পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

sign সৰ্ব্বপ্রকার বিকারের মধ্যেও মিনি অবিকৃত তিনিই প্রকৃত সাধক--প্রকৃত বীর—এই সত্য প্রেতিপন্ন করিবার জন্ত এই রূপ বীভৎস সাধনপ্রণালীর ব্যবস্থা হইয়াছিল । যিনি এই সাধনপদ্ধতির আশ্রয় গ্রহণ করিতে সাহস করি:তন, তাহাকে বলা হইত বীর ; কারণ, অনন্তসাধারণ শক্তির অধিকারী না হইলে কেহ এ-পথের পথিক হইতে পারে না । যে মদ্য দেবতাগণেরও মত্তত। অনিয়ন করে সেই মদ্য বাহাকে . বিকৃত করে না তিনিই প্রকৃত তাধিক । এ-পথে যে প্রতি পদে বিপদ, ও পতনের সম্ভাবনা, সুতরাং সাধারণের পক্ষে এ-পথ অবলম্বন করা যে শ্রেয়স্কর নচে সেদিকে তান্ত্রিক আচার্য্যগণ বিশেষ করিয়া সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করিতে কুষ্ঠিত হন নাই। প্রকৃত অধিকারী ছাড়–কুলমার্গের অনুবৰ্ত্তাগণ ব্যতীত আর কেহই এ পথ অবলম্বন করিবেন ন!—ইহাই হইল সাধারণ নির্দেশ । উপযুক্ত গুরুর নিকট হইতে এই সাধনপদ্ধতির গুঢ় রহস্ত ও ক্রম না জানিয় যে-ষ্যক্তি নিজে নিজেই ইহার সাহায্যে সিদ্ধি লাভ করিতে ইচ্ছ। করে, সে কৃতকাৰ্য্যত লাভ করিতে ত পারেই লী, পক্ষাস্তরে শুধু হাতে সাতার দিয়া অপার সমুদ্র পার হইতে গেলে যেরূপ উপহাসাম্পদ হইতে হয় সেইরূপ হাস্তাস্পদ হইয় থাকে খড়গধারার উপর দিয়া গমন করা, বাঘের গলা জড়াইয়া ধরা, সাপ ধরিয়া রাখা প্রভৃতি সমস্ত দুষ্কর কার্য্য অপেক্ষ দুষ্কর—একরূপ অসাধ্য—এই সাধনপথ ॥৩ সুতরাং সাধারণের পক্ষে এ-পথ অবলম্বন কর আদৌ বিধেয় নহে। শাস্ত্রের এই সকল স্পষ্ট উক্তি অনুধাবন করিলে কাহারও মনে কি এরূপ সন্দেহ জাগিতে পারে যে সাধারণকে অসৎ পথে প্ররোচিত করিবার জন্তই তন্ত্রশস্ত্রের উৎপত্তি ? তারপর, তন্ত্রের এই সমস্ত আপত্তিজনক আচার সকল ১ । অহে পীতং হয়। দ্রব্যং মোহয়েত্ৰিদশনপি | তন্মদাং কৌলিকঃ পীত্ব বিকরং নাথ রাত্ত যঃ । মন্ধানৈক পরে ভুয়াৎ স ভক্ত: স চ কৌলিকঃ ॥ পয়ানন্দমত ( বরোদ ) পৃঃ ১৬ ৩ । কুলধৰ্ম্মমজানন য: সংসারাষ্মোক্ষমিচ্ছতি | পরাবারমপারংস: পশিভ্যাং তত্ত্ব মিচ্ছতি-- কুলার্ণব ২।৪৭ ১ । কৃপাণধারাগমনাঙ্গ ব্যাখ্রকণ্ঠাৰলম্বনাথ । ভুজঙ্গধারণায় মশক্যং কুলবর্তন । --কুপার্ণব ২। তন্ত্রের সাধনা মৰ সম্প্রদায়ের জন্ত বিহিত নহে এবং কোন কোন সম্প্রদায় এই সমস্ত আচারের রূপক ও আধ্যায়িক অর্থ কল্পনা করিয়া ইহাদের বিরুদ্ধে সকল আপত্তির মুল উচ্ছেদ করিবার চেষ্টা করিয়াছেন । পুরশ্চর্যার্ণবাদি গ্রন্থের মতে এই সমস্ত আচার ব্রাহ্মণের পক্ষে নিরিদ্ধ। ব্রাহ্মণাদি উচ্চ বর্ণের স্বাভাবিক নৈতিক উৎকর্ষই বোধ হয় এইরূপ নিষেধের নিদান । বিভিন্ন নিম্নজাতির নৈতিক উচ্ছ,খলতাকে নিয়ন্ত্ৰিত করিবার উদ্দেশ্যে তাহদের জন্তই বোধ হয় মুলতঃ এই সব আচারের ব্যবস্থা হইয়াছিল । নানা দেবতার মধ্যে তারপর উপাসনায় এই জাতীয় আচার বা বামাচার অবশুপালনীয় এইরূপ বলা হইয়াছে । কিন্তু নিজ গাত্রের রুধির দfন প্রভৃতি কাৰ্য্য আবার এই উপাসনায়ও এবং ব্রাহ্মণের পক্ষে নিষিদ্ধ হইয়াছে । যে শাক্তদিগের মধ্যে এই সকল আচারের একচ্ছত্র আধিপত্য, তাহাদেরও সকল সম্প্রদায় ইহুদিগকে শ্রদ্ধার চক্ষে দেখেন না । কাপালিক, ক্ষপণক, দিগম্বর প্রভৃতি কৌল সম্প্রদায়ের আচার তান্ত্রিকাচার্য লক্ষ্মীধর তাহার আনন্দলহরীর টীকায় বিশেষভাবে নিন্দ করিয়াছেন । তিনি সময়াচারের অনুবন্ত । সময়মতে এবং পূৰ্ব্বকেীল-মতে আস্তর যাগ বা মানসপুজারই প্রাধান্ত দেখিতে পাওয়া যায়। কোনরূপ দ্যকারজনক আচার তাহদের মধ্যে প্রচলিত নাই । অনেক স্থলে এই সমস্ত আচারের রূপক অর্থ তাহার গ্রহণ করিয়াছেন দেখিতে পাওয়া যায় । সময়মতে তান্ত্রিক পুজার বাহিক অনুষ্ঠান একেবারেই আদৃত হয় নাই । লক্ষ্মীর বলিয়াছেন—সময়মতে মস্ত্রের পুরশ্চরণ নাই, জপ নাই, বাহ হোম নাই, বাহ পূক্ত নাই ; এই মতে হৎকমলমধ্যেই সমস্ত পূজার অনুষ্ঠান করিতে হইবে। এক কথায় বলিতে গেলে, মানস ধ্যানই এই পুজার প্রধান অঙ্গ এবং ইহা যে অতি উচ্চ অঙ্গের উপাসনা ও সকল উপাসনার অদর্শভুত তাহ সৰ্ব্ববাদিসৰ্ম্মত । তম্বের অনতিপরিচিত পরানন্দমতাবলম্বিগণের সাধনপদ্ধতিৰ মধ্যেও অনেক উচ্চস্তরের বস্তুর উল্লেখ পাওয়া যায় । তন্ত্রিক উপাসনা হইলেও ইহাতে হিংসা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ হইয়াছে । ভবিষ্যতে এই সম্প্রদায়ের মতবাদগুলি বিস্তুতভাবে আলোচনা করিবার ইচ্ছা আছে ।