পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাতিক ফিরিয়া চাহিবে না। মহেন্দ্রবাবুর এই সিমপ্লিসিটটা বড়ই মনোহরণ করিল। এক বৎসর ত পূর্ণেন্দু তাহার সহকারীর কাজ করিয়াই কাটাইয়া দিল। দ্বিতীয় বৎসর সোজা কে বুঝিলে মহেন্দ্রবাবু নিজে না গিয়া অনেক জায়গায় একলা পূর্ণেন্দুকেই পাঠাইতে লাগিলেন। কালে যে তার বহুবিস্তৃত প্রাকৃটিস্ এই যুবকের হাতেই আসিয়া পড়িবে সে-বিষয়ে কাহারও সন্দেহ রহিল না । মহেন্দ্র চৌধুরীর এক ভাগিনেয় ছিল ডাক্তার। মামার এই পক্ষপাতিত্বটা তাহার বড়ই চোখে লাগিল। মায়ের কাছে গিয়া নালিশ করিতেও সে ছাড়িল না । দিদি সুযোগ বুঝিম একদিন সশরীরে ভাইয়ের বাড়ি আসিয়া হাজির দুপুরবেল ঘণ্ট-দুই মাত্র ভাঙ্গকে বাড়িতে দেখা যায়, সুতরাং খাওয়ার সময়ই কথাটা পাড়িতে হইল । ভাইয়ের আসনের কাছে একথানা পিড়ি টানিয়া লইয়। বসিয়া দিদি বলিলেন, “ষ্ঠ্য রে. একটা কথা শুনলুম, সত্যি ?” মহেন্দ্র বাবু ভাত মাখিতে মাধিতে গম্ভীরভাবে বলিলেন, “কি কথা তা না জানলে সত্যি কি মিথো কি ক’রে বল্ব ?” দিদি বলিলেন, “তুই নাকি তোর সব প্রাকৃটিস্ কোন এক পূর্ণেন্দু বলে ডাক্তারকে দিয়ে দিচ্ছিস্ ? ভাগ্রেটার জন্যে কিছু রাগবি না ?” ভাগিনেয় সমরের উপর মহেন্দ্রবাবু একেবারে খুশী ছিলেন না । সে অতিরিক্ত টেরি কাটে এবং এখনই তাহার দরজীর দোকানে ধার জমিয়া গিয়াছে। পাসও অতি কায়ক্লেশে করিয়াছে, ছোড়ার কোনো গুণই নাই । দিদির কথায় ডাক্তার চটিয়া গিয়া বলিলেন, “প্রাকৃটিস্ ত মামার বাড়ির মোয়া নয় যে ভাগ্নে বলে আদর ক’রে দিয়ে দেব ? যোগ্যতা থাকলে নিজেই পাবে।” ভাজের সঙ্কেত উপেক্ষা করিয়া দিদি আবার বলিলেন, “কেন আমার সমর কি ডাক্তারী পাস দেয়নি ?” মহেন্দ্রবাবু চেচাইয়া বলিলেন, “তোমার ছেলেকে ঘোড়ার ডাক্তারী বড়জোর করতে দেওয়া যায়, তার বেশী না । সেদিন মানুষ খুন করতে করতে বেঁচে গেছে, এক বুড়ীকে ‘মফিয়' দিয়ে সাবড়েছিল আর কি, ভাগ্যে গিয়ে পড়েছিলাম।” দিদি রাগে গজ-গজ করিতে করিতে উঠিয়া গেলেন । সমর তখন হইতেই পূর্ণেন্দুর চিরশত্রুতে পরিণত হইল। > (t হঙ্গলেন । কনে দেখা లి পূর্ণেন্দুর কপাল হঠাৎ আরও খুলিয়া গেল। মহেন্দ্র বাবু, হঠাৎ নিজে অনুস্থ হইয় পড়িলেন । এতকাল এমন পূর্ণ উদ্যমে খাটিয়াছেন যে, শরীর এখন বিশ্রামের জন্য বিদ্রোহ করিতে লাগিল। নিতান্ত বিপদ দেখিয়া ভদ্রলোক ছমাসের জন্য পাহাড়ে গিয়া থাকাই ঠিক করিলেন। সকলেই আশা করিয়াছিল যে কোনো একজন প্রতিষ্ঠাবান চিকিৎসকের হাতে তিনি নিজের কাজের ভার দিয়া যাইবেন । তাহা না করিয়া যখন তিনি পূর্ণেন্দুকেই সব-কিছুর ভার লইতে অন্তরোধ করিলেন, তখন বাড়ির লোক স্বদ্ধ ভড়কাইয়া গেল। " গৃহিণী বললেন, “হ্যা গা ও পারবে, ছেলেমানুষ ?” কৰ্ত্ত বলিলেন, “ভাল ডাক্তার হলেই হ’ল, বুড়েীতে কি দরকার ?" যাইবার সময় পূর্ণেন্দুকে বলিলেন, “আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিস্ত মনেই যাচ্ছি, জানি তোমায় দিয়ে কাজের কোনো ক্ষতি ব। গোলমাল হবে না। এক সেই পাগলী জমিদারের বাড়ির কেস এলে গোলযোগ বাধতে পারে।” - পূর্ণেন্দু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞাসা করিল, “কেন ?” মহেন্দ্র বাবু বলিলেন, “লোকটার একেবারে মাথা খারাপ । হিন্দু হ'লে হবে কি, অন্দর মহলের অবস্থা একেবারে নবাবী হারেমের মত। বাড়িতে মেয়েছেলের অস্থখ হ'লে হাঙ্গামের আর অস্ত থাকে ন৷ ” এ বিষয়ে আর কি জিজ্ঞাসা করা যায় পূণেন্দু ভাবিয়া পাইল না, মহেন্দ্র চৌধুরীও বিদায় হইয় গেলেন। মাস-কয়েকের মত পূর্ণেন্দু ডাঃ চৌধুরীর বাড়িতেই আসিয়া আড্ডা গাড়িল। বড় ডাক্তার কখন যে তাহার ‘কল আসিবে তাহার ঠিকঠকান নাই। রাত তিনটায়ও কখনও কখনও গেটে ধাক্কা পড়ে। প্রথম দিন-কতক ভালই এক রকম কাটিয়া গেল । ডাঃ চৌধুরীকে ডাকিতে আসিয়া বেশীর ভাগ লোক প্রথমতঃ পূর্ণেন্দুকে দেখিয়া ভড়কাইয়া যাইত, তবে আধাআধি অন্ততপক্ষে তাহাকে লইয়া যাইত। বাকি অৰ্দ্ধেক বুদ্ধতর ডাক্তারের সন্ধানে প্রস্থান করিত। সেদিন সকালে পুণেন্দু সবে চা খাইয়া নীচে নামিয়াছে, এমন সময় ঝড়ের বেগে একটি মানুষ আসিম্বা তাহার ঘরে