পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৮৯৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*08 তখন প্রকৃতির নিয়মেই তো গাছ থেকে সে খসে পড়ে যায়, আসে তার বিচ্ছেদের সময় । সেই বিচ্ছেদেই যে তার সার্থকতা । তোমার সঙ্গে আমার বিচ্ছেদও সেই রকম ।” “বেশ, তাই হবে । তুমি আমাকে স্থা বলবে আমি তাই মেনে চলবার চেষ্টা করবো । কিন্তু এইটুকুমাত্র তোমাকে মিনতি তুমি আমার জন্ত বাতদিন ভেবে না বাবা ” “তোমার জন্তে যে ভাবতে পাই সেই তো আমার সুথ মা ! কিন্তু মেনে চলার কথা কেন বলচ ? আমি কামনা করি জীবনের বিধান কেবল মেনে চলে নয়, আনন্দময় স্বতঃউৎসারিত স্বীকৃতির মধ্য দিয়েই তাকে তোমার জীবনে সার্থক ক’রে তোল তুমি । আমি এখন একটু ছাদে যাই নিৰ্ম্মলা । তুমি বসে এই বইখানার বাকীটুকু পড়ে নাও । যদি কোনস্থান বুঝিয়ে দেবার দরকার হয়, ফিরে এসে বুঝিয়ে দেব ।” চন্দ্রকত্ত চলিয়া যাইবার পরে নিৰ্ম্মল টেবিলের উপর মাথা রাখিয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিল । আজি ক’দিন হইতে সুশীলার জর হইয়াছে তাই রান্না করিবার জন্ত এক জন রাধুনি রাখিতে হইয়াছে । অন্দর হইতে ঠিক বিয়ের সহিত র"ধুনির কলহের সুর ক্রমশঃ উচ্চগ্রামে চড়িতেছে । নিৰ্ম্মল! যে-ঘরে করতলের ভিতর মস্তক বাথিয়া বসিয়াছিল সেখানেও আওয়াজ আসিতেছে, “- ••ইঃ লে বড় আমার দরদ রে ! বাবুদের পাতে মাছভাজা কম পড়েছিল কেন ? বলি ও বামুন ঠাকরুণ, বলি শুনছ, কার চোখে ধুলো দেবে তুমি ?--রাসু তেমন বীপের বিটি নয় বুঝলে ? ভাতের মধ্যে মাছভাজ গু"জে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল ।” নিৰ্ম্মল গোলমালে বিরক্ত হইয়া একবার দুয়ারের কাছ পর্য্যন্ত আগষ্টিয়া গেল তfস্থায় পরে আবার ফিরিয়া আসিয়া পরিত্যক্ত চেয়ারটায় বসিল । সংসারের এই সকল নিরতিশয় কুত্ৰ গোলযোগ, অসুন্দর কলহ, ইতর বাক্যবিনিময় তাহীকে গভীর করিয়া বিধিল । কোথাও কি ইহার হাত হইতে রক্ষা নাই ! গোলমাল ক্রমশঃ প্রচণ্ড হইয় উঠতেছে। না, অবহেলা করা চলিবে না । সংসারের প্রতিও যে তাহার একটা কৰ্ত্তব্য আছে । যেমন করিয়া পারে এ সকল সে থামাইবে । নিৰ্ম্মল উঠিয়া ক্তিত্তর গেল । প্রাণরস দিয়ে তাঁকে সে যখন নিটোল পরিপক্ক ক’রে তোলে । 'SISBS পাচিকার কাছে গিয়া কহিল, “কি হয়েছে মালুর মা ? গোলমাল কিসের ?” পাচিক হাত-মুখ নাড়িয়া ঝিয়ের উদ্দেশ্বে কহিল, “শতেকখোয়ারি অাবগির মেয়ে, আমার নামে চোর অপবাদ দেয় গেী ! তেীর লোলা খসে যাবে না !” প্রত্যুত্তরে রাহু ঝিও গর্জন করিয়া উঠিল । নিৰ্ম্মল স্তম্ভিতের মজুদাড়াইয়া রহিল। দুই পক্ষ হইতে অতঃপর যে-সকল উত্তর-প্রত্যুত্তর চলিতে লাগিল তাহার ভাষা যেমনষ্ট কদৰ্য্য তেমনই অশ্লীল । সংসার-নাট্যশালার এই যে একট টুকরা অকস্মাৎ তাঁহারই চোখের সামনে অভিনীত হইতে থাকিল সেই দিক পালে চাহিয়া নিৰ্ম্মল বিমনার মত স্তব্ধ হইয়া ভাবিতে লাগিল, সংসারে এ-সকলেরও প্রয়োজন আছে | এই-সব লইয়াই সংসার । সেখানে যাহারা থাকে এই ধরণের অসহ্য ততরতার মাঝেই অহরহ তাহাদের বাস করিতে হয় । নিৰ্ম্মলা এইমাত্র রবীন্দ্রনাথের হিবাটুলেকচারের রিলিজন অফ দি মানু পড়িতে পড়িতে উঠিয়া আসিয়াছিল । শাহীর মধ্যে সে মগ্ন হইয়াছিল সে কি সুন্দর, কি গভীর । সেই কুলহীন প্রশাস্তির মাঝখান হইতে উঠিয়া আসিয়া এইখানে দাড়াইবামাত্র তাহার কষ্ট হইতে লাগিল । বহুক্ষণ অসাড়ের মত দাড়াইয়া থাকিয় অবশেষে যাইবার সময় ঋিকে সম্বোধন করিয়া অত্যন্ত মৃদুকণ্ঠে কহিল, “ভদ্রলোকের বাড়িতে এ-সব কি কাণ্ড বল ত ? ঘাও মুখ বুজে কাজ করে। গে। ছিঃ, এথানে দাড়িয়ে অমন অভদ্র কাণ্ড করতে নেই ।” ঝি আরও উত্তেস্থিত হইয়া উঠিল, “ভদ্রলোকের বাড়ি কি দেখাচ্ছে গ দিদিঠাকুরুণ । আজই কি নুতন তোমাদের বাড়িতে কাজ করছি । কলকাতায় আমন দশ-বিশটা ভাদর লোকের বাড়ি কাজ করেছি । কেন কি করেছি আমি ?” (চক্ষে অঞ্চল দিয়া) “কেন আমি কি নাচউলি না আমি বাজারের মেয়ে যে তুমি আমায় কথায় কথায় ভদর লোকের বাড়ির খোটা দিচ্ছ, দিদি ?” নিৰ্ম্মলা অপরিসীম স্থণায় সেখান হইতে সরিয়া গেল । সে চোখের অন্তরাল হইবামাত্র ঝি বাম্নির দিকে ফিরিয়া আপন-মনেই বলিতে লাগিল, “ভদ্রলোকের বাড়ির কাগুট আমার সব জান৷ আtছ । জানতে আর কিছু বাকী আছে কি এই রামুর ” ತ್ರ