পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাত্তিক; অনুপম যথাসম্ভব চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া বলিল, “সে কি কথা ভাই ? এও কি হয় ? নিশ্চয় গায়ে দিয়ে বাড়ি চলে গিয়েছিলে ।” কল্যাণী হালিয়া বলিল, “ জন্মে হারের গহনা পরলাম না, এখন মা’র কাজ না শেষ হতেই হীরে জহরং পরে বেড়াব, আমি কি পাগল বৌদি ?” বুলবুল মার মুখখান দুই হাতে নিজের দিকে ঘুরাইয় বলিল, “ মা, মা, শোন একটা কথা ?” মা বিরক্ত হইয়া উঠিয়া দাড়াইয় তাহার হাত ধরিয়া দরজার দিকে ঠেলিয়া দিয়া বলিল “তুই যা দেখি, নিজের পড়াশুনে কর গিয়ে । বুড়োর মত সাত কথার মাঝখানে এসে তোকে কে বসতে বললে ? শীগগির যা বলছি।” বুলবুল সেইখানেই দাড়াইয়। বলিল, “আমি যাচ্ছি, কিন্তু তুমি মা, বডড ভুলে যাও। সেদিন যে বাবা ঠাকুমা’র ঘর থেকে বেরোবার পর আমাকে হীরের কষ্টি আর চুড় পরিয়ে দিলেন, সেগুলো ত ঠিক ঠাকুমারই গয়নার মত । তুমি রাখলে তারপর তোমার বাক্সে । পিসিমাকে দেখাও না একবার, বাব হয়ত ওই ঘরেই পেয়ে নিয়ে এসেছিলেন ।” অন্তপমা বলিল, “দূর, সে পোক্রাজের গয়ন, কে ওঁর কাছে বাধা দিতে এসেছিল, তাই বোধ হয় খেলা করে তোকে পরালেন । সে দেখে কি হবে ?” কল্যাণী চমকিয়া উঠিল, “না থাকৃ, আমি সে সব দেখতে চাই না । এগুলোর যদি কোনো সন্ধান পাও ত আমাকে বলো, বৌদি । মা’র জিনিষ চোরছাচড়ের পেটে যাবে এ মনে করতেও কান্ন আসে। লক্ষ্মীটি ভাই, তুমি যেমন করে পার’ পুলিস ডেকেই হোক আর যাই ক’রে হোক জিনিষ দুটোর খোজ করে রেথো, না হ’লে দুঃখের সীমা ত থাকবেই না, উপরি শ্বশুরবাড়িতে আমার লজ্জা রাখবার ঠাই থাকৃবে না । ননদ দেওর সবাই সে ফর্দ দেখেছে, আমার আঁচলেই বাধা ছিল। এখন যদি গিয়ে বলি যে বাপের বাড়িতেই চোরে নিয়ে গেছে, তাহলে সাত কুটুমে মিলে আমার ভাইকেই যে গাল দেবে সে কি ক’রে সইব বল ত ? ভাই, তোমার দুটি হাতে ধরে বলছি ; তুমি এর যা হয় একটা বিহিত করে৷ ” অনুপম মুখ গষ্ঠীর করিয়া বলিঙ্গ, নিজের ঘরদোর ভাল করে খুজে তারপর এত বড় দোষটা দিলে পারতে 3 } - ज्यूषक الاسط ঠাকুরঝি। কেনই বা এখানে ফেলে যাওয়া, আর কেনই বা এত পুলিশ-পেশাদার কথা ? যা হোক, আস্থক তোমার ভাই, র্তাকেই বলে দেখব এখন ? কল্যাণী কি বলিবে ভাবিয়া পাইল না। কিন্তু এত দামী গহন হারাইয়া বাড়ি ফিরিলে তাহার যে লাঞ্ছনার অন্ত থাকিবে না এ বিষয়ে তাহার মনে বিন্দুমাত্র সন্দেহু ছিল না। ঝড়ের মুখে পড়িলে মানুষ তৃণকেও আশ্রয় করে । তাই আর কোনো পথ খুজিয়া না পাইয়া সে বলিল, “থাক, দাদার সঙ্গে পরামর্শ জ্বামিই করব, বৌদি। আজকের দিনটা এখানেই কাটিয়ে কাল তখন ষাবার ব্যবস্থা করলেই হবে।” কথা বলিতে তাহার ভাল লাগিতে ছিল না। গহনা সমেত বাক্স দুটা লইয়া সে মা’র ঘরেই ফিরিয়া গেল । লোহার সিন্দুকে বাক্স দুটি তুলিয়। ঘরের দরজা বন্ধ করিয়া সে জানালার কাছে চুপ করিয়া বসিল। এই দিনট ও রাত্রিটা অন্তত গহনার খোটা সহিতে হুইবে না। আজ মা থাকিলে হয়ত র্তাহার কোলের ভিতর আশ্রয় লইলে এই সন্দেহ ভয় ও লজ্জার দ্বন্দ্বের ভিতর তাহাকে ঘুরিয়া মরিতে হইত না । মাকে বলিত, “মাগে, তুমি শিশুকালে যেমন অনায়াসে আমার সকল সমস্ত মিটিয়ে দিতে, আজ তেমনি করে শুধু মুখের উপর হাত বুলিয়েই আমার সকল সংগ্রাম শেষ করে দাও না ম৷ ” তাহ হইলে এক রাত্রির শাস্তির জন্যও তাঙ্গকে এমন করিয়া পলাইয়া বেড়াইতে হুইত না । বুলবুলের কথায় বিশ্বাস করিয়া গহনা দেখিতে চাহিতে সে কিছুতেই পারিবে না। প্রথম বিবাহের পর ভাড়ার হইতে চাকরকে মিষ্টি চুরি করিতে দেখিয়া কত দিন সে চোরের লজ্জার ভয়ে আপনি লজ্জিত হইয়া পলাইয়াছে, আজ সে ভাইকে চোর সন্দেহ করিবে কি করিয়া ? বাক্সের ভিতর ঐ গহনা দেখিতে পাওয়ার চেয়ে যেন তাহার অন্ধ হইয় যাওয়াই ভাল ! কিন্তু বাড়ি ফিরিবামাত্র স্বামী যখন ফাঁদ লইয়া মিলাইতে বসিবে তখনও ত মা ধরিত্রী তাহার এ পরম লজ্জা দূর করিতে বুকের ভিতর তাহাকে ভাকিয় লষ্টবেন না । স্বামী ত তাহার সকলের আগে কিছু না শুনিয়াই নিরঞ্জনকে চোর স্থির করিয়া লইবেন এবং বিধাঙা না করুন হয়ত চৌর্যের কিনারা করিতে এখানেই আসিয়া