পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

oు ীে প্রবাসী ; SనDBO ঠাকুমার এই সব আলপনা প্রায়ই গ্রাম্যজীবনের পারিপার্থিক অবস্থা থেকে গৃহীত। এই সব আলপনায় মানুষ পার্থী মাছ গাছ হাতী ঘোড়া চন্দ্র-স্বৰ্য্য-তারা, এমন । কি, হাট-বাজার রান্নাঘর ইত্যাদি সবই আঁকা হয়। ঠাকুম তাদের মধ্যে একটু একটু করে ধৰ্ম্মভাবও জাগিয়ে তুলছেন। কলাগাছের ডাটা দিয়ে কালীঠাকুরুণ তৈরি করে দেন, এই কালীঠাকুরুণ মেয়ের পূজো করে। প্রতি মাসেই একটি নএকটি ব্রত ঠাকুমার লেগেই আছে । কত ইতুরাল, মঙ্গলচণ্ডী, অরণ্যষষ্ঠীর ব্ৰতকথা তাদের সামনে বুঝিয়ে বলছেন। যে-বাড়িতে ঠাকুমা আছেন সে-বাড়িতে লক্ষ্মীপূজার আল্পনা সৰ্ব্বাগ্রে ঠাকুমাই দিবেন : ঘরের মেঝেতে লক্ষ্মীর পদ্ম ও পা এবং ঘরের দেয়ালে কিংবা খামে অথবা লক্ষ্মীসরায় লক্ষ্মী একে দিলে পর ছেলেমেয়েরা সৰ্ব্বত্র লক্ষ্মীর আলপনা দিবে ঠাকুমারা এইসব লক্ষ্মীর আলপনা, কুলাচিত্র, সরাচিত্র, পিড়িচিত্র করতে গ্রামের মধ্যে সবচেয়ে ওস্তাদ, পদ্ম আঁকবার খুব সোজা কতকগুলি নিয়ম তাদের জানা আছে,—সেই নিয়মানুসারে পদ্ম কিংবা লতা চটপট একে ফেলতে পারেন। এই সব পদ্মের কিংবা লতার আবার কত সুন্দর নাম। পানপদ্ম', 'শতদল-পদ্ম, স্থলপদ্ম’, ‘শঙ্খচূড় লতা, গুজীলতা, ‘মোচালতা,’ ‘কলমীলতা' । ঠাকুমারা ছবি আঁকতে এত ওস্তাদ যে, কোন চিত্র করতে নিয়ে গেলেই, প্রথমে যে রংটি যেখানে বসবে তারপর অন্তান্ত রং কিংবা রেখা যথাস্থানে বসিয়ে দুই-তিন মিনিটের মধ্যেই একটি সম্পূর্ণ ছবি একে ফেলতে পারেন। কিছুদিন আগে ঐযুক্ত রমাপ্রসাদ চন্দ মহাশয় ‘দুর্গাপূজ” প্রবন্ধে আক্ষেপ করে বলেছিলেন যে, বাঙালী অত্যস্ত ভাবপ্রবণ বলে তার দুর্গাকে শক্তিরূপে গ্রহণ করতে পারল না, তার সঙ্গে জুড়ে দিল ছেলেমেয়েতে পরিপূর্ণ একটি সংসারের দৃপ্ত । কিন্তু তিনি যদি ঘনিষ্ঠভাবে গায়ের ঠাকুমাদের সঙ্গে পরিচিত থাকতেন তবে দেখতে পেতেন সরার উপর ঠাকুমার দুই-তিন টানে কিরূপে মহিষাক্ষর লধোদ্যত শক্তিরূপিণী দশভূজা একে ফেলেন। মনে হয়, এই ঠাকুমাদের কাছ থেকেই বোধ হয় উৎসাহ পেয়ে বাংলা দেশের অনেক মন্দিরে এরূপ শক্তিরূপিণী দুর্গার মূৰ্ত্তি আঁকা সম্ভব হয়েছিল। শুধু দুর্গা নয়, সরার উপর যে সব রাধাকৃষ্ণের যুগলমূৰ্ত্তি একে থাকেন তার মধ্যে ঠাকুমাদের একটি নিজস্ব স্বম্পষ্ট ভাব আছে । ঠাকুমাদের আঁকা রাধাকৃষ্ণের সঙ্গে নলিয়া গ্রামের এই রাধারুষ্ণের হুবহু মিল দেখা যায়। এখানে রাধার ভঙ্গী কিরূপ অপূৰ্ব্ব, স্বমোহন, চোখে মুখে সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গে একটি গভীর তৃপ্তির আভাস, প্রাণের অফুরস্ত আনন্দের অনাবিল স্রোতের ঢেউ তার স্বকোমল বাহু দুটির একটি অপূৰ্ব্ব ভঙ্গীতে। ঠাকুমাদের অসীম ধৈর্য্য দেখতে পাওয়া যায় কাথা শেলাই, সিকে, তকৃতি অথবা আমসত্বের ছাচ তৈরি করতে। মাটি পুড়িয়ে কিংবা পাথর খুদে নানা রূপ লতাপাতায় ঠাকুমার এই সব ছাচ তৈরি করেন এবং তাইতে আমসত্ব দিয়ে থাকেন। আমসত্ব দেওয়ার দিন যদি বৃষ্টি হয় তবে ঠাকুমা একমনে বলে যান রৈদ দে রে রৈদানী চান্দের মার বকের হাত, কলাতলীয় গলা জল চচ্চর্যায়া ৰ্বৈদ পড়, । চাউলের গুড়ার দুই-তিন টানের আল্পনায় যে-সব জোড়া মাছ, পাখী, পুরুষ-স্ত্রী, শিবদুর্গার যুগল ছবি আঁকা হয় তা ঐক্য ও ভালবাসার প্রতীক। এসব ছবি আঁকা তিনি মেয়েদের শিখিয়ে দিচ্ছেন, কারণ তিনি জানেন আজ ছেমীর এদিক ওদিক কাল ছেম্রীর বিয়ে, ছেম্রীকে নিয়ে যাবে ঢাকের বাড়ি দিয়ে । মা কান্দবেন, মা কালবেন ধুলায় লুটিয়ে ।