পাতা:প্রবাসী (চতুস্ত্রিংশ ভাগ, প্রথম খণ্ড).djvu/৯৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বৈশাখী বিপরীত্ত ዓ¢ ভৰু গোলগাল আছে, হালি খুলী আছে, এক রকম দেখায়, বড় হইয়া এ যে আবার কি রকম দেখিতে হইবে কে জানে ? বলা বাহুল্য, দেশে তখনও শারদা আইন জারি হইতে অনেক বিলম্ব ছিল, স্বতরাং নীহারিকার ইচ্ছাটাকে কেহই আপত্তিজনক বা অদ্ভূত মনে করিত না। লতাকে যে বাপের বাড়ি বছর দশের বেশী বাস করিতে হইবে না, এ-বিষয়ে ঘরে বাহিরে কাহারও কোনো সন্দেহ ছিল না । কিন্তু যে-মেয়ে এক বছর বয়স হইতে না হইতে নিজের খাওয়া পর, শোয় সব-কিছুর ব্যবস্থা নিজে করিম আসিতেছে, তাহার চিরজীবনের ব্যবস্থা অন্ত লোকে অত চট করিয়া করিয়া দিতে পারে না। দাদাকে মাষ্টার পড়ায়, সে উল্টা দিকে বসিয়া দেখে। হঠাৎ এক দিন একথানা খবরের কাগজ উল্টা করিয়া ধরিয়া গড় গড় করিয়া পড়িয়া সে সকলকে তাক লাগাইমা দিল । ছোকরা-মাষ্টারটির ব্যাপারটা বড়ই মনে লাগিল । এই একটা মাকাল ফলের মত ছেলে, ইহার পিছনে সে পুর৷ একটা বছর খাটিতেছে, ইহাকে কি সে বিন্দুমাত্র কিছু শিথাইতে পারিল ? অার এইটুকু মেমে, ইহাকে কোনো দিন কেহ ক খ চিনাইবারও চেষ্টা করে নাই, ইহার বুদ্ধি দেখ ? সে-দিন হইতে কান্তিচন্দ্রের মাষ্টার নামে তাহারই মাষ্টার থাকিলেও কাৰ্য্যতঃ লতারই মাষ্টার হইয়া নাড়াইল । লতাকে যাহা শেখান যায়, তাহা ত সে শেখেই, বাহা না শেখান হয় তাহাও কোথা হইতে যে সে শিখিয়া আসে তাহার মাষ্টার ভাবিয়া পায় না। শুধু পড়াশুনাতেই নয়, অন্য দিকেও লতা বাড়ির লোককে থাকিম থাকিম্বা তাকৃ লাগাইয়া দেয়। ঠিক। ঝি আসে নাই, নীহারিকার মাথা ধরিয়াছে। কলতলায় স্তুপীকৃত এটো বাসনের দিকে তিনি যতবার তাকাইতেছেন, র্তাহার বরী মাথা আরও বেশী ধরিয়া যাইতেছে। হঠাৎ বাসন নাড়ার শব্দ হইল, চৌবাচ্চার মধ্যে কলের জল ঝিরঝির করিয়া পড়িতে আরম্ভ করিল। নীহারিকার মনে হইল যেন মমতে পথভ্রান্ত পথিকের কৰ্ণে জলধারার শব্দ আসিতেছে । আকুল আগ্রহে শয়নকক্ষ হইতে গলা বাড়াইয়া বাহিরের উঠানে দৃষ্টিনিক্ষেপ করিলেন। ওমা, কোথায় বা পোড়ারসুখী ক্যাঙালীর মা। ছোট লতা ডুরে শাড়ীর আঁচলটি কোমরে আচ্ছা করিয়া জড়াইয়া, হাতের সোনার বালী উদ্ধে বাহুতে টানিয়া তুলিয়া, মহোৎসাহে বাসন মাজিতেছে। নীহারিক ধরামাথার যন্ত্রণা ফেলিয়া ছুটিয়া আসিলেন, “এই, এই, সবু বলছি, সবু লীগগীর । এৰুরক্তি মেয়ে, রকম দেখ না, কঁাড়িখানেক এটো মাজতে বলেছে । তারপর সর্দি কাশি ক’রে মর আর কি । একেই ত আমার ছেলেকে নিয়ে কত স্বখ ।” লত নড়িবার কোনো লক্ষণ না দেখাইয়া বলিল—“ আমি তোমার আহেলদে ছেলের মত কি-না ? কতবার জামি ক্যাঙালীর মামের সঙ্গে বাসন মেজেছি, কথখনো আমার কিছু হয় না, বলিমা ঘষ ঘষ করিয়া মাজিয়া চলিল । নীহারিকা হয়ত জরে শয্যাশামী, বামুন ঠাকরুণ সময় বুঝিয়া নিজের বাড়িতেই থাকিয় গেলেন । কাস্তি সময়মত গোছাভরা লুচি না পাইয়া নাকে কাদিতে আরম্ভ করিল। রামহরির চোক প্রাম কপালে উঠিবার জোগাড়, এমন সময় দেখা গেল লতা গোল গোল ছোট দুইটি হাত প্রাণপণে চালাইয়া আটা ঠাসিতেছে এবং দাদাকে সাৱনা দিতেছে, “বাবা, আচ্ছা ছেচকাদুনে ছেলেবাপু তুমি । একটু সবুর কর না, লুচি এখনি হয়ে যাবে।” আট বছরের মেয়ে যখন লতা, তখনই সে রান্নাবান্না সব শিখিয়া ফেলিল। বামুনঠাকরুণ না আসিলে নীহারিকাকে আর একেবারে পথে বসিতে হয় না, লতাই তাকার জৰ্দ্ধেক কাজ করিয়া দেয়। এইটুকু মেয়ের গায়ে ভগবান শক্তিও ; দিয়াছেন আশ্চৰ্য্য। সে-দিন পাড়ার শ্রেষ্ঠ ডানপিটে ভোশ্ব লাকে এমন এক চেলা কাঠের বাড়ি লাগাইয়াছে যে, পাড়ায় লতার নাম রটিয়া গিয়াছে। কাস্তিচন্দ্র সকালে নিজে খাইবার জন্য দুইটি রসগোল্লা কিনিয়া আনিতেছিল, হঠাৎ ভোম্বলী কোথা হইতে চিলের মত ছো মারিয়ী রসগোল্লা দুটি ঠোঙা হইতে তুলিয়া নিজের মুখে ফেলিয়া দিল । কাস্তি ভ্যা করিয়া কাদিয়া উঠিতেই লতা বাহির হইয়া আসিল । কাঠ কাটিয়া দিয়া সে মামের উকুন ধরানোর সাহাষ্য করিতেছিল । সদর দরজার কাছে দাড়াইয়া দেখিল কাস্তি খালি ঠোঙাট হাতে করিয়া হা করিয়৷ কাজিতেছে, আর ভোম্বলা একটু দূরে দাড়াইম্ন তাহাকে কলা দেখাইম্বা বলিতেছে “ও বাদর, কলা খাবি, জয় জগন্নাথ দেখতে যাবি ?”