পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SX8 ঢুকিয় পড়িল । অতিশয় ব্যস্তভাবে জিজ্ঞাসা করিল, “ডাঃ চৌধুরী কোথায় ? এখনও নামেন নি ?” পূর্ণেন্দু বলিল, “তিনি ত এখানে নেই, চেঞ্জে গেছেন।” যুবক এক রকম মাথায় হাত দিয়া বসিয়া পড়িল । হতাশ ভাবে জিজ্ঞাসা করিল, “কবে ফিরবেন ?” পূর্ণেন্দু বলিল, “ঢের দেরি আছে, মাস-পাচ অস্তুত: ” যুবক বলিল, “তা হলে উপায়?” : মানুষটির রকম-সকম দেখিয়া পূর্ণেন্দু বেশ খানিকট। অবাক হইয়া গিয়াছিল, বলিল, “কি ব্যাপার না জানলে উপায়ের ব্যবস্থা কি ক’রে করব ? কোনো অকুপ-বিল্লুক হয়ত আমি যেতে পারি, আমিই এখন তার পেশেন্টদের দেখছি।” যুবকটি বলিল, “আপনাকে দিয়ে ত হবে না।” পূর্ণেন্দু মনে মনে অত্যন্ত চটিলেও যথাসাধ্য ধীরভাবে জিজ্ঞাসা করিল, “কি কারণে ?” যুবক কি যেন বলিতে গিয়া থামিয়া গেল। তাহার পর বলিল, “আমরা অল্প দিন হ’ল কলকাতায় এসেছি, বিশেষ জানাশোনা নেই এদিকে । বুড়োগোছের ডাক্তার কাছাকাছি কেউ আছেন বলতে পারেন ?” সমর দিন-কয়েক এই বাড়িতে আসিয়া জুটিয়াছিল, পূর্ণেদুর উপর নজর রাখিবার উদ্দেশ্বেই। মুখে অবশু বলিত, “মানুষটা একেবারে একলা থাকবে, তাই একটু সঙ্গদান করছি ” সে এতক্ষণ ঘরের কোণে বসিয়া সিনেমা ম্যাগাজিনের ছবি দেখিতেছিল, হঠাৎ বলিয়া বসিল, “ওঁকে যত তরুণ ভাবছেন, তা উনি নয়, বড় ডাক্তার কি-না, তাই যৌবন প্রিজার্ভ করে রাখতে পেরেছেন। কলকাতায় এ রকম আরও দু-চার জন বড় ডাক্তার আছেন, র্যাদের সত্তর বছর বয়সে লোকে চল্লিশ বছর বলে ভুল করে।” যুবক বিস্মিত হইয়া বলিল, “তাই নাকি ? হ্য, এ রকম কথা শুনেছি বটে দু-এক জায়গায়। তা মাপ করবেন, আর একটা কথা জিগগেষ করি। আপনার বিবাহ হয়েছে ? হতবুদ্ধি পূর্ণেন্দু কিছু বলিবার আগেই সমর বলিল, “বিলক্ষণ, তা আবার হয়নি ? ঘরে ওঁর স্ত্রী এবং চারটি সস্তান বর্তমান । মশায় কি ঘটকের ব্যবসা করেন ? তা আমার দিকে একবার তাকালে পারেন। আমার বয়স সভাই কম, বিবাহও হয়নি। ডাক্তারী পাস করে বছর দুই ভাগ্যগুণে বেকার বসে আছি।” প্ত প্রবাসী; ఏం8ం তাহার কথাম কান না দিয়া লোকটি পূর্ণেন্দুর দিকে চাহিয়া বলিল, “অনুগ্রহ করে তাহলে চলুন।" পূর্ণেন্দু নিজের ব্যাগ ইত্যাদি গুছাইয়া লইয়া উঠিয়৷ পড়িল । লোকটি পাগল কি-না তাহাই সে ভর্কিতলি, ডাক্তার ডাকিতে আসিয়া এ-সব খোঁজখবর লইতে সে ইতিপূৰ্ব্বে কখনও কাহাকেও দেখে নাই। লোকটি সম্পন্ন বলিয়াই বোধ হইল, বেশ দামী মোটরকার চড়িয়া আসিয়াছে। রোগীর বাড়ি নিতান্ত কাছে নম্ন দেখা গেল । গাড়ী চলিয়াছে ত চলিয়াইছে। অবশেষে থামিল গিয়া ভবানীপুরে । মস্ত বাড়ি, আজকালকার মাগিা-গণ্ডার দিনে এত বড় বাড়ি একল যে ব্যক্তি ভাড়া লইয়াছে, তাহার পয়সার অভাব অবগুষ্ট নাই । যুবকের পিছন পিছন নামিয়া পূর্ণেন্দু অনেকগুলি ঘর অতিক্রম করিয়া চলিল। পিছনে একট চাকর তাহার ব্যাগ লইয়া আসিতে লাগিল । একতলাটা পুরুষেরই রাজ্য দেথ। গেল। বৈঠকখানা, লাইব্রেরী, অফিস এবং চাকরের ঘর । সিড়ি বহিয়৷ দোতলায় উঠিল, সেখানেও তাহার পথপ্রদর্শক না দাড়াইয়া তিনতলায় উঠতে লাগিল। দোতলাটি মাতৃযে ভর্তি, বি-চাকর গিজগিজ করিতেছে, ছেলেপিলে ত পায়ে পায়ে বাধিয়া যাইতেছে । তবে পরিবারের কোনো মহিলার দর্শনলাভ পূর্ণেন্দুর ভাগ্যে জটিল না। তাহারা থামিল গিয়া তিনতলায়। বড় একটা ঘরের দরজার সামনে দাড়াইয়া, বিলাতী ছিটের মোট পরদাটা তুলিয়া ধরিয়া যুবক বলিল, “আহন।" পূর্ণেন্দু প্রবেশ করিতে যাইবামাত্রই ঘর হইতে কয়েক জন মানুষ যে হুড়মুড় করিয়া পলায়ন করিল, তাহা সে বেশ বুঝিতে পারিল। বিংশ শতাব্দীর কলিকাতায় এত পরদার আধিক্য সে কোথাও দেখে নাই । ইহারা অতিরিক্ত প্রাচীনপন্থী দেখা যাইতেছে। ঘরের ভিতরটা বেশ দামী আসবাবে সাজান, মেঝেতে গালিচা পাতা। তবে আধুনিকতা সত্যই নাই, কারণ একদিকে যেমন আবলুশ কাঠের ছড়াছড়ি, অন্যদিকে পালঙ্কের তলায় গাদা-করা পিতল কাসার বাসন, এবং কোণে মাটির কলসীরও অভাব নাই। পালঙ্কের উপর পুরু বিছানা পাত, তাহার উপর আবার একটি শীতলপাটি বিছান। একটি