পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ն8 তাহার চাবিও খুলিয়া দিল। নূতন খেলনা দেখিলে শিশু যেমন দুই চোখে তাহার মনের সমস্ত ক্ষুধা ভরিয়া ব্যগ্রভাবে সেই দিকে ছুটিয়া যায় তেমনি আগ্রহে হীরালাল দুইহাতে খ্যস্তভাবে বাঙ্গ দুটি জড়াইয়া ধরিল। গহনার পর গহনা বাহির করিতেছে আর তাহার চোখে লোভ ও বিস্ময়ের যুগল শিখা জলিয় উঠতেছে। হীরালাল হাতের আন্দাজে গহনাগুলির ওজন দেখিয়া একে একে রাখিতেছিল । প্রোমোশন প্রত্যাশী ছাত্রীর মত ভয়ে ভয়ে কল্যাণী এতক্ষণ নীরবে একদিকে বসিয়া ছিল ; সব গহনাগুলি দেখা হইতেই মধুর তৃপ্তির হাসি হাসিয়া বাক্স বন্ধ করিয়া সে সিন্দুকে তুলিতে চলিল। হীরালাল বাধা দিয়া বলিল, “কিন্তু মিলিয়ে ত দেখা হল না। দেখি কাগজখানা।" কল্যাণী সিন্দুকের চাবি লাগাইতে লাগাইতে বলিল, “সে সব হবে এখন পরে। সংসারে কত কাজ পড়ে রয়েছে দেখতে পাচ্ছ না?” চাবিটা ছিনাইয়া লইয়া হীরালাল বলিল, “কাজ থাকে তোমার আছে, মামার ত নেই। আমি মিলিয়ে নিচ্ছি, তুমি নিজের কাজ কর গিয়ে ।” কল্যাণী দরজার বাহিরে যাইতেই হীরালাল গজিয়া উঠিল, “ফর্দ কি করলে শুনি ? দেখতে পাচ্ছি না ত।” কল্যাণীর মুখখান এক মুহূৰ্ত্তে রক্তহীন হইয়া গেল । সে বাহির হইতেই বলিল, “আমি একটু পরে আসছি তুমি ততক্ষণ খোজ ।” মিনিট পনের পরে সে যখন ফিরিয়া আসিয়া চোরের মত সন্তপণে দরজার কোণ হইতে ভিতরে উকিমারিয়া দেখিল তখন হীরালাল স্বদখোরের স্বদ মিলানোর ভঙ্গীতে থাতাকলম লইয় ঝুঁকিয় পড়িয়া একটা ফর্দের পাশে ক্রমাগত দাগ কাটিতেছে। আরও কিছুক্ষণ দাড়াইম্বা কল্যাণী বুঝিল খাতায় গহনারই ফর্দ । ভয়ে ও বিস্ময়ে সে পাথরের মূৰ্ত্তির মত জমিয়া গেল। হীরালালই খানিক পরে সরোধে লাফাইয়া উঠিয়া বারান্দায় আসিয়া তাহার হাত ধরিয়া ঝাকি দিয়া তাহার চেতনা ফিরাইয়া দিল। রাগে তাহার চোখের রঙ গোলাপী হইয়া উঠিয়াছে, ভ্র দুটি বাকিয়া বিড়ালের পিঠের মত ফুলিয়া উঠিয়াছে । চটিয়া সে অকথ্য একটা গালি দিয়া বলিল, *হীরের গহনাগুলো কোন-কে দিয়ে এলে শুনি ?” কল্যাণী বলিল, “চল ঘরে গিয়ে দেখছি।” স্বরে জাসিয়া " প্রক: ; " SలBO লে ফর্দের খাতায় হাড় দিতেই হীরালাল বাঘের মত এক লাফ দিয়া আসিয় তাহাকে ঠেলিয়া ফেলিয়া দিয়া খাতাটা কাড়িয়া গর্জন করিয়া উঠিল, “ফের আমার খাতায় হাত দেবে ত আস্ত রাখব না । এক সের দুধ লোকসান ষাচ্ছিল তাই ক্সাকামী করে তার তদারক করতে আসা হল । এদিকে কত হাজার টাকা চুরি করে ওই জোচ্চোর ভাইটাকে দিয়ে আসতে এতটুকু বাধল না। কার হুকুমে গয়না তাকে দিয়েছিল, ফর্দ তাকে দিয়েছিস্ বল।” হীরালাল কল্যাণীর চুলের মুঠি চাপিয়া ধরিল। কল্যাণী গল নামাইয়া বলিল, "চুলটা ছাড়, অসভ্যতা করে। না। এখুনি কোথা থেকে কে এসে পড়বে। গয়না আমি কাউকে দিয়ে আসি নি। তুমি ভদ্রলোকের মত বস দেখি ।” “তুষ্ট যদি না দিয়ে থাকিস্ তবে সে হতভাগা চুরি করেছে, আমি লিখে দিতে পারি। আমি কালই উকিলের চিঠি দেব তার নামে, দেখি সে কেমন ফিরিয়ে না দেয় ।” কল্যাণী বলিল, “উকিলের চিঠি দেবে, কিন্তু ও ফর্দ ত তোমার নিজের হাতের লেখা। কোন উকিল ও ফর্দ দেখে তোমার চিঠি লিখতে যাবে ?” হীরালাল বলিল, “ তুমি ফৰ্দ্দ চুরি করেছ তোমাকে হয় এনে দিতে হবে, নয় সাক্ষী হতে হবে । আমি এমনি ছেড়ে দেব মনে করো না। হীরালাল শৰ্ম্মাকে কি এতদিনেও চেন নি ?” - কল্যাণী বলিল, “আমি প্রাণ গেলেও তোমাদের মোকদ্দমায় সাক্ষী হব না। দুই কুল উজ্জল করবার আর কি পথ পেলে না ?” - হীরালাল বলিল, “স্কুলর দুটিকে জোড়ে যখন পেয়াদায় ধরে নিয়ে যাবে তখন একটা ছেড়ে সাতটা প্রাণ গেলেও সাক্ষী না দিইয়ে ছাড়বে না। বাজে কথা আর জ্যাঠামি ছেড়ে এখন বল দেখি গয়না কি করলে ? ভাইকে যদি বাচাতে চাও স্পষ্ট কথাটি বলে । তুমি জান গয়না না পেলে আমি কোনে চেষ্টা বাকি রাখব না ?” ঢোক গিলিয়া গিলিয়া কল্যাণী বলিল, “নহরপুরের জমিদার বাড়িতে বুলবুলের বিয়ের কথা হচ্ছে, তারা দেখতে আপচে তাই খানচুই গয়না তাকে পরিয়ে দিয়ে এসেছি। ও আবার সময় মত একদিন আনলেই হবে ।” --