পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাতিক স্থাপন করিয়াছিল বটে, কিন্তু নিজেদের প্রতিভাবলে তাহারা নূতন কিছু আবিষ্কার করে নাই। তিনি একে একে গ্ৰীক প্রভৃতি সমস্ত প্রাচীন জাতির দাবি থগুন করিয়া এ বিষয়ে আরবদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিপন্ন করিলেন । তিনি বলিলেন, যদিও দুর্ভাগ্যক্রমে আমি আরব-বংশে জন্মগ্রহণ করি নাই, তবুও আরব জাতিকে জানিবার ও বুঝিবার সৌভাগ্য আমার হইয়াছে। মাওয়ালাদের মধ্যে বিদ্যাবুদ্ধি কৰ্ম্মকুশলতা ও সাহসে ইরানীরা ছিল অগ্রণী । ইহাদের সংখ্যাও ছিল অন্যান্য জাতীয় মাওয়ালাদের অপেক্ষ অনেক বেশী । সুতরাং ইসলামের ইতিহাসে আরব-মাওয়াল বিরোধ আরব ও ইরানীয় জাতির প্রাচীন শক্রতার নূতন রূপ,– সেমেটিক ও আর্য্যসভ্যতার অভিনব শক্তিপরীক্ষা বলা ঘাইতে পারে। ইরানীদের মধ্যে সকলেই ইবন্ত্ৰ-উল-মোকাপ ফার মত আরবী-ভাবে বিভোর, আরব-মাহায়ো মন্ত্ৰমুগ্ধ ও কায়মনে আরবভক্ত ছিল না । ইস্লাম গ্রহণ করিয়া অগ্নিউপাসক মুমূযু ইরানীয় জাতি পুনর্জীবন লাভ করিয়াছিল। আরব-বিদ্বেষ ছিল ইরানের এই নৃতন জাতীয়তাবাদের মূলমন্ত্র। ইরানী মাওয়ালাগণ রাজনীতিক্ষেয়ে ওষ্ট্ৰীয় যুগে অখণ্ডপ্রতাপ আরব-শক্তির বিরুদ্ধে মাথা তুলিতে পারে নাই। আরবের যাহাদিগকে তলোয়ারের জোরে জয় করিয়াছিল তাহারা কাগজে-কলমে এই পরাজয়ের প্রতিশোধ লওয়ার জন্য একটি আরব-বিদ্বেী বিদ্বৎসমাজ প্রতিষ্ঠা করে । ইহার নাম ছিল শু-উৰ্ব্বী, ইহারা সামাবাদী নামেও পরিচিত ছিল। ইসলামের সাম্যবাদ প্রধানত: মুসলমান সমাজ ও রাষ্ট্রে নিবদ্ধ ছিল । কিন্তু শু-উৰ্ব্বীরাই সৰ্ব্বপ্রথম প্রচার করিয়াছিল— শুধু মুসলমানের পরস্পর সমান নহে, মানুষ মাত্রই সমান। ইস্লাম অপেক্ষাও অধিকতর উদার এই সাম্যবাদ ছিল শু-উবীদের প্রতিপাদ্য বিষয়। আরবের বিরুদ্ধে পুথিবীর যে-কোন জাতির পক্ষে ওকালতী করা, আরব জাতিকে অস্তান্ত জাতির চেয়ে সভ্যত, জ্ঞান ও চরিত্রগুণে হেয় প্রতিপন্ন করাই ছিল সামাবাদীদের লেখনী-চালনার উদ্দেশ্য। আরবভক্ত ও আরববিদ্বেষী উভয় পক্ষেই ইরানীরা বাদপ্রতিবাদ চালাইত। লেখাপড়, চুলচেরা যুক্তিতর্ক ওীয় যুগের আরবের অবজ্ঞার চক্ষে দেখিত। এই দুই দলের 8 ૨ মুসলমান সভ্যভার স্থার ও প্রাচীন জ্ঞানচর্চা বিরোধ ও বাদপ্রতিবাদের ফলেই মুসলমানের দৃষ্টি প্রাচীন সভ্যতা ও জ্ঞানচর্চার প্রতি সৰ্ব্বপ্রথম আকৃষ্ট হইয়াছিল। আরবভক্তরা খলিফাগণকে লইয়া গৰ্ব্ব করিলে সাম্যবাদীরা ফেরায়ুন (পিরামিড নিৰ্ম্মাতাগণ), নিমরুদ, খসরু, সীজার, সোলোমন, আলেকজাণ্ডার এবং ভারতবর্ষের সম্রাটগণের কীৰ্ত্তি বর্ণনা করিয়া প্রতিপক্ষকে নিৰ্ব্বাক করিত। নবী রস্থলের কথা উঠিলে সাম্যবাদীরা বলিত-বাবা আদমের পর এক লক্ষ চব্বিশ হাজার রসুল-পয়গম্বরের মধ্যে হুদ ( Hud }, সালেহ, ইসমাইল ও হজরত মহম্মদ এই চারিজন মাত্র আরব-বংশে জন্মিয়াঁছেন। জ্ঞানে শ্রেষ্ঠতার তর্ক উঠিলে এক কোরাণশরীফেষ্ট আরবী-পাল্লা ভারী হইয়া উঠিত। আরবী-বিদ্বেষীরা এক্ষেত্রে সুবিধা করিতে না পারিয়া গ্রীক ও হিন্দু দর্শন, ইরানীয়, থলদীয় ও প্রাচীন মিসরের জ্যোতিষ, বিজ্ঞান ইত্যাদির নজীর উপস্থিত করিত। আরব্যোপন্যাসের স্বপ্নপুরী, আরব-বিক্রমাদিত্য খলিফা হারুণ-অল-রশিদের রাজধানী বাগদাদ নগরী ছিল মধ্যযুগে বিশ্বভারতীর প্রিয় নিকেতন। উদারচেতা ও মুক্তবুদ্ধি আব্বাসী খলিফাদের আশ্রয়ে গু-উৰ্ব্বীরা বিশেষ প্রাধান্তলাভ করে। ওীয়-বংশের ধ্বংস ও আব্বাসী খেলাফতের প্রতিষ্ঠা নবজাগ্ৰত ইরানী জাতির দ্বারাই প্রধানতঃ সাধিভ হইয়াছিল। এজন্য রাজংবশ আরব, রাজকীয় ভাষা ও ধৰ্ম্ম আরবী হইলেও আব্বাসী খেলাফতের প্রথম ভাগকে পারস্তপ্রাধান্তের যুগ বলা হয়। গু-উৰ্ব্বীদের প্রভাবে গোড়া মুসলমান সমাজের সন্ধীণতা বহু পরিমাণে দূরীভূত হওয়াতে এ-সময়ে মুসলমান সভ্যতা অতিদ্রুত উন্নতিলাভ করে। খলিফা মনস্কর হইতে মামুনের রাজত্বকাল পর্যন্ত (খৃঃ ৭৫৪– ৮৩৩) মুসলমান সভ্যতার স্বর্ণযুগ। যৌবনের উচ্ছম্বলতার অবসানে মুসলমান সমাজ এ-সময়ে প্রৌঢ়ত্বে পদার্পণ করিয়াছে। বাধাহীন জ্ঞানচর্চ ও স্বাধীন চিন্তার অবকাশ কিংবা প্রবৃত্তি ইহার পূৰ্ব্বে মুসলমানদের মধ্যে দেখা যায় নাই। বালক ও প্রবণের মনোবৃত্তি, জ্ঞান ও চিন্তাশক্তির যতখানি তারতম্য, আব্বাণী খলিফার একজন দরবারী আলেম্ (পণ্ডিত) এবং প্রথম চারি খলিফার সমসাময়িক একজন আনসার অর্থাং মদিনাবাসীর মধ্যে এ-সমস্ত বিষয়ে ততখানি তফাৎ ছিল বলিলেও আভুক্তি