পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কাতিক প্রৌঢ় মহিলা চোখ বুজিয়া শুইম্বা আছেন। মাথার কাছে দাড়াইয়া একজন ঝি বাতাস করিতেছে, তাহারও মুখে ঘোমটা টানা । বৈদ্যুতিক পাখা থাকা সত্ত্বেও এ ভাবে বাতাস কেন করা হইতেছে তাহ পূর্ণেন্দু ঠিক বুঝিতে পারিল না। যুবক চাকরের হাত হইতে ব্যাগ লইয়া একটা টিপয়ের উপর নামাইয়। রাখিল। পূর্ণেন্দুকে বলিল, “এরই অস্থখ। সকালে হঠাৎ বললেন, বুকে ব্যথা, ব'লেই অজ্ঞান হয়ে গেলেন । কিছুতে জ্ঞান হয় না দেখে আমরা ব্যস্ত হয়ে ডাক্তারের থোজে গেলাম।” - পূর্ণেন্দু চেয়ার টানিয়া শয্যাপাশ্বে বসিয়া রোগিণীকে পরীক্ষা করিতে লাগিল । বলিল, “এখন ত জ্ঞান হয়েছে দেখছি। কতক্ষণ আন্দাজ অজ্ঞান ছিলেন ?” যুবক অপ্রস্তুত ভাবে বলিল, “ত ত জানিনে, আমি তখনই বেরিয়ে গেলাম কি না ?” পূর্ণেন্দু আবার জিজ্ঞাস করিল, “এর আগে কখনও এরকম হয়েছে, ন, এই প্রথম ?” সুবক মাথা চুলকাঙ্গতে লাগিল, বলিল, “আমি এর বিষয় কিছুই বিশেষ জানিনে। উনি এত দিন বিদেশে ছিলেন, মাস্ত্র দিন-দশ হ'ল এখানে এসেছেন।” পূর্ণেন্দু একটু বিরক্ত ভাবে বলিল, “এর অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক, হাট অত্যস্ত দুৰ্ব্বল, একে দিয়ে ত বকবক করান ধায় না। এমন কাউকে ডাকুন যিনি এর বিষয় সব খবর দিতে পারবেন।” যুবক পাশের ঘরের দরজার কাছে গিয় ডাকিল, “ঝুনু, ও ঝুম্ভ " ঝুম ঝুম করিয়া নৃপুরের শব্দ হইল, এবং পূর্ণেন্দুর বিস্মিত দৃষ্টির সম্মুখে ধেন উপকথার রাজকন্ত আসিয়া দাড়াইল । এত সুন্দর মেয়ে আগে সে কোথাও কখনও দেখে নাই এমন নয়, কিন্তু বাড়িটাই একে রহস্যময়, লোকগুলি পাগলাটে গোছের, মেয়েটির বেশভূষা বিচিত্র, পূর্ণেন্দুর বয়স অল্প, সব মিলিয়া কেমন যেন একটা গোলমাল হইয়া গেল । মেয়েটির বয়স ষোলো-সতেরে হইবে। উজ্জল হামবর্ণ রং, মুখশ্ৰী নিখুৎ, মুখেচোখে বুদ্ধির দীপ্তি ঠিকরাইয়া পড়িতেছে। পরণে বহুপুরাতন ধাচের লালকালে মিশান গুলবাহার শাড়ী, গায়ে লাল চেলি জাতীয় কাপড়ের কাচুলি, পাম্বে নৃপুর, ক’লে দেখা ... Ə (? গলায় সাতনরী হার, হাতে পুরাতন ফ্যাশানের কঙ্কন। কোন জিনিষটি কি এবং কোন কালের, তাহ পূর্ণেন্দু অত বুঝিল না, খালি বুঝিল ঠিক এই ধরণের সাজসজ্জা করিতে আধুনিক কোনো মেয়েকে সে দেপে নাই । কি সুন্দর । যুবক মেয়েটির কানের কাছে মুখ লইয়া ফিশফিশ করিম বলিল, “তুই ঘরে নাই এলি, পরদার ও পার থেকে যা বলবার বল, আমি ডাক্তারকে বলে দিচ্ছি।” মেয়েটি বলিল, “তোমরা সবাই পাগলাগারদে গেলে ঠিক হয়। অমুখবিস্মথের সময়ও তোমাদের ঢং ঘোচে না ।” রাগের মাথায় মেয়েট কথাগুলা একটু জোর গলায়ই বলিয়া ফেলিয়াছিল, কারণ পূর্ণেন্দ সবই শুনিতে পাইল। মুখের ভাব অবশু তাহার এক রকমই রহিল। . পাটের কাছে আসিয়া মেয়েটি বলিল, “উনি আমার ম], আপনি কি জানতে চান বলুন, আমি বলছি।” যুবক তাড়াতাড়ি গিয়া ঘর হইতে বাহিরে যাইবার দরজাট বন্ধ করিয়া দিল । পূর্ণেন্দুর যাহা কিছু জানিবার প্রয়োজন ছিল, তাহা সে একে একে জিজ্ঞাসা করিয়া গেল। মেয়েটি সব কথারই ভালভাবে উত্তর দিল, তাহার পর ডাক্তারের আর কিছু জানিবার প্রয়োজন নাই দেখিয়া, নুপুর বাজাইয় পাশের ঘরে চলিয় গেল । নুপুরের শিষ্মনটা কিন্তু আমাদের যুবক ডাক্তারের হৃদয়ে অনেকক্ষণ ধরিয়া প্রতিধ্বনি জাগাইয়। ফিরিল । সে ঔষুধ লিখিতে এবং রোগিণীর শুশ্ৰুষার ব্যবস্থা দিতে যথাসম্ভব দেরিই করিল, কিন্তু আর নুপুরের শব্দ শোনা গেল না। অতঃপর উঠিয়া পড়িয় সে যুবকের পিছন পিছন নামিয়া চলিল। একতলায় আসিয়া পড়িয়াছে, তখন দেখিল একটা বৈঠকখানা-গোছের ঘরের খোলা দরজার পথে একটি স্থূলাকায় প্রৌঢ় ব্যক্তি তাহার দিকে ক্রুদ্ধ দৃষ্টিতে চাহিয়া আছে। গাড়ীতে উঠিতে উঠিতেই পূর্ণেন্দু গর্জন শুনিতে পাইল, “হ্যারে নবু, তোকে না মহেন্দ্র ডাক্তারকে ডাকতে পাঠিয়েছিলাম ?” যুবক দৌড়িয়া কি একটা কৈফিয়ৎ দিতে গেল। পূর্ণেন্দু দিন-দুপুরে স্বপ্ন দেখিতে দেখিতে বাড়ি ফিরিয়া আসিল। সমর তখনও নীচের ঘরে বসিয়া আছে। পূর্ণেন্দুকে