পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ পুজারিণী

  • ... *

Grーふ বলিল যে তরুণীর এতখানি স্বাৰ্থত্যাগ করিবার কোনোই প্রয়োজন নাই, তাহাকে মাটিতে বিছানা করিয়া দিলে সে স্বচ্ছন্দে ঘুমাইতে পরিবে, এবং দুই-চারিটা মশায় কামড়াইলে তাহার কিছুই আসিয়া যাইবে না। কিন্তু তরুণী বড় বোনের মত জেদ করিতে লাগিল, যুবককে তাহার কথা শুনিতেই হইবে। তাহার বাস্তবিকই রাত্রে কাজ আছে এবং যথাসম্ভব শীঘ্র সে সেটি করিবার জন্য ছুটি চায়। যুবককে অগত্য হাল ছাড়িয়া দিতে হইল । ঘর মাত্র একখানি । তরুণী বিছানা করিয়া, কাগজের মশারীটি টাঙাইয়া দিল এবং একটি কাঠের বালিশ আনিয়া দিল । তাহার পর পাতল কাঠের একটি লম্ব দাড়-করান পর্দা আনিযু সে বেদীর সম্মুখে রাখিয়া বেদীটি আড়াল করিয়া দিল । যুবক বুঝিল যে, তরুণী এখন একাকী থাকিতে চায়। অগত্য অনিচ্ছ সত্ত্বেও তাহাকে শয়ন করিতে যাইতে হইল । তরুণীকে এতখানি কষ্ট দিতে যে সে বাধা হইল, ইহাতে তাহার মনট ভারী হুইয়া রহিল । কিন্তু মন ডারী থােক। সত্ত্বেও খানিক পরে সে ঘুমাইম পড়িল, বিছানাটি এমনই আরামদামুক ছিল। কিন্তু কয়েক ঘণ্ট। পরে সে হঠাৎ চমকাইয়া জাগিয়া উঠিল । ভারি একটা অদ্ভুত শব হইতেছে । উহা মানুষের পায়েরই শব্দ, কিন্তু পয়ে হঁটিলে যে-রকম শব্দ হয়, সে-র কম নয় । উত্তেজিত হইয়া উঠিয়া, অত্যন্ত দ্রুততালে কেহ যদি পা ফেলে তাহা হইলে যে-প্রকার শব্দ হয়, ইহাও সেইরূপ । যুবকের ভয় হইল, হয়ত বা ঘরে চোর প্রবেশ করিয়াছে । ভট্ট। নিজের জন্য নয়, কারণ তাহার কাছে এমন কিছুই ছিল না বাহা চোরে চুরি করিতে পারে। কিন্তু দয়াবতী তরুণীর জষ্ঠ তাঙ্গার ভয় করিতে শাগিল । কাগজের মশারীটার ইষ্ট ধারে দুটুকরা নেটু জানালার মত করিয়া বসান, যুবক তাহার ভিতর দিয়া দেখিতে চেষ্টা করিল কিন্তু কাঠের পদটি মাঝে পড়াতে ওপাশে যে কি হইতেছে তাহা সে একেবারেই দেখিতে পাইল না। একবার ভাবিল যে, চীৎকার করিয়া উঠিবে, কিন্তু পরে ভবিম্বা দেখিল ব্যাপারটা আসলে কি তাহ না জানিয়া, নিজের উপস্থিতিটা জানাইয়া কোনো গতি হইবে না। শব্দটা একই ভাবে চলিতেছে ক্রমেই যেন বেশী করিয়া রহস্তময় হইয় উঠতেছে। যুবক স্থির করিল やがlー>> তরুণীকে রক্ষা করিবার চেষ্টা সে করিবেই, তাহাতে প্রাণ যায়, সেও স্বীকার । কাপড়চোপড় আঁটিয়া বধিয়া সে ধীরে ধীরে কাগজের মশারীট। তুলিয়া বাহির হইয়া পড়িল । কাঠের পর্দার পাশে গিয়া সে উকি মারিয়া দেখিতে লাগিল। যে-দুখ তাহার চোখে পড়িল, তাহাতে তাহার বিস্ময়ের সীমা রহিল না। সেই বেদীর সামনে উজ্জ্বল মহাৰ্থ বস্ত্রে সজ্জিত হইয়া তরুণী একাকী নৃত্য করিতেছে। তাহার পোষাকটি মন্দিরের নৰ্বকীর পোষাক, যদিও এভ মূল্যবান পরিচ্ছদ পরিতে যুবক কোনো নর্তকীকে দেখে নাই। এই সুন্দর সাজে সজ্জিত হইয় তাহাকে অলৌকিক সৌন্দৰ্য্যশালিনী বলিয়া বোধ হইতেছিল, কিন্তু যুবককে তাহার নৃত্য যেন তাহার রূপ অপেক্ষাও অধিক অভিভূত করিয়া ফেলিল। প্রথম কয়েক মুহূৰ্ত্ত তাহার মনে একটা ভয়ের ভাব জাগিয়া উঠিল। কে এই যুবতী ? ডাকিনী বা কুহকিনী নম্ন ত ? কিন্তু দয়াদেবীর চিত্র, আর যে বৌদ্ধপূজাবেদীর সম্মুখে তরুণী নৃত্য করিতেছিল, এই দুইটি জিনিষ যুবকের সন্দেহ দূর করিয়া দিল, এমন কি এরূপ সন্দেহ করার জন্যই তাহার রীতিমত লজ্জা বোধ হইতে লাগিল । তরুণীর এই নৃত্য কেহ দেখে তাহা যে তাহার অভিপ্রেত ছিল না, তাহাও যুবক বুঝিতে পারিল। সে তরুণীর গৃহে অতিথি, তাহার উচিত এখনই মশারীর ভিতরে ফিরিয়া যাওয়া, কিন্তু সে যেন মন্ত্রমুগ্ধ হইয়া গিয়াছিল। যুবক বিস্ময়ের সহিত অনুভব করিতে লাগিল যে, এরূপ অপূৰ্ব্ব নৃত্য ইতিপূৰ্ব্বে সে কখনও দেখে নাই। যতই দেখিতে লাগিল, তরুণীর মৃত্যলীলা তাহাকে ততই মোহিত করিয়া ফেলিতে লাগিল। হঠাৎ তরুণী থামিয়া গেল এবং নৰ্ত্তকীর পরিচ্ছদ উন্মোচন করিবার জন্য ফিরিতেই যুবককে দেখিতে পাইয়া অত্যন্ত চমকাইয়া উঠিল । যুবক নিজের ক্রটির জন্য ক্ষমাভিক্ষা করিতে লাগিল । সে বলিল, পায়ের শব্দে তাহার ঘুম ভাঙিম যাওয়ায় সে ভয় পাইয়া উঠিয় পড়িয়াছে । ভয় নিজের জন্ত নম্ব, এই নির্জন বনবাসিনী তরুণীর জন্তই । য’হ লে দেখিম্বাছে তাহ যে কি বিস্ময়কর তাহা ৭ সে বলিতে ভুলিল না। সে বলিল, “আপনি আমার কৌতুহল মার্জন করিবেন, কিন্তু আমি জানিতে চাই যে আপনি কে এবং কিরূপে আপনি