পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৫৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রাবণ ఫి বহু বৎসর কাটিয়া গিয়াছে। কত নিয়ম-কানুনের পরিবর্তন হইয়াছে, চিত্রকরও এখন বৃদ্ধ হইয়া পড়িয়াছেন। কিন্তু শুধু বুদ্ধই হন নাই, অতিশয় খ্যাতিপ্রতিপত্তিও লাভ করিয়াছেন। র্তাহার আশ্চৰ্য্য অঙ্কনকুশলতায় মোহিত হইয় বহু রাজপুরুষ র্তাহাকে যাচিয়া অর্থ-সম্পত্তি দান করিয়াছেন। চিত্রকর এখন ধনী ব্যক্তি, রাজধানীর একটি অতি সুন্দর অট্টালিকায় তিনি বাস করেন । জাপানের নানা অংশ হইতে দলে দলে তরুণ চিত্রকর আসিয় তাহার কাছে শিক্ষালাভ করিতেছে । তাহারা তাহীর সঙ্গেই বাস করে, সৰ্ব্ব বিষয়ে তাহার পরিচর্য্যা করে । চিত্রকরের নাম দেশের সর্বত্র ছড়াইম্বা পড়িমুছে । একদিন একটি বৃদ্ধ নারী তাহার গৃহের সম্মুখে আসিম তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিতে চাহিল। ভূত্যেরা তাহার হীন বেশভূষা এবং দীন ভাব দেখিয় তাহাকে সাধারণ ভিক্ষুক বলিয়া স্থির করিল এবং অতি কৰ্কশভাবে তাহাকে আসিবার কারণ জিজ্ঞাসা করিল। স্ত্রীলোকটি বলিল, “আমি কেন আসিয়াছি, তাহা কেবলমাত্র তোমাদের প্রভূর নিকটে বলিতে পারি।" তৃত্যগণ ভাবিল স্ত্রীলোকটি পাগল, সুতরাং চিত্রকর এখানে নাই, কবে ফিরিবেন জানি না, বলিয় তাহাকে বিদায় করিয়া দিল । কিন্তু স্ত্রীলোকটি রোজই আসিতে লাগিল, সপ্তাহের পর সপ্তাহ কাটিয়া চলিল, তবু তাহার আসার বিরাম নাই। ভূত্যের প্রতিবারেই তাঁহাকে এক একটা মিথ্য। কথা বলিয়া বিদায় দেয়, “আজ চিত্রকর অনুস্থ,” বা “আজ তিনি বন্ধুবান্ধবকে নিমন্ত্ৰণ করিয়াছেন।” তৰু স্ত্রীলোকটি রোজই আসে, ছেঁড় কাপড়ে জড়ান একটি পুটলি সৰ্ব্বদা তাহার সঙ্গে থাকে । চিত্রকরের পরিচারকগণ অবশেষে ক্লাস্ত হইয়া স্থির করিল, প্রভুর কাছে ইহার কথা বলিয়া দেওয়াই ভাল। তাহার র্তাহার নিকটে গিয়া বলিল, “বাহিরের দরজার সামনে একটি বৃদ্ধ অপেক্ষা করিতেছে, তাহাকে দেখিলে ভিখারিণী বলিয়াই বোধ হয়। সে প্রায় দুই মাস ধরিয়া সমানে আসিতেছে এবং আসিবার কারণ আপনাকে ভিন্ন আর কাহাকেও বলিতে সে জনিচ্ছুক। আমরা তাহাকে পাগল পূজারিণী aరీష్తో মনে করিয়৷ বহুবার ফিরাইয়া দিয়াছি। তবুও সে আসে দেখিয়া এ-কথা আপনাকে জানাইলাম। উহার সম্বন্ধে কি ব্যবস্থা করিতে হইবে, তাহা অনুগ্রহ করিম জানাইবেন।” চিত্রকর বিরক্ত হইয়া বলিলেন, “এ-কথা আমাকে পূৰ্ব্বে জানাও নাই কেন ?” এই বলিয়া তিনি নিজেই বাহির হইয়া গিয়া অতি সদয়ভাবে সেই স্ত্রীলোকটিকে সম্ভাষণ করিলেন । তিনি নিজেও যে এককালে অতি দরিদ্র ছিলেন, সে-কথা ভুলিয়া যান নাই। তিনি স্ত্রীলোকটিকে জিজ্ঞাসা করিলেন সে র্তাহার নিকট কি ভিক্ষ চায়। স্ত্রীলোকটি বলিল, তাহার খাদ্য বা অর্থের কোনে৷ প্রয়োজন নাই, চিত্রকরের নিকট তাহার শুধু এই ভিক্ষ যে, তিনি যেন তাহার জন্য একটি ছবি আঁকিয় দেন। চিত্রকর কিছু বিন্মিত হইলেন । যাহা হউক, তিনি স্ত্রীলোকটিকে র্তাহার গৃহের ভিতর প্রবেশ করিতে বলিলেন । সে র্তাহার পিছন পিছন আসিল এবং ঘরের ভিতর নতজানু হইয়। বসিয়৷ সঙ্গের পুট্‌লিটি খুলিতে আরম্ভ করিল। থেলি হইবার পর চিত্রকর দেখিলেন ভিতরে একটি পুরাতন নর্তকীর পোষাক রহিয়াছে, উহা এখন ছিন্ন ও বিবর্ণ বটে, কিন্তু দেখিলেই বুঝিতে পারা যায় যে, এককালে উহ! খুবই উজ্জল ও সুন্দর ছিল । বৃদ্ধ যখন এক-একটি করিয়া পোষাকের অংশগুলি বাহির করিতেছিল, চিত্রকরের মনের ভিতর তখন একটা আন্দোলন চলিতেছিল। কি যেন তিনি মনে করিতে চেষ্টা করিতেছিলেন, অথচ পারিতেছিলেন না। হঠাৎ তাহার সব কথা মনে পড়িল । তিনি মানসচক্ষে সেই পৰ্ব্বতের উপরের ক্ষুদ্র কুটারটি দেখিতে পাইলেন, যেখানে তিনি অতি সাদর অভ্যর্থন পাইয়াছিলেন। সেই ছোট ঘরখানি, সেই কাগজের মশারী, সেই পূজার বেদী, সেই গভীর রাত্রে তরুণীর একাকী নৃত্য, সকলই তাহার মানসচক্ষে ভাসিম উঠিল। তিনি বিস্মিতা বৃদ্ধার সম্মুখে আভুমি নত হইয়া নমস্কার করিয়া বলিলেন, “আপনাকে যে আমি এক মুহূর্তের জন্যও ভুলিয়াছিলাম, আমার সে অপরাধ আপনি ক্ষমা করিবেন । কিন্তু প্রাম চল্লিশ বৎসর হইল আপনাতে আমাতে দেখা, তাই এরূপ ভুল সম্ভব হইয়াছে। এখন আপনাকে ভাল করিয়া চিনিতে পারিয়াছি। আপনি