পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

See বাঙালী বলে অবশু গৌরব বোধ করবার কিছু নেই, কেন-ন, বাঙালীর কোন গৌরবই তিনি বহন করেন না, অপর পক্ষে গাজা এবং অনুরূপ প্রক্রিয়ায় তার অত্যাসক্তি । কিন্তু তবুও এই গ্রামের নেংটি-পরা লম্বা চুলওয়ালা রুক্ষদর্শন লোকগুলি একে খাতির করে এবং সন্ধ্যার সময় সকলে মিলে বাংলা ভাষায় কীৰ্ত্তন করতে বসে, যে ভাষার এক বর্ণও তারা বোঝে না এবং ন-বুঝে আরুত্তি করে ব’লে ভাষাও বিকৃত হয়ে গেছে। এই পাহাড়ের অন্তরশমিত গ্রামখানিতে এখনও দুর্গাপূজা হয় এবং সপ্তমী পূজার দিন সকালবেলা জাতিবর্ণনির্বিশেষে সকলে শাখ বাজায়। এই শঙ্খধ্বনি পাহাড়ের কোলে প্রতিহত হয়ে হয়ে ঐ চতুসীমার মধ্যেই প্রতিধ্বনিত চয়ে ঘুরে বেড়ায় । এভক্ষণ আমি চেরাপুঞ্জির কথা বলেচি, এইবার শিলঙের কথা বলে প্রবন্ধ শেষ করব। শিলঙের প্রাকৃতিক দৃপ্ত এবং পাইন গাছের বর্ণনা নতুন করে করবার দরকার নেই, বহু ভ্ৰমণকাহিনীর লেখক সে-কাজ আগেই করেছেন । আর শিলং যে একটি স্বাস্থ্যনিবাস সে-কথাও সকলের বিদিত । অতএব সেখানকার নৈসর্গিক দৃশ্বের কথা বলব না । শিলং পিকের উপরে উঠে চারি পাশের পাহাড়গুলির একসঙ্গে একটি পরিপূর্ণ দৃপ্ত দেখতে পাওয়া যায়। এক পাশে নজরে পড়ে চেরাপুঞ্জি যাওয়ার সাদা পথটি সাপের মত একে-বেঁকে ক্রমশঃ পাহাড়ের কোলে মিশিয়ে গেছে । আর এক পাশে খাসিয়াদের একটি নিভৃত পল্লী যেখানে বাজার নেই, হাট নেই, দোকানপসারী নেই, নিত্যপ্রয়োজনীয় আহাৰ্য্য দ্রব্য কিনতে যাদের বহু পথ অতিক্রম করে শহরে আসতে হয় এবং গাড়ী বোঝাই ক’রে মাসখানেকের মত রসদ সংগ্রহ করে নিয়ে যেতে হয়। আধুনিক সভ্যতাকে তুচ্ছ ক'রে তবু এই পল্লীবাসীরা বেঁচে আছে এবং পাহাড়ের বুক খুঁড়ে তারই ভিতর আলু এবং ধানের চাষ করছে। শিলঙের দু-একটা জিনিষের কথা আমি কিন্তু কোনদিন ভুলতে পারব না। প্রথম হচ্চে সেখানকার পাইন বৃক্ষের সমারোহ—যেদিকে তাকাই পাহাড়ের গা জুড়ে দীর্ঘ পাইনের বন বাতাসে সে। সে করচে। এর প্রাচুর্যের যেন আর শেষ নেই—ছোট, মাঝারি এবং বড় সব রকম মাপের গাছে পাহাড় বোঝাই। জাঙ্গুয়ারি ফেব্রুয়ারি মাসে যখন খুব

  • বাস- ?

ఏరBO বাতাস হয় তখন রাস্তার লাল খুলে উড়ে পাইন গাছগুলিতে লেগে লেগে তাদের চেহারা একেবারে লাল হয়ে যায়— যেন এখনই হোলি খেলে উঠল। আর মনে থাকবে লাটসাহেবের বাড়ির পাশে হ্রদের কথা। পাচ হাজার ফুট উচুতে জলাশয় যে স্থলভ নয় সে-কথা আন্দাজ করা সহজ। তবু এখানে একটি হ্রদের স্বষ্টি হয়েচে। এই হ্রদের পুরো নাম ওয়ার্ডস্ লেক—আসামের চীফ কমিশনার স্তর উইলিয়াম ওয়ার্ডের নামানুসারে । হ্রদটি দেখতে খুব স্বন্দর। শিলং থেকে চেরার পথে ৫ মাইল গেলে আপার শিলঙে পৌছান যায়। শিলং থেকে আপার শিলং আরও উচু এবং সেখানে শীতও বেশী। খুব গরমের সময় শিলঙের টেম্পারেচার ৮০ ডিগ্ৰী হয় এবং খুব শীতে ২৭ পর্য্যস্ত নামে। তখন বরফকণা পড়ে। শিলঙের জনসংখ্যা ১৯৩১ সালের আদমসুমারী অনুযায়ী ২৬৫৩৬। আপার শিলঙে একটি উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সরকারী কৃষিক্ষেত্র। এক বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে এই ফাৰ্ম্ম স্থাপিত । সেখানে আলুর চাষ হচ্চে দেখলুম এবং কৃত্রিম উপায়ে তা দিবার যন্ত্রের মারফৎ ডিম থেকে বাচ্চ ফোটান হচ্ছে । সেখানে ২৭টি গরু, ৪টি ষাড়, ৩১টি বাছুর, ২৩টি বল, ২টি টাটু, ঘোড়, ৩৭টি ছাগল এবং ৮টি ভেড়া আছে। একটি গাই ২২ সের পর্যন্ত দুধ দেয় । ওখানে গরুর এবং ছাগলের খাটি দুধ পাওয়া যায় এবং এই ফাৰ্ম্মটি আসাম-সরকারের একটি বিশেষত্ব । শিলং থেকে নাম্বার পথে গৌহাটি। গৌহাটির কামাখ্যা মন্দির হিন্দুদের এক প্রসিদ্ধ তীর্থস্থান। বলা বাহুল্য, কামাখ্যা পৰ্ব্বত শিলঙের উচ্চতার তুলনায় কিছুই নয়-- এই পৰ্ব্বতের সবচেয়ে উচ্চ চুড়ায় ভুবনেশ্বরীর মন্দির এক হাজার ফুট উচু। কালিপুর আশ্রম ৪০০ ফুট উচু, কামাখ্যা দেবীর মন্দির ৮০০ ফুট । মন্দিরের ভিতর দারুণ অন্ধকার । প্রদীপের ভীরু আলোকে সাহায্যে অনিশ্চিত পদক্ষেপে ওঠা-নাম করতে হয় । নীলপৰ্ব্বতে দেবীর মন্দিরের একটি ছবি এই সঙ্গে দিচ্ছি। এর মধ্যে চারু এবং কারু শিল্পের ভূয়ো ভূক্ষ প্রমাণ আছে এমন মনে হয় না। কামাখ্যা মন্দিরের পাণ্ডাদের ব্যবহার আমার সবচেয়ে ভাল লাগল । যাত্রীদের কাছ থেকে জুলুম করে পয়সা নেওয়ার অভ্যাস