পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খাসিয়ারা মাতৃপ্রধান জাতি। তাদের মধ্যে স্ত্রী হচ্চেন সম্পত্তির অধিকারিণী এবং পরিচালিকা। স্বামী বিয়ের পর স্ত্রীর বাড়িতে আসেন। সন্তানসন্ততিগণ তাদের নামের শেষে মায়ের উপাধি গ্রহণ করে। খাসিয়া ভাষায় একটা প্রবাদ ST55“long jaid na ka kynthei" soff, F Corso জাতি। সমগ্র খাসিয়া জাতি বিভিন্ন বৃহৎ বহিবিবাহক (exogamous) গোষ্ঠীতে বিভক্ত, অর্থাং কোন গোষ্ঠীর লোক সেই গোষ্ঠীতে বিয়ে করতে পারে না। সাধারণতঃ শিশুসন্তান, তাদের মা এবং মাতামহীকে নিয়েই খাসিয়া পরিবার। বিয়ের আগে পুরুষ যা রোজগার করবে তার উপর অধিকার তার মায়ের । আর বিয়ের পর যা রোজগার করবে তার উত্তরাধিকার হচ্চে স্ত্রীর এবং সত্তানের । এই সস্তানের মধ্যে আবার প্রথম দাবি কঙ্কার । সাধারণতঃ বর-কনের মত-অমুসারে বিয়ে স্থির হয়। বর মেয়ের নাম নিজের বাপকে জানিয়ে দেয় । বরের বাবা আবার এই বিষয় মেয়ের বাপকে জানায় এবং মেয়ের যদি কোন আপত্তি না থাকে তবে পাকা কথাবাৰ্ত্ত স্থির হয় এবং তার পর বর একদিন কন্যার বাড়িতে গিয়ে বিয়ে ক’রে নিয়ে আসে। বিবাহ-বিচ্ছেদ খাসিয়াদের মধ্যে অতি সাধারণ প্রথা। একজন স্ত্রীলোক ত্রিশবার স্বামী বদল করেছে এমন দৃষ্টান্তও আছে। স্বামি-স্ত্রীর মধ্যে যে-কোন রকমের মনোমালিন্ত হলেই বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়। এ-বিষয়ে অবশু স্বামীর ইচ্ছার চেয়ে স্ত্রীর ইচ্ছারই মূল্য বেশী । খাসিয়া ভাষায় উ ব্লেই (u Blei) শব্দ ভগবান-অর্থবাচক। নমস্কারের প্রতিশব্দ রূপে ওরা বলে খুরেই (Khublei) অর্থাৎ ভগবানের আশীৰ্ব্বাদ আপনার উপর বর্ধিত হোক। খাসিয়াদের ধৰ্ম্মকে হিন্দুধৰ্ম্ম বলা যায়, কিন্তু তার মধ্যে কুসংস্কারই সৰ্ব্বপ্রধান। মৃত পূৰ্ব্বপুরুষের প্রেতাত্মার পূজা, ভূতের উদ্দেশে পূজা এবং বলিদান-এই সব এখনও এই জাতির মধ্যে প্রচলিত দেখতে পাওয়া যায়। থেলন নামক এক কাল্পনিক সাপের পূজা এরা করে শুনতে পাই। জনশ্রুতি এই যে, এখনও এই সর্পরাজের সাম্নে এরা নরবলি দেয়। এর সত্য মিথ্যা নির্ধারণ করা শক্ত। তবে এই পৰ্যন্ত বলা যায় যে, এপ্রিল, মে এবং জুন মাসে খাসিয়ারা সন্ধ্যার পরে এই ংস্কজেহাচড়; § - £3 রক্তাম্বেষীদের ভয়ে খয়ের বার হয় না। মাকের মধ্যে দিয়ে রবারের নল লাগিয়ে মস্তিষ্ক থেকে রক্তমোক্ষণ করা ন-কি এই পূজার রক্ত-সংগ্রহের একটি অঙ্গ । খাসিয়ারা মৃতদেহ দাহু করে। স্বৰ্গ সম্বন্ধে খাসিয়াদের বিশ্বাস বেশ মজার। কেউ মরে গেছে এই কথা বোঝাতে হ’লে তারা বলে, অমুক ভগবানের বাড়িতে পান খাচ্ছে । কারণ খাসিয়ার ভয়ানক পান খায় এবং অফুরন্ত পান খেতে পাওয়াই তাদের কল্পনায় সবচেয়ে বেশী স্বথ । যেমন আমেরিকার লাল ইণ্ডিয়ানরা বলে যে স্বর্গে চমৎকার চমৎকার শিকারের জায়গা আছে । খাসিয়াদের উপজাতি সিন্টেংদের মধ্যে 'কে টারোহ ’ নামে দেবীকে পূজা করার প্রথা আছে। আমাদের শীতলাদেবীর মত এই দেবী বসন্ত রোগের অধিষ্ঠাত্রী। কারুর বসন্ত হ’লে এরাও বলে দেবীর কৃপা হয়েচে এবং সেটা এদের মতে খুব সৌভাগ্যের লক্ষণ, কেননা এরা বিশ্বাস করে বসন্ত রোগী ঐ দেবীর চুম্বন পায়। এই কারণে বসন্ত রোগীর বাড়ি এর পবিত্র বলে মনে করে এবং কেউ কেউ ইচ্ছা ক’রে নিজের শরীরে বসন্ত রোগ সংক্রমিত করেছে এমন দৃষ্টান্তও আছে । খাসিয়া জয়ন্তিয়া পাহাড়ে খৃষ্টান পাদ্রীদের আবির্ভাবের পূৰ্ব্বে খাসিয়াদের কোন লিখিত ভাষা ছিল না। কিন্তু একটা মজার ব্যাপার এই যে, কোন কোন জায়গায় খাসিয়া ভাষা বাংলা হরপে লেখা স্বরু হয়েছিল, এ রকম প্রমাণ পাওয়া যায় । খাসিয়াদের দলিলপত্র বাংলা অক্ষরে লেখা কোন কোন জায়গায় দেখা গেছে । ওয়েলশ মিশনের পাত্রীরা ওদেশে রোমান বর্ণমালার সাহায্যে খাসিয়া ভাষা লেখা প্ৰবৰ্ত্তন করেছেন। পূৰ্ব্বেই বলেছি, এর প্রায় এক-শ বছর ধরে ধৰ্ম্মপ্রচারের কাজে ঐ পাহাড়ে আছেন। কিন্তু ভাষার ভিতর দিয়ে ধৰ্ম্মপ্রচারই এদের উদেশ্ব বলে ভাষার কোন উন্নতি হয় নি। খাসিয়া ভাষায় বাইবেল তর্জমা করা হয়েছে এবং বাইবেল-সংক্রান্ত আরও দু-একখানা বই লেখা হয়েছে। মিশনরি-পরিচালিত দু-একথান ছোট ছোট মাসিকপত্রও আছে, কিন্তু সে কেবলমাত্র ঐ ধর্শের কথাতেই বোঝাই । এর ফল হয়েছে এই যে, খাসিয়াদের যে একটি নিজস্ব জাতীয় চিন্তার ধারা, শিক্ষা এবং