পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ '-কেন হোবে না ? বি-এ পাস হেনেছে-চৌদ্ধ বরষ ; পড়ত মাহিনী বিশো রূপেক্ষা করকে -সাড়ে তিন হজ্জার ! ভদ্রলোক আবার হাসিলেন । রতিরাম দমিল না। বলিল – আপ কেখন কামাত এক মাহিনামে ? ভদ্রলোক বলিলেন, তিনি এখন প্রায় বেকার । অর্থোপার্জন এখন পৰ্য্যন্তও বিশেষ কিছু ঘটিয় উঠে নাই । রতিরাম আবার গোফে আরামসূচক তা দিয়া লইল । বলিল, আমার আলেম তো দেড় রূপেয়াকা-চার মাহিনী পাঠশালমে গয়া—ব্যস্ খতম। মাড়োয়ারীকা লেড়কী— মাহিনামে শো রূপেয় তো কামাতেই হোবে । এ-দৃশুের যবনিক পড়িল । পরের ষ্টেশনে ভদ্রলোক কেতাব-হস্তে নামিয়া গেলেন । রতিরাম তাহার গমনপথের দিকে চাহিম একটা আত্মম্ভরিতার নিঃশ্বাস ফেলিল ৷ ভারি ত বাৰু, কেতাবে কি লেখা থাকিবে ? দিল আচ্ছা লাগে ? খাইতে জোটে না দিল আচ্ছা করিয়া কি হইবে ? স্বপ্ন দেখিলে চলে না—স্বপ্ন দুৰ্ব্বলতা মাত্র । তাহার মোহে পড়িলে রতিরামকে এতদিন পথে বসিতে হইত। সে সাধনায় বসিয়াছে——ষিক্স ত আছেই । তাহাতে ভুলিলে আর সিদ্ধিলাভ ঘটিবে না। যাউক না দেশ উৎসন্ন,— অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, মহামারী, জলপ্লাবন, ভূমিকম্প—সকলে মিলিয়া চারিদিক হইতে জগতকে গ্রাস করুক না—কি আসে যায় ? শুধু পাটের বাজারে হর্জা না পৌছিলেই হয়। তথাপি মাঝে মাঝে মনটা যেন তন্দ্রাচ্ছল্প হইয় পড়ে। দূরান্তের স্বপ্নের মত চোখের সম্মুখে দুইটি ক্ষুদ্র নিটোল শিশুহস্ত আসিয়া দেখা দেয়, কি গভীর সে আহবান—কি শক্তিমান তাহার আকর্ষণ, রতিরামকেও কখনও কখনও অন্তমনস্ক করিম তোলে ! কথারীতি বিলম্ব করিয়া রাত্রি সাড়ে নয়টার সময় গাড়ী বুলাকিনগর পৌছিল । শীতাচ্ছন্ন রাত্রি সংসা ষ্টেশনের ইাকাইকি ডাকাডাকিতে যেন প্রাণবান হইম উঠিল। রভিরাম তাহার বিছানার পুটুলি-হস্তে নামিয়া আলিল । বদরগঞ্জ যাইবার জন্তু গরুর গাড়ী এখানে সৰ্ব্বদাই মিলে সত্য, কিন্তু এত রাত্রি পর্য্যস্ত আর কোনো গাড়োমান বসিয়া সাধনণ なS"s নাই। রতিরাম জানিত, পাশেই সব গাড়োমানদের বাড়ি— সে হাকাহাকি আরম্ভ করিল । গাড়ীর জোগাড় হইয়াছে । চেনা গাড়োয়ান ভেকারামের গাড়ী, কিন্তু ভেকারামের জর আসিয়াছে—যাইবে তাহার বোল বৎসরের পুত্র বিবণ | রতিরাম প্রস্তুত হুইল । নিগুতি রাত্রি । চারিদিকে নিস্তব্ধতা—সেই আখও নিস্তব্ধতা ভঙ্গ করিয়া একটা অব্যক্ত শব্দ করিতে করিতে গাড়ী চলিয়াছে। দুই পাশে কৃষকদের ক্ষুদ্র ক্ষুত্র কুটার । চন্দ্র ঢলিয়া পড়িয়াছে । বাশের ঝাড়ের ফাক দিয়া চক্সের সেই তন্দ্রাচ্ছন্ন মূৰ্ত্তি দেখা যাইতেছে। কোথাও ঘরের পাশ্বে দুইএকটি কুকুর এদিক হইতে ওদিকে যাতামাত করিতেছে । পথের পাঁশ্বে ঝোপ, তাহার ওধারে শস্তক্ষেত্র ; কি শস্ত বুঝা যায় না । রতিরামের কেমন ভয়-ভয় করিতে লাগিল। সঙ্গে কিছু টাকা আছে ; মাইলথানেক ত বস্তির মধ্য দিয়া চলিতে পারা যাইষে, তারপরই ত মাঠ- প্রায় দেড় মাইল বাপী । তারপর মেচি নদী, তারও ওপারে বদরগঞ্জ । রতিরাম ভাবিল, জাগিয়া থাকিতে হইবে। গাড়ী চলিয়াছে। বিষণ মাঝে মাঝে গরুর ল্যাজ নাড়িম্ব দিয়া তাহার সহিত যে পশুটির অত্যস্ত নিকট-সম্বন্ধ আছে তাহ! ভাষায় প্রকাশ করিয়া জানাইতেছে । আর মাঝে মাঝে দুই-একটা গানের পদ অস্পষ্ট ভাষায় আবৃত্তি করিতেছে । o রভিরাম কথা কহিল। বলিল, কি রে বিষণা তোর সাদি হইয়াছে ? বিবণ বলিল—না, মহাজন। সকল মাড়োম্বারীকেই তাহার। মহাজন বলিয়৷ কথা বলে । —তব রূপেয়াছে কেম্বা কোরবি ? বিষণ বলিল— সে টাকা পাইলে বাপকে একটা কম্বল কিনিম্ন দিবে ; বেচার শীতে বড় কাপে । জার বাকি কিছু থাকিলে তাহার ছোট ভাই ‘মনিয়া’র জন্তু একটা ছোট আরশি ৱিনিয়া দিবে—যেমনট সেবার লে বদরগঞ্জের মেলায় দেখিয়া জাসিয়াছে ৷ রতিরামের মনে পড়িল, তাহার ছোটছেলেটি একবার একখানা ছোট আরশি কিনিবার জন্ত জেদ ধরিয়াছিল । সে