পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

oمیb SOBO হীরালাল বলিল, “সে ঠিক কথা। কিন্তু দুজনে মিলে একবার ফর্দের সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে যদি কিছু না মেলে তার কথাটা টাটুকী টাটুক মনে করে বলতে পারবে। কত মানুষ এসেছে গিয়েছে, দেরী করলে ভুল-চুক কিছুই শোধরানো যাবে না । হতেও ত পারে যে তোমায় দেবেন লিখে রেখে ভুলে একটা ভাল জিনিষ বাকী রেখে দিয়েছেন। আমি যত মনে করেছিলাম, এখন দেখছি জিনিষ তার চেয়ে অনেক দামী ।” - কল্যাণী বলিল, “ফর্দ মিলিয়ে জিনিষ আদায় করতে আমি পারব না। যা আছে তাই থাকৃবে।” হীরালাল বলিল, “তুমি ন পার আমিই নেব । তোমার মামের হাতের ফর্দে ত কারুর টু শব্দ করবার অধিকার নেই ।” রাগে আগুন হইয়া কল্যাণী বলিল, “কেন তুমি মায়ের হাতের ফর্দ আমার আলমারী থেকে নিয়েছ ?” হীরালাল অম্লান বদনে বলিল, “ তুমিই ত কাল আলমারী দেখতে গিয়ে ফর্দ বাইরে ফেলে রেখেছিলে। আমি না তুললে কোন চুলোয় যেত জানতেও পারতে না।” কল্যাণী চুপ করিয়া রহিল। শেষ পর্য্যন্ত তাহাকে গহন। আনিতে যাইতেই হইল। চাবি কল্যাণীর কাছেই ছিল। কিন্তু মা’র ঘর হইতে গহনার বাক্স বাহির করিয়া লইয়া কাহাকেও কিছু না বলিয়া চলিয়া যাইতে কল্যাণীর লজ্জা করিতেছিল । নিজের জিনিষ বলিয়া কহিয়া লইয়া গেলেও লোভীর অপবাদ না পাইয়া রক্ষা নাই, না বলিয়া লইয়া যাওয়া ত প্রায় চুরির মতই লজ্জাকর। মা’র পরিত্যক্ত ঘরের সেই খাটখানার উপরই কল্যাণী বাক্স খুলিয়া গহনাগুলা একবার আন্দাজমত মিলাইতে বসিল । চোখের জলে তাহার দৃষ্টি ঝাপসা হইয়া যাইতেছিল, স্মৃতির ভিড়ে মন বিক্ষিপ্ত হুইয়া পড়িতেছিল। মা যেন তাহারই পিছনে আসিয়া দাড়াইয়াছেন। আজও কি সেদিনকার মত নিজের হাতে তাঁহাকে সাজাইতে বসিকেন ? হীরামুক্তার গহনাগুলা গুণিতে গুণিতে কল্যাণীর কেবলই মনে হইতেছে, তাহার কি স্মৃতিবিভ্রম হইল ? তিনবার চারবার পাচবার গুণিয়াও দেখিল হীরার কষ্টি হীরার চূড় জোড়া ও আর যেন কি মিলিতেছে না। সোনার গহনার বাজ নাড়িয়া চাড়িয়া দেখিল সেখানেও নাই। খালি ঘর হইতে কি তবে চোরে লইয়া গেল ? এই গুলাই সবচেয়ে দামী । নিশ্চয় সেদিন সে বাক্সে তুলিতে ভুলিয়া গিয়াছিল। যদি দাদা বৌদির কেউ তুলিয়া রাখিয় থাকে তবেই রক্ষা, ন হইলে সৰ্ব্বনাশ। হীরার গহন জীবনে সে কোনোদিনই হয়ত পরিবে না, এবং অর্থের প্রয়োজনে বিক্রয় করিতে যে হাত উঠিবে এমন কথা আজ ত বিশ্বাস হয় না। কিন্তু সে যাহাই হউক, চোরের হাতে মাতৃস্কৃতিমণ্ডিত অলঙ্কারগুলি ত তুলিম দেওয়া যায় না ? সবার উপরে আছে তাহার স্বামীর ভয়, নিজের ক্ষতি যেমন করিয়া হউকৃ সে সহ করিতে পারিবে. কিন্তু অসাবধানতার জন্য এমন মূল্যবান জিনিষগুলি গিয়াছে জানিতে পারিলে স্বামীর হাতে আর রক্ষা থাকিলে না। দীর্ঘ দিবানিদ্রার মাঝখানে নিরঞ্জনের স্ত্রী অনুপম অৰ্দ্ধ তন্দ্রায় পাশ ফিরিয়া শুইতেছেন, কল্যাণী গহনার বাক্স দুটা হাতে করিয়া ঘরে ঢুকিল। বাক্স রাখার শব্দেও অনুপম চোখ মেলিল না দেখিয়া অগত্যা কল্যাণী ডাক দিয়া বলিল, “বোঁদি, আমি এসেছি ভাই ।” কপালে বলীরেখা টানিয়া আধখানা চোখ খুলিতে খুলিতে অনুপম শুধু বলিল, “বোসে।” কিন্তু পিসির গলার আওয়াজ পাইয়া বুলবুল পাশের ঘর হইতে ছুটিয়া আসিয়া দুই হাতে তাহার গলা জড়াইয়া ধরিল। অনুপমার অৰ্দ্ধ-উল্মীলিত চক্ষু আবার বুজিম আসিতেছে দেখিয় কল্যাণী বড়ই অস্বস্তি অনুভব করিতেছিল, বলিল, “আমার যে যাবার সময় হ’ল বুলবুলি মা। এদিকে তোমার মা আবার ঘুমিয়ে পড়ল। গয়নাগুলো নিয়ে যাব, সে কথা বলাই হল না।” বুলবুল মাকে ঠেলা দিয়া সজোরে চীৎকার করিয়া বলিল, “মাগো ওঠ না। পিসিমা বাড়ি চলে যাবেন এখ খুনি।” কন্যার ঠেলায় ও চীৎকারে আঁচলে চোপমুখ মুছিতে মুছিতে অনুপম উঠিয়া বসিল, “ঠাকুরবি, এসেই চললে ? এত তাড়া কিসের ?” সলজে কল্যাণী বলিল, “এমন কিছু না। এই মা’র গমন কটা একটু নেড়ে চেড়ে দেখব, উনিও একটু দেখবেন আজ ছুটির দিন। তাই বাড়ী নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ভাই, সেদিন গোলেমালে কোথায় কি রেখেছি, এখন বলতেও ভক্স করছে, ক’খানা হীরের গয়না ত মেলাতে পারছি না।”