পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পাওয়া যায়। বাড়ির আর কেউ তা লক্ষ না করলেও, ঠাকুমার চোখ এড়ায় নি, তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, খেলা এখন শিশুর সহজ ও স্বাভাবিক আত্মবিকাশের সহায়তা পুতুল তৈরি করে ফেলেন। শুধু পুতুলই নয়, নানা পশুপক্ষীও গড়ে দেন। আমাদের মনে হয়, এই পুতুল গড়ার ধারা বন্ধ প্রাচীন। অতীতের কজন প্রাচীন স্থতির আভাস পাওয়া যায় করবে। কিন্তু তিনি এমন একটি খেলা বাতলিয়ে দিলেন এই পুতুলগুলির মধ্যে। ঠাকুমার গড়া এই পুতুল কিংবা যাতে শিশুর বেগ পেতে না হয়—যে খেলা অনুকরণ করেই শিখতে পারবে । শিশুরা এখন খুটিমুচি নিয়ে খেলা করে। ঠাকুম নারিকেলের ডগা দিয়ে একটি টেকী তৈরি করে দিয়েছেন। ছোট ছেলেরা বন থেকে বাজার করে আনে জার মেয়ের রাধাবাড়া করে। সেই মাটির ভাত মাটির পিঠে নিমন্ত্রিত বনের গাছগুলিকে খেতে দেয় । এ সবের তদারক কিন্তু করছেন ঠাকুমা । তিনি রাধাবাড়ার কাজে ভুলচুক ঠিক করে দিয়ে কে কোথায় বসবে তাও ব’লে ििटळ्न । এর পরের অবস্থায় শিশুদের আর একটি মাত্র বিষয় নিয়ে থাকতে দেখা যায় না, হাজার রকম খেলায় তাদের অম্বুরাগ দেখতে পাওয়া যায়। ঠাকুমা এখন তাদের পুতুল খেলার জন্ত পুতুল গড়ে দিচ্ছেন, এই পুতুল গড়তে গায়ের ঠাকুমারা একেবারে সিদ্ধহস্ত । দু-মিনিটের মধ্যেই একটি মাটির চেলাকে এখানে ওখানে একটু টিপে দিয়েই স্বন্দর একটি আহ্বাদী পুতুল পশুপক্ষীর মধ্যে এমন একটি ভঙ্গী দেখতে পাওয়া যায় যা আধুনিক কোন পুতুলেই দেখতে পাওয়া যায় ন ছেলে-মেয়েরা ' পুতুলের বিয়ে দেবে, ঠাকুমা যে ক'নে-পুতুলটি গড়বেন তার সারা গায়ে মাটির গয়না দিয়ে ভরে দেবেন। এই পুতুলগুলি আবার যাতে সহজে ভেঙ্গে না যায় সে জন্তে ছাইয়ের আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ঠাকুমা বোঝেন, কত সময় আগুনে রাখলে পুতুলটির লাল রং হবে অথবা কাল রং হবে । শিশুরা এখন পাচ-ছয় বছরের হয়েছে, এ সময় তাদের মধ্যে কল্পনা বিলাসী শিশুমনের স্পর্শ পাওয়া যায়। তার। এই সময়ে নানারূপ অদ্ভুত, রোমাঞ্চপূর্ণ পরীর গল্প রাহ্মসের গল্প শুনতে অত্যন্ত ভালবাসে । আজ বাংলা দেশে যে ঠাকুমার ঝুলি, ঠাকুমার গল্প, ঠাকুমার থলে— কত আবিষ্কার হয়েছে, কেউ যেন মনে না করেন যে, এ গল্পগুলি ঢাকঢোল নিয়ে প্রকাশু স্থানে যাত্রা গান ইত্যাদির অন্নুরূপ করা হয়। ঘরের কোণে বসে মালা জপতে জপতে ঠাকুমা এই সব শিশুদের নিয়ে গল্পগুলি ক’রে থাকেন । রাক্ষসখোক্ষসের গল্পে তাদের কল্পনাশক্তিকে আরও বাড়িয়ে তোলেন। ঠাকুমা শুধু তাদের সামনে এই অপূৰ্ব্ব রূপকথা দিয়ে মায়াপুরীই হষ্টি করে ক্ষান্ত হন না, যাতে তাদের বাস্তব জীবনের সঙ্গে পরিচয় ঘটে, সেজন্য কত খুল্লনার বারমাসী, কত কাঞ্চনমালার যোগিনীর বেশ, কত সওদাগরের নদীর ঘাটে নৌকা ভিড়ানে—গল্পের ভিতর দিয়ে তাদের সামনে একটি জীবন্ত রূপ ফুটিয়ে তোলেন । এই সব গল্পে পারিপার্থিক অবস্থায় শিশুর মন শুধু সহানুভূতিতেই ভরে উঠত না,