পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাতিক ७द्यूषॆज़। Գ:» ভাই শলাপরামর্শ দিয়ে গয়না কটা হাত করে নিয়েছে ; আমায় বলতেই সাহস হচ্ছে না, আনতে যাবে কোন লজ্জাম !” কল্যাণী বলিল, “লজ্জার কথা ত বটেই। এখনও মা’র নিঃশ্বাস ও বাড়ির হাওয়ায় মিশে রয়েছে, আর আমি যাব গয়না বুঝে নিতে! জামাইকে তার কি মনে করবে একবার ভাবছ না? এমন করে তুমি যদি আমার মাথা হেঁট করাও তাহলে আর যে আমি বাপের বাড়িতে মুখ দেখাতে পারব না ।” সিন্দুকের চাবি বন্ধ করিয়া আঁচলে বাধিয়া কল্যাণী রান্নঘরে চলিয় গেল। আপাতত যাই হউক, হীরালাল যে তাহাকে বাপের বাড়ি হইতে দুই-চারি দিনেই গহন আনিতে বাধা করিবে সে বিষয়ে কল্যাণীর মনে কোনো সন্দেহই ছিল ন! ৷ অথচ দাদাও তাহার এভ ব্যগ্রতীকে ভাল চক্ষে দেখিবে না । নিঃসন্তান ভগ্নীকে মা’র এত অঙ্গস উপহার দেওয়ায় এমনিতেই দাদার মনে সন্দেহের অঙ্কুর দেপা দিতেছে, তাহার উপর ভগ্নীপতির লুন্ধতার পরিচয় পাইলে ত সোনায় সোহাগ। হুইবে । এ লজ্জ অপেক্ষা সতাই গহন কটা দাদাকে তখনি সপিয়া দিয়া আসিলে ভাল হইত। সে রাত্রি কাটিয় গেল। মৃত্যুবেদন তুলিতে কল্যাণ৷ তাহার নিজের ঘরে আসিয়াছিল ; কিন্তু দুই দিক্ দিয়া তাহার দুষ্ট পরমাস্ট্রীয় গুলের আগুন জালিয়৷ ক্ষত মুখে রক্ত ঝরাইতে বদ্ধপরিকর হইয়াছে। এমন সময় কোথায় পাইবে সে শান্তি, কোথায় বা সাল্গুন ? স্বামী পাছে কোনো স্বত্রে গহনার কথা পাড়িয়া বসে এই ভয়ে কল্যাণী পঞ্চ ব্যঞ্জন রাধিয়া, ঘর গোছাইয় সেলাই করিয়া আপনাকে এক মুহূৰ্ত্ত বিশ্রাম দিল ন । কিন্তু তাহারই মধ্যে যতবার হীরালালের সহিত চোথাচোথি হয়, বুঝিতে পারে সে কিছু একটা বলিবার জন্য উদগ্রীব হইয় রহিয়াছে। দুই বারই খাইবার সময় ছেলেকে অনেক যত্ন করিয়া আনিয়া স্বামীর পাশে বসাইল, হীরালাল কথা বলিবার স্থযোগ পাইল না। স্বামীর আগে ঘুমাইতে যাওয়ার অপরাধ জীবনে সে কোনো দিন করে নাই, আজ শরীর খারাপ লাগার ছুতায় সৰ্ব্বাগে বিছানায় গিয়া সে চোখ বুজিয়া শুইল। হীরালাল ঘরের ভিতর অসহিষ্ণুভাবে কিছুক্ষণ ঘুরিয়া কল্যাণীকে ঠেলা দিয়া দুই-একবার ডাক দিল । কিন্তু ভাণ-করা ঘুম ভাঙানো সহজ নয়। . বেড়াইতেছে । অনেক রাত্রে সত্য সভাই ঘুম ভাঙ্গিয় কল্যাণী দেখিল ঘরের চারি দিকের জানাল বন্ধ করিয়া আলো জালিয়। হীরালাল সমস্ত বাক্স ও আলমারীর ভিতর কি খুজিয়৷ আঁচলের চাবিটাও আঁচলে নাই দেখিয়৷ কল্যাণী লজ্জায় চোখ ফিরাইল। - ভোর বেলা আর দশ বাড়ির মত কল্যাণীর বাড়িও রান্নাঘরের ধোয়ায় অন্ধকার হইয়া উঠিয়াছে। আঁচল দিয়া চোথ ঘষিতে ঘষিতে তাহারই ভিতর বসিয়া ঝি হলুদ লঙ্ক বাট শুরু করিয়া দিয়াছে কল্যাণী হাতপাখা চালাইয়। চায়ের জলট নামাইবার চেষ্টায় আছে। ছেলেট তখনও বিছানার মায় কাটাইতে পারে নাই। হীরালাল হঠাৎ আসিয়া বলিল, “ঝি সাম্মের গলির দোকান থেকে চার । পয়সার জিলিপি আন দেখি।” বাবুকে এত সকালে জিলিপির লোভে অতিষ্ঠ হইয় উঠতে ইতিপূৰ্ব্বে সে দেখে নাই। বিম্মিত হইয়। মশলামাখ। হাতেই পয়সা লইয়। বাহির হইয় পড়িল। হীরালাল অত্যন্ত মোলায়েম স্বরে বলিল, “কল্যাণী, মাকে এত ভালবাসতে তিনি ভালবেসে যা তোমাকে দিলেন, সেগুলো কি কাছে কাছে রাখতেও ইচ্ছা করে না ? দাদার। শোকাতাপা মানুষ, তাদের ঘরে কে কখন আছে যাচ্ছে, কিছু যদি নিয়ে সরে পড়ে, র্তর দেখতেও পাবেন না। এ সময়টা জিনিষগুলো কাছে এনে রাখে । তারপর সবাই সাম্লে উঠলে যেখানে ভাল বোঝ রাখলেই হবে। মায়ের সিন্দুকের চাবি ত তোমারই কাছে ছিল মনে হচ্ছে। তুমি আপনি খুলে নিয়ে এলে চাইবার সঙ্কোচও থাকৃবে না। লক্ষ্মীটি, যাও নিয়ে এস, হারিয়ে ফেলে দুঃখ রাখবার ঠাই পাবে না।” কল্যাণী বুঝিল গহনাগুলি না দেখিতে পাওয়া পৰ্য্যন্ত স্বামীর মনে শান্তি নাই, অন্য চিন্তাও নাই এবং সে যতক্ষণ তাহার এই ইচ্ছার পথে বাধা স্বষ্টি করিবে, ততক্ষণ গহনার অধিকারিণী হইলেও সে-ই হইবে র্তাহার পরম শক্র । অন্য সময় হইলে আজও সে একবার ন্যায়-অন্যায় শোভন-অশোভন লইয়া তর্ক তুলিত। কিন্তু আজ আর তাহার ততখানি জেদ করিবার ক্ষমতা ছিল না। সে বলিল, “যাব বই কি আনতে, তবে চাবি যখন আমার কাছেই রয়েছে, তখন ভয়ের ত কোনো কথা নেই। আজ গেলেও যা, দুদিন বাদে গেলেও তা ।”