পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পূজারিণী ঐস্বৰ্ণলতা চৌধুরী বহু বংসর পূৰ্ব্বে, একটি তরুণ জাপানী চিত্রকর পদব্রজে কিয়োটে হইতে ইয়োডে যাইতেছিল। পথটি অতি বন্ধুর, সমস্তটাই পৰ্ব্বতের উপর দিয়া ধাইতে হয়। তখনকার দিনে পথঘাট অধিকাংশই এত বিপৎসস্কুল ছিল যে জাপানে একটা প্রবাদের উদ্ভব হুইয়াছিল (ਬਿਰ ছেলেকে শিক্ষা দিতে হইলে তাহাকে ভ্রমণে পাঠাও W কিন্তু পথ যেমনই হউক, দেশটার চেহারা এখনকার মতই ছিল। এখনকার মতই বড় বড় সিডার ও ঝাউগাছের বন ও বাঁশের ঝাড় ছিল, খড়ের ছাউনি দেওয়া ছোট ছোট বাড়ি ছিল, ধানের ক্ষেডে এখনকার মতই খড়ের টুপী পরিয়া কৃষকেরা কাদাম দাড়াইয়া কাজ করিত। পথের ধারে বনের মধ্যে, এখনকার মতই বড় বড় বুদ্ধমূৰ্ত্তির প্রশান্ত হাসি দেখা যাইত এবং নদীর ঘাটে, উলঙ্গ গ্রাম্য শিশু একইভাবে নৃত্য করিত। এই চিত্রকরটি কিন্তু আদুরে ছেলে ছিল না, সে ইহারই ভিতর বহু দেশ ভ্রমণ করিয়াছে এবং পথ চলার সব রকম কষ্ট সহ করিতেই সে ভাল ভাবে অভ্যস্ত। কিন্তু এইবার ভ্রমণে বাহির হইয়া, এক দিন সন্ধ্যার সময় সে এমন এক স্থানে আসিয়া উপস্থিত হইল, যেখানে রাত্রে আশ্রম বা আহার সংগ্ৰহ করিবার কোনে সম্ভাবনা দেখা গেল ন । স্থানটি একেবারে বনভূমি, ময়ূন্যের বাসের চিহ্নমাত্র নাই। যুবক বুঝিতে পারিল, পথ সংক্ষেপ করিবার চেষ্টা করিতে গিয়া সে পথ হারাইয়া ফেলিয়াছে। সে-দিন আবার কৃষ্ণপক্ষের রাত্রি, চারিদিকের ঝাউবনের ঘন ছায়া অন্ধকারকে গভীরতর করিয়া তুলিয়াছে। ঝাউবনের ভিতর বাতাসের মর্শ্বরধ্বনি ছাড়া আর কোনো শৰ শোনা যায় না। চিত্রকর শ্রান্তদেহে চলিতে লাগিল, যদি কোনো নদী দেখিতে পায় এই আশায়। তাহার তীর ধরিয়া, চলিলে কোন-না-কোন গ্রামে সে পৌঁছিতে পরিবে । পথে একটা নদী সে দেখিল বটে, কিন্তু উহাও কিছুদূর গিয়া একটা জলপ্রপাতে পুঞ্জি হইয়া খাদের ভিতর নামিয়া যাইতেছে দেখা গেল বুধক বাধ্য হইয়া আবার কিরিল। চারিদিক ভাল করিম দেখিবার জন্ত একটা চূড়াম আরোহণ করিল, যদি সেখান হইতে মন্ত্রন্থের বাসের কোনো চিহ্ন দেখা যায়। কিন্তু চতুর্দিকে উদ্ভুদ্ধ পৰ্ব্বতশ্রেণী ভিন্ন আর কিছুই দেখিতে পাইল না। রাত্রিটা তাহাকে উন্মুক্ত আকাশের তলায়ই কাটাইতে হইবে বলিয়া সে যখন স্থির করিয়াছে, তখন হঠাৎ পাহাড়ের একপাশে, নীচের দিকে তাকাইয়া দেখিল, ক্ষীণ একটি আলোর রেখা দেখা যাইতেছে । বোধ হয় কোনো মমুখ্যের বাসভূমি হইতেই ঐ আলো আদিতেছে, ভাবিয়া যুবক তাড়াতাড়ি সেই দিকটায় নামিতে আরম্ভ করিল এবং কিছুদূর যাইবার পরই ছোট একটি কুটীরের সম্মুখে গিয়া দাড়াইল । কুটীরের দ্বার রুদ্ধ, কিন্তু কপাটের একটি ফাটলের ভিতর দিয়া ঐ আলোকরশ্মি বাহিরে বিকীর্ণ হইতেছিল। যুবক ধীরে ধীরে দরজায় আঘাত করিল। প্রথমবার আঘাত্তের ফলে কোনই উত্তর পাওয়া গেল না। যুবক বধ্য হইয়া বার বার ডাকিতে লাগিল এবং দরজায় আঘাত করিতে লাগিল। অবশেষে ভিতর হইতে নারীকণ্ঠে কে একজন প্রশ্ন করিল যে আগন্তুক কি চায়। কণ্ঠস্বরটি অতি মধুর এবং যুবক আশ্চর্য হইল এই শুনিয়া ষে, নারীটি রাজধানীর শুদ্ধভাবায় কথা বলিতেছে। উত্তরে সে বলিল সে একজন ছাত্র, ইয়োড়ে যাইতে পথ হাঁরাইয়া ফেলিয়াছে। সে রাত্রে কিছু খাদ্য ও নিত্র। যাইবার একটু স্থান প্রার্থন করিতেছে। আর এখানে তাহী লাভ করা যদি একেবারেই অসম্ভব হয়, তাহা হইলে নিকটবর্তী কোনো গ্রামের পথ যেন তাহাকে বলিয়া দেওয়া হয়। তাহার সঙ্গে টাকা আছে, সে পথপ্রদর্শককে বেতনও দিতে পারিবে। ভিত্তর হইতে নারীটি তাহাকে আরও কতকগুলি প্রশ্ন করিল ; এমন স্থানেও যে কোনো পধিক জালিয়া