পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অশ্বিন মুক্তি b*aw লাগিল। নিশ্বলার চক্ষু দিয়া টপ, টপ, করিয়া জল পড়িতে লাগিল । কিছু ক্ষণ স্থির হইয়া থাকিয়া কহিল, “বাবা, সংসার তুমি কাকে বলছ ? সংসার মানে যা বোঝায় তা আমি বুঝতে চাই নে। সেখানে কেবল কুশ্রীত, শুধু হিংস, দ্বেষ, নীচতা । যে কয়েক মাস আমি শ্বশুরবাড়িতে ছিলাম সন্ধ্যে হ’লেই আমার মন ছটফট ক’রত। মনে হ’ত খুব একটা বদ্ধ কারাগারের মধ্যে কে যেন আমাকে বেঁধে রেখেছে । তোমার এই ছোট্ট ঘরখানির জন্তে এত মন কেমন করত । এই শাস্ত নির্জনতায় আলোটি জালিয়ে তুমি আর আমি বসে থাকি। তোমার মুথে আলো পড়েছে মধ্যে মধ্যে সেই মুখের দিকে চেয়ে দেখি । নেই সেই মুখে কোন বিকার কোন মলিনতা । বাবা, এর পরেও আর কি চাইবার থাকতে পারে ; মনে মনে এইটুকুর জন্তেই যে আমি পিপাসাৰ্ত্ত হয়েছিলুম।” চন্দ্ৰকান্ত অনেক ক্ষণ পৰ্য্যন্ত চুপ করিয়া থাকিয় কহিলেন, “ আমারই ভুল হয়েছে নিৰ্ম্মলা । তোমার বিয়ের পরে তুমি যথল চলে গেলে তখন নিজের এই অসহ কষ্টে বিস্মিত হয়ে এক বসে অনেক কথাই ভেবেছি । সেই সমস্ত ভাবনার কথা আজ তোমাকে বলি । প্রথম বয়সে সংসারের দিক থেকে খুব বড় রকম একটা ঘা থেয়েছিলুম। নিজের ধৰ্ম্মবিশ্বাসের ফলে হিন্দুধৰ্ম্মের নানারকম অর্থহীন লোকাচার, নানা ক্ষুদ্রতা অসাম্য আমাকে পীড়া দিত। ব্রাহ্মধৰ্ম্মের প্রতি আমি আকৃষ্ট হলুম। সংসার হ’ল আমার উপর বিরূপ । তোমার মায়ের সঙ্গে ঘটল আমার মৰ্ম্মাস্তিক বিচ্ছেদ । যদিও প্রকাগু ভাবে কোন দিন ব্রাহ্মধৰ্ম্মে দীক্ষা নিইনি তবুও সংসারের অমুকুলত কখনও পেলুম না। মাঝখানে যে বিদরণ-রেখা পড়ল তার এক দিকে রইলুম আমি এক, অন্ত দিকে তার ছেলেপিলে লোক-লৌকিকতা ঠাকুরদেবতা সমস্ত সংসার নিয়ে তোমার মা । চিরদিনই এমনি একলা কাটিয়ে আসছিলুম, কিন্তু যেদিন একমুঠে ফুলের মত মুন্দর শুভ্ৰ তোমাকে দেখলুম সেদিন কি যে লোভ হ’ল আবার আস্তে আস্তে নিজেকে জড়িয়ে ফেললুম। পুরুষের পক্ষে একল থাকা তেমন শক্ত ময় মা ! কিন্তু নিজের মধ্যেই নিজে চিরকাল আবদ্ধ হয়ে থাকা বড় কষ্টকর । সেই সঙ্কীর্ণ অবরুদ্ধ অন্ধকার থেকে তুমিই আমাকে মুক্তি দিয়েছিলে, মা ! নিজেকে তিলে তিলে এক জনের কাছে দান করবার যে ফুলভ আনন্দ সেই আনন্দে আমার দিন রাত্রি ভরেছিলে । কিন্তু •••••” চন্দ্রকান্ত উঠিয়া ঘরময় পায়চারি করিতে করিতে কহিতে লাগিলেন, “কিন্তু তোমাকে এত ভালবাসি নিৰ্ম্মল, যে তোমার জন্তেই আমার এখন দিবারাত্রি ভাবন । কিসে তুমি স্বর্থী হবে, কেমন ক’রে তোমার সমস্ত জীবন আনন্দময় কল্যাণপূর্ণ হবে ? এই ভাবনাতেই আমার দৃষ্টিকে করেছে তাঙ্ক, মলকে করেছে সজাগ | আমি এই তোমাকে বলছি মা, আমি তোমাকে দিলুম, উৎসর্গ ক’রে দিলুম | তোমাকে আমার জীবন থেকে সম্পূর্ণ ভাবে বিচ্ছিন্ন ক’রে, আমার জীবনের জাল থেকে সকল গ্রন্থি মোচন ক'রে তোমাকে তোমার জীবন-বিধাতার হাতে সমর্পণ করলুম ! তোমার বিধাতার ধে অভিপ্রায় তোমার জীবনের মধ্য দিয়ে বিকশিত হয়ে উড়তে চায় তাই সফল হোক নিৰ্ম্মল । তুমি সুখী হও, মুর্থী হও মা । আর আমি কিছু চাই না । আমার দিক থেকে কোন দায় কোন বন্ধন মনের মধ্যে রেখে না ।” নিন্মলা কেন কথা না বলিয়া চুপ করিয়া বসিয়াছিল । তাহার নির্মীলিত চক্ষুর কোণ দিয়া অজস্র অশ্র ঝরিয়া পড়িতেছিল। কোন এক রহস্যময় অজানা ভবিষ্যতের ছায় তাহার মনকে আচ্ছন্ন করিয়া ধরিয়াছিল আর তাহারই সঙ্গে অনির্ণেয় একটা তীব্র বেদন । নিজের জষ্ঠ নয়, কাহার তাহাও সে ঠিক বলিতে পারে না । কিন্তু চোখের উপর দিয়া বায়ে|স্কোপের ছবির মত ছোটবেলাকার কত ঘটনাই না একে একে ভাসিয়া যাইতে লাগিল । সেই তাহার ব:বীর চিরকাল চুপচাপ একলা বসিয়া থাকা । তাহাকে বিপুল আবেগভরে কাছে টানিয়া লওয়া । মনে হইতে লাগিল তিনি যেন চিরছুঃখী, কেহ তাহীকে কোনদিন কাছে টানিয়া লয় নাই, কোনদিন বুঝিতে চায় নাই | নিৰ্ম্মলার সঙ্গেও আজই যেন তাহার চিরবিচ্ছেদের দিন নিকটবৰ্ত্তী হইয়া আসিয়াছে। কিছু ক্ষণ পর চোখ মুছিয়া সে মৃদুকণ্ঠে কহিল, “বাবা, তোমার জীবন থেকে আমাকে বিদায় দিলে কেন ? আমাকে তোমার কাছে ধরে রাখলে না কেন চিরদিনই ?” “গাছ কি ফলকে চিরকাল ধরে রাখে মা ? নিজের ভাংড়