পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আৰ্কি মেয়েটি দাওয়ায় একটা মাকুর বিছিয়ে দিয়ে দিলে, এক ঘটি জল নিয়ে এল । আমি হাত-পা ধুয়ে সুস্থ হয়ে থস্লে মেয়েট বললে-রায়ার কি ধোগাড় ক’রে দেৰ ঠাকুর ? আমি বললাম—আপনারা যা র"াধবেন, তাই থাকে। " রাত্রে দাওয়ায় শুয়ে রইলাম। পরদিন দুপুরের পরে অধিকারী-মশাই এল । পেছনে জন-তিনেক লোক, এক জনের পিঠে একটা খোল বাধা । তামাক খেতে খেতে আমার পরিচয় নিলে, খুব খুশী হ’ল আমি এসেচি বলে । বিকেলে উঙ্গি-পরা স্ত্রীলোকটির সঙ্গে কি নিয়ে তার ঝগড়া বেধে গেল । স্ত্রীলোকটি বলচে শুনলাম—অমন বদি করবি মিলে, তবে অামি বলরামপুরে চলে যাব । কে তোর মুর্থনাড়ার ধার ধীরে ? একটা পেট চলে যাবে রে, সেজন্তে তোর তোয়াঙ্কণ রাখি ভেবেচিল তুই ! আগুনে জল পড়ার মত অধিকারীর রাগ একদম শাস্ত হয়ে গেল । রাত্রে ওদের উঠোনে প্রকাণ্ড কীৰ্ত্তনের আসর বসল। রাত তিনটে পর্য্যস্ত কীৰ্ত্তন হ’ল । আসরলুদ্ধ সবাই হাত তুলে নাচতে মুরু করলে হঠাৎ ৷ তু-তিন ঘণ্টা উদণ্ড নৃত্যের পরে . ক্লাস্ত হয়ে পড়ার দরুণই হোক বা বেশী রাত হওয়ার জন্তেই হোক, তারা কীৰ্ত্তন বন্ধ করলে । স্বামিযেতে চাই, ওরা—বিশেষ ক’রে সেই স্ত্রীলোকটি— আমায় যেতে দেয় না । কি যত্ব যে করলে ! আর একটা দেখলাম অধিকারীকেও সেবা করে ঠিক ক্রীতদাসীর মত— মুখে এদিকে যখন-তখন যা-তা শুনিয়ে দেয়, তার মুখের কাছে দাড়াবার সাধ্যি নেই অধিকারীর । যাবার সময় মেয়েটি দিব্যি করিয়ে নিলে যে আমি আবার আসবে । বললে—তুমি তো ছেলেমানুষ, যখন খুশী আসরে । মাঝে মাঝে দেখা দিয়ে যাবে ; তোমাদের খাওয়ার কষ্ট হচ্চে এখানে—মাছ মিলে না, মাংস মিলে না । বোশেখ মালে এস, আমি দিয়ে দুধ দিয়ে খাওয়াবো । কি সুন্দর যে লাগল ওর স্নেহ । আমার সেই দর্শমের ক্ষমতাটা জ্ঞমেই ধেম চলে যাচ্চে । এই দীর্ঘ এক বছরের মধ্যে মাত্র একটি বার জিনিষটা ঘটেছিল । ব্যাপারটা যেন স্বপ্নের মত। তারই ফলে আটঘরায় స్క్రీత్య; ফিরে আসতে হচ্চে । সেদিন স্থপুরের পরে একটি গ্রাম্য ডাক্তারের ডিসপেন্সারী-ঘরে বেঞ্চিতে গুয়ে বিশ্রীম কল্পটিডাক্তারবাবু জাতিতে মাহিষ্য, সৰ্ব্বদা ধৰ্ম্মকথা বলতে ও শুনতে ভালবাসে ক’লে আমার ছাড়তে চাইত মা, সব সময় কেবল ঘ্যাম ঘ্যান ক’রে ওই সব কথা পেড়ে আমার প্রাণ অতিষ্ঠ ক’রে তু লছিল—আমি ধৰ্ম্মের কথা বলতেও ভালবাসি না, শুনতেও ভালবাসি না-ভাবছি শুয়ে শুয়ে কাল সকালে এর এখান থেকে চলে যাব—এমন সময় একটু তন্দ্ৰামত এল । তন্দ্রীঘোরে মনে হ’ল জামি একটা ছোট্ট ঘরেরঃকুলুঙ্গি থেকে বেদান ভেঙে কার হাতে দিচ্চি, যার হাতে দিচ্চি সে তার রোগঞ্জীর্ণ হাত অতিকষ্টে একটু করে তুলে বেদান নিচ্চে, আমি যেন ভাল দেখতে পাচ্চি নে ঘরটার মধ্যে ধোয় ধোয় কুয়াশা—বারকতক এই রকম বেদান দেওয়া-নেওয়ার পরে মনে হ’ল রোগীর মুখ আর আমার মায়ের মুখ এক। তন্ত্রণ ভেঙে মম অত্যন্ত চঞ্চল হয়ে উঠল এবং সেই দিনই সেখান থেকে আঠারো মাইল ছোট এসে ফুলসরা ঘাটে ষ্টীমার ধ’রে পরদিন বেলা দশটায় কলকাতা পৌছুলাম, মায়ের নিশ্চয়ই কোনো অসুখ করেচে, আটঘরা যেতেই হবে । শেয়ালদহ ষ্টেশনের কাছে একটা দোকান থেকে আঙর কিনে নেবো ভাবলাম, পকেটেও বেশী পয়সা নেই। পয়সা গুণচি দাড়িয়ে, এমন সময় দূর থেকে মেয়েদের বিশ্রাম-ঘরের সামনে দণ্ডায়মানা একটি নারীমূৰ্ত্তির দিকে চেয়ে আমার মনে হ’ল ধাড়ানোর ভঙ্গিটা আমার পরিচিত। কিন্তু এগিয়ে গিয়ে দেখতে পারলাম না—আঙর কিন্‌তে চলে গেলাম। ফিরবার সময় দেখি ট্যাক্সি ষ্ট্যাণ্ডের কাছে একটি পচিশ-ছাব্বিশ বছরের যুবকের সঙ্গে দাড়িয়ে ঐরামপুরের ছোটবৌ-ঠাকুরুণ ! আমি কাছে যেতেই বৌঠাকরুণ চমকে উঠলেন প্রায় । বললেন—আপনি ! কেথেকে অস্েিচন ! এমন চেহারা । আমি বললুম—আপনি কি একটু আগে মেয়েদের ওয়েটিং-ক্রমের কাছে পঁড়িয়ে ছিলেন ?? —স্থ্যা, এই যে আমরা এখন এলাম এই যোগবাণীর গাড়ীতে—আমরা স্ত্রীরামপুরে যাচ্চি। ইনি মেজদা—এ কে দেখেন নি কখনও 2