পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

হীরালাল মুখ বাকাইয়া বলিল, “পিসি বদান্তত করে সব চেয়ে দামী গয়না কখান না পরিয়ে দিয়ে পারলেন না ?” কল্যাণী বলিল, “ওই গুলোই তার বিশেষ পছন্দ, ছেলেমানুষ ! তা ছাড়া বড়ঘর থেকে দেখতে আসছে, খেলো গয়না পরালে নানা কথা উঠবে।" | • কল্যাণীর কথা না থামিতেই হীরালাল বলিল, “হ্য, হ্য, বাপ, মেয়ে, বেয়াই সবাই চালাক আছে বুঝেছি। বিধাত বুদ্ধি দেন নি কেবল তোমার ঘটে । তাই ফাদখানাও বড়লোক বেয়াইকে দেখাবার জন্যে দিয়ে এসেছ। বিনা ফর্দে তোমার ছোটলোক ভাই গম্বনা দেবে ভেবেছ ? ভাগ্যে আমি একটা নকল রেখেছিলাম, না হলে তোমার ভিজে বেরালের মত মুখ দেখে অত টাকা যে গেছে তাত জানতেই পারতাম না । সব জোচ্চোর, যেমন ভাই তার তেমনি বোন ।” কল্যাণী গত রাত্রে খায় নাই, আজও তাহার বাড়িতে অন্ন জুটিল না। হীরালাল বলিয়া দিয়াছে গহনা আদায় করিয়া না আনিলে আজ আর বাড়িতে স্নান আহার নাই। জলগ্রহণ না করিয়াই কল্যাণী আবার বাপের বাড়ি চলিল । জ্ঞাতির দল ভিড় করিম গাড়ীর কাছে আসিয়া দাড়াইল । মেজ বৌএর একি নুতন থেলা ? এই আসিয়া বাড়িতে পা দিল আবার এখনি বাপের বাড়ি চলিল ! বড়লোকের মেয়ের রঙ্গ বোঝা ভার ! গাড়ী বাহির হইয়া যাইতেই হীরালাল সমস্ত গহনা লইয়া ব্যাঙ্কে চলিয়া গেল । ঘরে ঢুকিতেই নিরঞ্জন বলিল, “কিরে পুলিস-পেয়াদা সঙ্গে আছে না কি ? সবাইকে বেঁধে নিয়ে যাবি ?”

  • কল্যাণী কাদিয়া ফেলিল, “দাদা, এমন করে তোমরা আমাক্স যন্ত্রণা দিও না। আমি আর সহ করতে পারি না ।"

নিরঞ্জন নরম হইয়া বলিল, “সাধ করে কি আর বলছি ? দশ হাজার টাকার গহনার কমে নহরপুর বিয়ে দেবে না বলছে, তার উপর নগর টাকা, বরাভরণ, খাওয়া দাওয়া সবই আছে। এদিকে আমার ত সন্ধল শুধু এই বাড়িট, আর তুই হাত উপুড় করে দুখান৷ গহনাও দিতে পারিস না s" দুই দিন অনবরত ভাবিয়া কল্যাণী এ সমস্ত মিটাইবার ফক্ট ক্ষকম উপায় ছিল সব মনে মনে নাড়িয়া চাড়িয়া দেখিয়ছে। সে ফর্দ ছিাড়াছে, মিথ্যা বলিয়াছে, কোনো ফল পায় মাই। শেষ চেষ্টার জন্য জাজ তার আসা । নিজেকে সম্বরণ করিয়া সে বলিল, “দাদা, আমার মায়ের বংশে বুলবুল ছাড়া আর কেউ নেই। এসব জিনিষ তার গায়েই মানায় কিন্তু এখুনি তাকে গহনা দেওয়া শিবেরও অসাধ্য। আমার অদৃষ্ট খারাপ না হলে তোমাদের মান রাখবার জন্যে এমন করে সর্বস্বপণ জামায় করতে হত না। তাতেও দেখছি কারুর কাছে কারুর মাথা উচু রাখতে পারলাম না; তুমিও আমায় বিশ্বাস করলে না, বুঝলে না; সেও ঠিক তাই। যাক, কোনো, কুলই ধখন রাখতে পারলাম না, আমার আর লজ্জা ভয় নেই। আমার সব গমন আমি লেখাপড়া করে বুলবুলকে দিয়ে যাচ্ছি, আমার মরার পরে তোমরা আদায় করে নিও। আজ গুৰু ওই কখান আমায় দাও, হাতে না করে আমি জলস্পর্শ করতে পাব না।” • , .” ঠোটের কোণটা নাবাইয়া হাদিয়া নিরঞ্জন বলিল, “তোমাদের ভোল্‌ বুঝি না বাপু । এও কি গয়না আদায় করবার একটা ফন্দি ? তুই মরবার পর আমি কি বেঁচে থাকৃব যে আমায় খৎ লিখে দিয়ে যাচ্ছিস্ ? আর গয়নাও ত ততদিনে বিক্রী হয়ে তোমার স্বামীর ব্যাঙ্কে টাকা হয়ে বাড়তে থাকবে, পাব কোথায় তা আমি ?” কল্যাণী বলিল, “আচ্ছা, তুমি দিও না। তবে যতক্ষণ না গয়না পাব ততক্ষণ আমার মুখে জলবিন্দু পড়ৰে না। আমার মায়ের পেটের ভাই হয়ে তুমি কেমন তা সহ্য কর আমি দেখব ।” বেলা বাড়িয়া চলিল। কল্যাণী মা’র ঘরেই বসিয়া দ্বিপ্রহরের আকাশের বারিহীন শুভ্ৰ মেঘের দিকে অপলকে চাহিয়া ছিল। মনটা চাহিতেছিল অমনি লঘু, জমনি ভারহীন স্থির হইয়া মুক্ত আকাশের বুকে পড়িয়া থাকিতে। মান মধ্যাদার ভয় জীবনের মায়া আজ তাহার ঘুচিয়া গিয়াছে। তাহার মনকে বাস্তবে ফিরাইয়া আনিল হীরালালের পদশা। ঘরে ঢুকিয়াই সে বলিল, “কি গে, এত দেরী ? এখনও কি করছ?” কল্যাণী চমকিয় উঠিয় দাড়াইল; দুই চক্ষু ভরিয়া হীরালালের লুদ্ধ ও ক্রুদ্ধ মুখের ছবি দেখিল ; “তুমি একটু দাড়াও আমি এখনি নিয়ে আসছি " ";