনন্দ যদি মাতালের মত্ততাপ্রস্থত সুখমাত্র - হয়, সাহিত্য যদি সমাজের মাথায় বসে তারই মূলচ্ছেদের জন্য কুঠারাঘাত করতে চেষ্টা করে—মানুষকে তার স্থপরিচালনায় বড় না করে, তার স্বাভাবিক পশুত্বকে জাগিয়ে তুলে নৈতিক অধঃপাতের পথে তাকে ঠেলে দেয়, তবে তাকে বাধা দেওয়ার এবং নিয়ন্ত্রিত করার অধিকার সমাজের থাকা উচিত। নিরঙ্কুশ কবি বনের পার্থীর মত মনুষ্যসমাজের বহির্ভাগে বাস করলে বোধ হয় কিছু বলবার থাকে না ; কিন্তু তাঁর রচনার প্রভাব যদি কুপ্রভাব হয় তবে নির্জনবাস থেকে জনপদে এসে দেশকলের ব্যবধান ছাড়িয়ে সে যে সমাজের ক্ষতি করবে না এমন কথা জোর ক’রে বলা শক্ত । এর পর প্রশ্ন আছে, সাহিত্যের স্বারা সমাজের কল্যাণ অকল্যাণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা সাহিত্যের প্রতি অবিচার কি না ? সাহিত্যিক যদি তীর রচনার সৌন্দয্যের হানি না করে সমাজের অকল্যাণ-বুদ্ধিকে রোধ করার এবং কল্যাণবুদ্ধিকে উজ্জীবিত করার প্রয়াস করেন এবং সেই কার্যে সফল হন, তবে তার রচনা সৰ্ব্বাঙ্গমুনার এবং সার্থক হয় । সাহিত্য যেরসলোক স্বজন করবে তাতে সকল রসেরই স্থান আছে ; কিন্তু যথোপযুক্ত স্থানে প্রত্যেক রসকে স্থান দিতে হবে। রসস্থষ্টির উৎসবকে সাহিত্যিকের মন যেন বীভৎস রসকে শাস্ত বা করুণ রসের উৰ্দ্ধে স্থান না দেয়, আদি রসের আদিম বৰ্ব্বপ্নত যেন তাঁর মাধুৰ্য্যকে অতিক্রম করে অশোভন না হয়ে ওঠে। আমরা যখন বাসগৃহের পরিকল্পনা করি তখন মঙ্গল-ফেলার জায়গাগুলিকে যতটা সম্ভব লোকলোচনের অন্তরালে রাখবার ও ফুলবাগানটিকে যতট। সম্ভব লোকচক্ষের সাম্নে ধরবার ব্যবস্থা করি। তার কারণ এই যে, জীবনের যে-সব প্রয়োজনের ক্ষেত্রে