পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

খুব মিল হবে ; আর যদি ও ছুটি পৃথকভাবে ঘুরতে থাকে তবে ঠাকুমার গালাগালির চোটে তাদের দুজনের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে ওঠে। বর যখন বিয়ে করে বাড়ি ফিরল, পাড়াপরশী সবাই তাদের দেখে আনন্দ করছে। ঠাকুমার কিন্তু এক ঋও বসবার সময় নেই, তিনি রান্নাঘরের আবর্জন এক জায়গায় জড়ো করে তার মধ্যে একটি টাকা লুকিয়ে রেখেছেন ; বউ এগেই সেই আবর্জন পরিষ্কার করে টাকাটি ঘরে নিয়ে আসবে। ঠাকুমা বউমাকে শিক্ষা দিচ্ছেন যে, আবর্জনার মধ্যে থেকেও কিরূপে ঘরে লক্ষ্মী আনতে হয়। দ্বিতীয় বিবাহের সময় ঠাকুমার আর মনে আনন্দ ধরে না । নিজেই দৈবকঠাকুর’ প্রহসনে, দৈবকঠাকুর সেজে গান ধরে দিয়েছেন, "এলে রে দৈবকঠাকুর ভাঙধুতরা খেয়ে কস্তার মা দেয় ন! জাগা পাগল পাগল বলে লে| পাগল পাগল বলে |’ বাস্তবিকই ঠাকুমা দৈবকঠাকুর প্রহসনে পাগল হয়ে যান। শ্ৰীযুক্ত গুরুসদয় দত্ত মহাশয় যখন সিউড়ীতে বিবাহের নৃত্যের জন্য নলিয়া গ্রাম থেকে জন কয়েক মহিলা এনেছিলেন তার মধ্যে একজন ঠাকুমা ছিলেন। দৈবকঠাকুর প্রহসন দেখে তিনি বলেছিলেন যে, এরা ত ঠাকুম নয়। SLBෆ আমাদের দেশে এ ষে আবার বড়াই বুড়ী ফিরে এসেছে ! তার ভাঙা ছাতি, লাঠি নিয়ে গুণে পড়ে বলে দিচ্ছেন বউমার কয়টি ছেলে কয়টি মেয়ে হৰে । আবার ঠাকুম নতুন করে ঘরসংসার পাতলেন কিন্তু এর মধ্যে ঠাকুমার আর সেই আগেকার আনন্দ নেই। ক্লার সহজ সরল চিন্তার সঙ্গে এদের চিন্তা- ধারার মোটেই খাপ খায় না । তিনি ভাবী নাতিনাতিনীর আশায় বসে বসে যখন মালা জপতে থাকেন তখন বউমারা এসে গল্পের আবার ধরলে কোন রকমে দু-একটি গল্প শেষ করেই ঠাকুমা বলে ওঠেন, “আমার কথাটি ফুরোল নটে গাছটি মুড়োল, কেন রে নটে মুরোলি ? গর কেন থায় { কেন রে গরু খাস 8 দুধ কেন হয় না । কেন রে দুধ হ’স না ? বাছুর কেন খায় না । কেন রে বাছুর থাস না ? ভাত কেন দেয় না । কেন রে ভাত দিস না ? গোপাল কেন আনে না । কেন রে গোপাল আনিস্ না ?-- গোপালের জীবন এখন পৃথিবীর বিরাট কৰ্ম্মক্ষেত্রে ব্যস্ত, ঠাকুমার কথা কেন ফুরিয়ে আসছে তা তিনি নিজেই বলে দিলেন। একদিন সত্যি সত্যিই এমনি করে ঠাকুমার কথা যখন সম্পূর্ণ ফুরিয়ে আসে তখন তারই হাতেগড় বাংলার ছেলেমেয়েরা তার জন্য চোখের জল না ফেলে তাকে নিয়ে আনন্দে হল্লা করতে করতে ছুটে চলে ওই শ্মশানঘাটের দিকে । এই প্রবন্ধের রেখাচিত্রগুলি ইকুলজারঞ্জন চৌধুরী কর্তৃক অঙ্কিত।