পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তাহার মধ্যে খুপি২ মিলিয়াছে; এক দিকে তিনি লৌকিক সাহিত্য স্বাক্ট করিয়াছেন, প্রাচীন ও মধ্য যুগের ধৰ্ম্মলাহিত্য নয়, অস্ত দিকে আবার তিনি প্রাচীনকালসূলভ অনুপ্রাসের বহুল প্রয়োগ করিয়াছেন, যেমন—“দিল্লীর দোও দৰ্প দীপ্ত দশ দিশি ।” রঙ্গলাল মহাকাব্য রচনা করেন নাই, কিন্তু তাহার কবিতা পাশ্চাত্য অাদর্শের অনুসরণ করিয়াছে, এবং তিনি মহাকাব্য-রচনার পথে চলিয়াছেন, ইতিহাসের ঘটনা ও সজ্জনের জীবনকথা আশ্রয় করিয়া বাছিয়া বাছিয় শব্দপ্রয়োগ করিয়া কাব্য লিখিয়াছেন, তাহার রচনার সংক্ষিপ্ত আকার ভুলিয়া গেলে মহাকবিদের সঙ্গে এক পর্যায়ে তাহাকে ফেলা যাইত । মাইকেলের পর হেমচন্দ্র ( ১৮৩৮-১৯০৩ ) মহাকাবা রচনা করিয়া গিয়াছেন । হেমচন্দ্র ১৮৭৫ খৃষ্টাবে বৃত্ৰসংহারের প্রথম ভাগ প্রকাশিত করেন । দুই ভাগে ইহার সর্গসংখ্যা চবিবশ । কাব্যকে কবি যে রূপ দিয়াছেন তাহা পাশ্চাত্য-ঘে"যা, সন্দেহ নাই | সর্গের সংখ্যা অর্থাৎ কাব্যের দৈর্ঘ্য লইয়া আলোচনা করিলে তাহা বুঝা যাইবে । প্রথম সর্গে বণিত অকুরু-মন্ত্রণাসভ মিল্টনের অসুরসভারই অনুরূপ : স্বাদশে সরস্বতীর আহবান,—ইহাতে হেমচন্দ্র মিলটনের ও তদনুগামী মাইকেলের পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়াছেন ; ক্রয়োদশে, যে সোনার আপেল স্বর্গের দেবীদের মধ্যেও স্বন্দ্বের স্বষ্টি করিয়াছিল তাহীর অবতারণা করা হইয়াছে । ইহা ছাড়া শচীহরণ, ট্যাসের কাব্যে সফ্রোনিয়াকে অপহরণ করার ভাঁর লইয়াই লিখিত, এবং হেমচন্দ্রের নিয়তিদেবী গ্ৰীক “ফেট”-এর প্রতিচ্ছায়া । বৃত্রসংহারের অস্তর্নিহিত ভাবও অতি গভীর ;–বীরবাহু, ছায়াময়ী, অশোকানল,—ষ্ট্রহীরা মৌলিক হউক আর অস্থবাদ হউক, কাব্য মাত্র, কিন্তু বৃত্রসংহার, মহাকাব্য । ষে বৎসর বৃত্রসংহারের প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয়, সেই ১৮৭৫ অক্সেই নবীনচন্ত্র ( ১৮৪৬-১৯৭৯ ) পলাশীর যুদ্ধ রচনা করেন। জুলিয়াস সাজার, রিচার্ড দি থার্ড ও প্যারাডাইজ:লষ্ট, চাইল্ড হারল্ড-শেক্সপীয়ার, গিল্টন, বাইরগঞ্জ-ইহাঙ্গর দ্বাৰা পলাশীর যুদ্ধে রছিল গিয়াছে। তাহাভিয় লীনচজ রৈবতক, কুরুক্ষেত্র ও প্রভাস এই তিন ভাঞ্চেদজ্ঞান করি হিন্দু জাতীয়তার য়ে কাব্যময় ইতিহাস লিথিয়া গ্লিয়াছেন ভtহাতে ব্ললিক বাঙালী পাঠকের এপিক পাঠ করিবার স্পৃহা চরিষ্ঠাখ হইবার কথা ছিল । খ্ৰীকৃষ্ণ-চরিত্রের, আদ্য, মধ্য ও অস্ত্য লীলা যথাক্রমে ইহাদের মধ্যে বর্ণিত হইয়াছে। এই কাব্যত্রিতয়ের সমাবেশে জার্থী-জনাৰ্য-সঙ্ঘর্ষের এক মহান ইতিহাস, ব্রাহ্মণ-দ্রাবিড় সভ্যতার বিরোধের বার্তা নিহিত রহিয়াছে ; সে ইতিহাসের গর্তী হুবুহৎ, তাহার দৃষ্টি উদার। ইউরোপীয় মহাকাব্যে যে বিশালতার ভাব রহিয়াছে সেই বিশালতা, কাব্যত্রিতয়ে সম্পূর্ণ এই মহাকাব্যে যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যাইবে । ভারতীয় সভ্যতার এক অত্যুঞ্জল যুগের আনন্দ, সঙ্কট ও দুঃখ কবি মনশ্চক্ষে দেখিয়াছিলেন, এবং অতীতের যাহা সৰ্ব্বাপেক্ষা উল্লেথযোগ্য ঘটনা তাহাকে কেন্দ্র করিয়া সে যুগের দার্শনিক চিত্র তাহার লেখনীর সাহায্যে পরিস্ফুট করিতে চাহিয়াছিলেন । কবি নিজে পাশ্চাত্য ভাবের কঠোর সমালোচক ছিলেন ; সে কঠোরতা এত দূর ছিল যে বঙ্কিমের উপন্যাসে ভারতীয় আদর্শ ক্ষুণ্ণ হইয়াছে, বঙ্কিম-সাহিত্যে আদর্শ চরিত্রের একাত্ত অসম্ভাব, তাহাও বলিতে তিনি কুষ্ঠিত হন নাই। তিনি নিজে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য এই উভয় দৃষ্টির মধ্যে একটা সামঞ্জস্ত বিধান করিতে চাহিয়াছিলেন, এবং এইরূপ চেষ্টায় অগ্রণী না হইলেও যথাসাধ্য দুই দিকের আলোকে পথ চলিতে চেষ্টা করিয়াছেন। এইরূপ ভাবে নুতন সাহিত্যের আদি যুগে মহাকবিগণ এপিকের আদর্শে কাব্য রচনা করিতে চেষ্টা করিয়াছেন এবং যথাসম্ভব সিদ্ধিলাভও করিয়া গিয়াছেন । (È মধুসূদন-হেমচন্দ্র-নবীনচন্দ্রেব পর নানাবিধ-বিহগকাকলীমুখর বাংলার বিশাল সাহিত্যোদানে এপিকের কি আর সৃষ্টি হয় নাই ? বাংলার কাব্যকুঞ্জে এপিক সম্বন্ধে কি গভীর নীরবতাই বিরাজ করিয়াছে ? অঞ্জিগু বাংলার প্রধান গৰ্ব্ব তাহার সাহিত্য, তাঁহার প্রধান জাপ্রশ্ন কাৰা-লাহিত্য । তবে কেন এই এপিৰীক্তি, এই মহাকাকো বিরাগ ? ধিনি’আমাদের কবির্গম্ভীষ্ট তিনি নিজেই যে, এমন কি ক্ষয়ং বঙ্কিমচঞ্জে নির্দেশ * গ্রত্বেও, জীবনযাত্রার প্রথম মুহূর্বে মহাকাষোধঃ কৰা সাহিত্য-সাধন হইতে বাদ