পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ সাধন। جمه به সৰ্ব্বনাশ উপস্থিত। বলদদ্বয়ের পা ক্রমশঃ বালুতে ডুবিয়া । যাইতেছে—গাড়ীর চাকা ক্রমশঃ বসিয়া যাইতেছে। জল সেখানে বেশী নয়, মাত্র ইটুের উপরে কিন্তু যেরূপ দ্রুত গতিতে গাড়ী ও বলদ বসিয়া যাইতেছে তাহাতে কিছুক্ষণ এরূপ ভাবে থাকিলে যে উভয়েরই একেবারে বালুক-সমাধি হইয়! যাইবে তাহাতে আর কোনো সন্দেহ নাই। চাহিয়৷ দেখিল, সে ‘লিকৃ’ ভুলিয়৷ ভূলপথে জলের বুকে নামিয়াছে। বিষণ প্রমাদ গণিল । সে চেচাইয়া উঠিল,—মহাজন, ও মহাজন । রতিরাম স্বপ্ন দেখিতেছিল । সহসা বিষণের চীংকারে ধড়ফড় করিমু উঠিয়া বসিয়াই তাহার সমস্ত কথাটা মনে পড়িয়া গেল । মনে পড়িয়া গেল, সে রাত্রিকালে একক রওনা হইয়াছে আর সঙ্গে অাছে দুই শত টাকা বিছানার বাণ্ডিলে বাধা। সঙ্গে সঙ্গে বাণ্ডিলে তাহার হাত পড়িল তাহার মনে কোনো সন্দেহই হইল না যে সত্য সত্যই সে এবার ডাকাতের হাতে পড়িয়াছে । তড়াক্ করিয়া উঠিয়া বিছানার বাণ্ডিল বগলে লইয়। সে জলে নামিয়া দৌড়াইতে চেষ্টা করিল। কিন্তু নামিবার পর আর এক পদও অগ্রসর হইতে পারিল না। রতিরাম ভয়ে চীৎকার করিয়া উঠিল। একে শীতের নিদারুণ বাতাস, তাহার উপর এহেন অবস্থা ; রতিরাম কঁাপিতেছিল । বিষণ প্রাম কাছে আলিম বলিল—এ কি মহাজন তুমিও কি ধ্বসনায় পড়িয়া গেলে নাকি ? রতিরাম আকুল হইয়াছিল বটে, কিন্তু বুদ্ধি একেবারে হারায় নাই। ধ্বস্নায় পড়ার অর্থ সে জনিত, এখনও তাহার যথেষ্ট বোধগম্য হইল। এই সৰ্ব্ব গ্রাসী পাহাড়ী নদীর বালুকা-সমাধির কথা তাহার অবিদিত ছিল ন-কুধিত বালুক, চিরন্তন জলস্রোতে তাহার তৃষ্ণ মিটে ন—রক্তের তুষা তাহার অপরিসীম, অনন্ত । রতিরাম কঁাদিয়া ফেলিল । বলিল—বাব বিষণ, সব ধুই দে দেয়গা—রক্ষ{ করে বাবা | বিষণ অদ্ধিসদ্ধি জানিত। বলিল—দাড়াও মহাজন, দেখি কি করা যায়। রতিরামের পায়ের চারিদিকে ক্রমশঃ বালু জমিমা উঠতেছে ; জগন্নাহ শৈত্যে পায়ের চেতনা একেবারে লুপ্ত হইতে চলিয়াছে। রতিরাম ডুবরিয়া কাদি বলিল,—বিবশ দো হজার রূপেরা দেগা । অসহ শৈত্য তাহার আলঙ্ক বিপদকেও ছাপাইয়া উঠিতেছিল। বিষণ সাহায্য করিল। ব্যাপার বিশেষ কিছু নয় ; দুইচারি মিনিট ধস্তাধস্তির পর রতিরাম বালুকাগর্ত হইতে মুক্তিলাভ করিল। বিষণ বলিল—মহাজন, বলদ ধরিয়া টানিয়া তুলিতে হইবে, নহিলে উহাদের মরণ অনিবাৰ্য্য । রতিরাম বলিল—সে কি ক’রে হোবে, দু আদমীতে কি হোবে ? আওর আদমী দেখি। বলিয়। সে আস্তে আস্তে এপারের দিকে অগ্রসর হইল । বিষণ আবার চাকা ধরিয়া রথকে টানিয়া তুলিবার চেষ্টা করিতে লাগিল । বলদযুগলের গাত্রে আঘাতের পর আঘাত পড়িতে লাগিল—সহস্র প্রকার ভাষায় সে পশুযুগলকে উৎসাহিত করিতে চেষ্টা করিতে লাগিল, কিন্তু সমস্তই বৃথা । আৰ্ত্ত পশুযুগল একবার করুণ নেত্রে বিষণের দিকে চাহিয়৷ পরক্ষণেই ওপারের দিকে চাহিতেছিল। শক্তিহীন, শীতাৰ্ত্ত পশু, ভাষাহীন মুখে আপনার অনিশ্চিত ভবিষ্যতকে দেখিয়া যেন ক্রমশঃ ভীত হইয়া পড়িতেছিল । এই সংজ্ঞাহীন রজনীর অখণ্ড নিস্তব্ধতা, এই অনন্ত বিস্তৃত মাঠের অস্পষ্ট চন্দ্রালোকের অবিচ্ছিন্ন রূপ কুয়াশার আবরণ পড়িয়া ক্ষণে ক্ষণে বিষণকে বিহবল করিয়া তুলিতেছিল । বিষণ জোর করিয়া ভাবিতেছিল, রতিরাম এই আসিল বলিয়া। ভয় কি ? বিষণ স্তব্ধ হইয়া গিয়াছিল। পশুযুগলের ভীত, চকিত দৃষ্টি, নিম্নে বরফ-শীতল জলের স্পর্শ, পারিপাশ্বিক প্রকৃতি তাহাকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিল । ক্রমে তাহার প। অবশ হইম আসিতে লাগিল ; বালুকাগর্ভ হইতে পা তুলিতে রীতিমত কষ্ট বোধ হইতে লাগিল—সে গাড়ীর উপর বসিল । বসিয়া বলদযুগলের গায়ে তাহার স্নেহহস্ত বুলাইরা দিতে লাগিল । ভাষাহীন পণ্ড তাহদের আসল্প বিপদের কথা বুঝিতে পারিয়াছে ; আৰ্ত্তদৃষ্টিতে নিয়ত মালিকের দিকে চাহিয়া সাহায্য প্রার্থনা করিতেছে—বিষণ কাদিয়া ফেলিল । ক্রমশ: গাড়ী আরও নীচে ধ্বসিয়া গেল ; বলদদ্বয়ের পৃষ্ঠদেশ পৰ্য্যস্ত আসিয় প্রায় জল ছুইল, শীতাৰ্ত্ত পশুর কম্পন লাগিয়া