পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৬২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* જ૧૭, প্রখম তোমার ভারি কষ্ট হবে। পরের বাড়ি মন ত কেমন করবেই।” \ যামিনী নিৰ্ম্মলার মুখে একটা অন্ততঃ সম্মান্ত ভালবাসার কথাও শুনিতে চাহিয়াছিল। কিন্তু বাষ্ট্র প্রতি ভালবাসার থোট বার-বার শুনিয়া অভিমানভূরেশ্বনৰ্ম্মল বলিল,—“না, আমি কষ্ট হ’তে দেব না .", “কেন গো ? নিজের উপর এত জুলুম- কেন ?” যামিনী সস্নেহে একটু ঠাট্ট করিয়া কম্ভিল । “ন না, কষ্ট হ’লে চলবে কেন ? এখন থেকে আপনাদের সঙ্গেই যে আমাকে থাকতে হবে। যত ধাকাই থাই, তার জন্তে মনে মনে আমাকে প্রস্তুত হয়ে নিতে হবে ।” খুব কৰ্ত্তব্যের কথা, স্থিরবুদ্ধির কথা সন্দেহ নাই । কিন্তু তখন হইতে যামিনী যাহা আশা করিয়৷ ফিরিতেছিল তাহা কিছুতেই পাইতেছে না । যেখানে যে সুরটি আসিয়া লাগিলে সমস্তই অনিৰ্ব্বচনীয় সমস্তই মধুর হইয়া উঠে, তাহ যেন কিছুতেই ঠিক জায়গায় লাগিতেছে না। নিৰ্ম্মল যদি তাহার কথার উত্তরে বলিত, “স্থা, আমার বাবার জন্তে খুব মন কেমন করছে, সৰ্ব্বদাই তাকে মনে পড়ে মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে,” তাহা হইলে যামিনী সেই শোককাতরাকে আপনার বিশাল বক্ষে টানিয়া লইত, যেমন করিয়া পারে নিজের সমস্ত শক্তি দিয়া তাহাকে প্রফুল্লিত, আনন্দিত করিয়া তুলিত। যাহাকে ভালবাসে তাহার বেদন দূর করিবার চেষ্টায় যে আনন্দ সেই বিপুল আনন্দ সে পাইত, তাহার ব্যথায় ব্যথিত হইয়া সে নিৰ্ম্মলার আরও কাছাকাছি আসিত । কিন্তু তেমন কোন হাওয়া বহিল না । নিৰ্ম্মল যে বাবার প্রতি ভালবাসার উল্লেখট খোট মনে করিল তাহাও সে বুঝিল না । কতদিন হইতে সে ভাবিতেছে কবে নিৰ্ম্মলাকে পাইবে, এই পাওয়ার পথে যত বাধ, সে-সব বাধার সহিত কতদিন ধরিয়া সে যুদ্ধ করিয়াছে। কত বিনিদ্র রাত্রি মশারির ভিতর এ-পাশ ওপাশ করিয়া কাটাইয়াছে এই বাধা দূর করিবার উপায় চিন্তা করিতে করিতে। এখন সে-সমস্ত ভাবনা-চিত্ত৷ উপায় নির্ধারণের পান্স শেষ হইয়াছে। অকস্মাৎ একটা প্রকাও চেষ্টা, একটা উগ্র ক্যুলার নিবৃত্তির পর ক্ষে প্রবামনী ; 'S98S মনে যেটুকু অবসাদ আসে সেইটুকু লইয়া সে নিৰ্ম্মলার কাছে আসিয়াছিল। মনে আশ ছিল স্নেহময়ী মাধুর্য্যময়ী নারী এমন করিয়া নিজেকে ধরা দিবে যাহাতে বসন্তের এক হিপ্পোল মেন সমস্ত তরুপল্লব মৰ্ম্মরিত মুখরিত হইল উঠে,"তহার রসপিপাসু হৃদয় তেমনি ঝঙ্কত হইয়া উঠিবে। কিন্তু নিৰ্ম্মলা যে এখনও ঘুম ইয়া আছে ; তাহাকে রূপকথার রাজকন্তর মত সোনার কাঠির অতি মুক্ত ম্পর্শে জাগাইতে হইবে—একথা যামিনী বুঝিত না । নিৰ্ম্মলার আরও কাছে সরিয়া গিয়া সে তাহার খোপায় জড়ান মালতী ফুলের মালাটা লইয়া নাড়াচাড়। কৱিন্তে লাগিল । চারিদিক হইতে নাড়িয়া চড়িয়া, আদর করিম উচ্ছসিত প্রেমে আচ্ছন্ন করিয়া এই শুভ্র সুন্দর ক্ষুদ্র হৃদয়টিকে একান্ত তাহার বলিয়া কাছে টানিয়া লইতে সে একেবারে অধীর হইয় উঠিল। কিন্তু নিৰ্ম্মলা চুপ করিয়া আকাশের তারার দিকে চাহিয়া আছে । তাহার মন সাড়া দিতে চায়, কি যেন তাহার ভাল লাগে । কিন্তু কোথায় যেন একটা ভয়, একটা বিতৃষ্ণ তাহকে কঠোর করিয়া তুলিতেছিল । সন্ধ্যার অালে ক্রমশ: নিবিড় অন্ধকারে ঢাকিয়া আসিল । যামিনী উঠিয় ইলেকট্রিক আলোটা নিবাইয়া দিতেই জ্যোৎস্নার আলে আসিয় নিঃশব্দ নারীমূৰ্ত্তির উপর পড়িল নিৰ্ম্মলা দৃষ্টি ফিরাইয়া যামিনীর দিকে চাহিল। সেই দুটি চোখের দিকে চাহিয়া থাকিতে থাকিতে যামিনী এক সময়ে হঠাৎ নিৰ্ম্মলার হাতখানি টানিয়া লইয়। তাহাতেই মুখ লুকাইয়া রুদ্ধস্বরে ডাকিল, “নিৰ্ম্মলা, নিৰ্ম্মলা, নিৰ্ম্মল---” ( ت لا ) নিৰ্ম্মলা যদি সহজেই ধরা দিত, হয়ত যামিনী এত অশাস্ত, এত উচ্ছসিত হইয়| উঠিত; না । সাধারণ স্বামীস্ত্রীর মত বিবাহের পর প্রথম প্রথম দাম্পত্যনীতির সংযমসীমা সম্বন্ধে কিছু বাড়াবাড়ি করিয়া তাহার পরে স্বভাবের সহজ নিয়মে আপনি থামিয়া যাইত। কিন্তু নিৰ্ম্মলার মনে যে একটি অনাসক্তির সুর, একটা বিচ্ছিন্নতার তাব রহিয়াছে, তাহতেই বাধা পাইয়া যামিনীর প্রতিহত আবেগ দ্বিগুণ বেগে তাহার দিকে ধাবিত হইল ।