পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১১৬ দেখিয় জিজ্ঞাসা করিল, “কি হে, আরব্য উপন্সাসের রাজ্যে ঘুরে এলে ?” পূর্ণেন্দু বলিল, “ঠিক সে-রকম ত বোধ হ’ল না, তবে সবাই খানিকটা অদ্ভুত গোছের। এর কথাই তোমার মামা বলেছিলেন না কি ?” সমর বলিল, “হঁ্য, বুড়ে রামনিধি দত্তের মাথা খারাপ, ভাবে নিজের জমিদারীতে যেমন যা খুশী করতে পায়, এখানেও তাই চলবে । মেয়েদের ত ঘরে সিলমোহর করে রাখার ব্যবস্থা । তারা স্কুলে পড়বে না, বাইরে বেরবে না, কোথাও যেতে আসতে হ’লে ঘেরাটোপ দিয়ে যাবে । অন্দরমহলে কোন নূতন চাকরের ঢোকা নিষেধ। নিতান্ত যে-সব কাজ বিয়ের দ্বারা চলে না তা করবার জন্যে গোট|দুই বুড়ে চাকর আছে, দেশের । মামাকে সারা কলকাতা খুজে তার বার করেছিল জমিদার-গিল্পীর অস্থথের জন্তে । ভাল ডাক্তার বলে নয়, বুড়ে, বেরসিক এবং বদ দেখতে ব’লে কোনো অন্তঃপুরিকা হঠাৎ তার সঙ্গে প্রেমে পড়ে যাবে এমন সম্ভাবনা নেই।” পূর্ণেন্দু বলিল, “ত হ’লে আমাকেও ত পছন্দ হওয়া উচিত, বুডো বাদে আর সব কটা গুণ আমারও আছে।” সমর বলিল, “কিন্তু বুড়ত্বটাই হ’ল আদত। যৌবন থাকলে কোথায় কোন স্থত্রে কি বিপদ ঘটবে তা বলা যায় না।” পূর্ণেন্দু বলিল, “ঠিক কথা।” রাত্রের খাওয়াটা মায়ের শুখনেই খাইতে হয়, ন হইলে বিধবা মা কাদিয়-কাটিয়া অনর্থ করেন। সংসারে তাহার আপন বলিতে ঐ একটি ছেলে, মেয়েটি বহুদিন হইল বিবাহ হইয়া পরের ঘরে চলিয়া গিয়াছে। পূর্ণেন্দু নীরবে বসিয়া খাইতেছে, মা কাছে বসিয়া অনর্গল কথা বলিয়৷ চলিয়াছেন। পূর্ণেন্দু কোনো কথার উত্তরে বলিতেছে, “হু” কোনোটার উত্তরে বলিতেছে, “না”। খানিক বাদে মা বলিলেন, “হঁ্যা রে, তোকে অমন মনমরা দেখাচ্ছে কেন ? অম্লখ-বিসুখ হ’ল নাকি ?” পূর্ণেন্দু হাসিবার চেষ্টা করিয়া বলিল, “না, অম্লখ করবে কেন ? ডাক্তারের কখনও অশ্লখ করে ?” মা বলিলেন, “মা তা আর কি কখনও করে ? ডাক্তারেরা একেবারে রোগশোকের অতীত ৷ ই্যা রে কথায় ত কান ఏనDBO দিস না মোটে। বে-থা করবিন ? বুড়ী মরলে ত একেবারে নিরঙ্কুশ, কোনো জালাই থাকবে না।” পূর্ণেন্দু বলিল, “নিরঙ্কুশ থাকাই ত ভাল। করবার বেশী সময় পাব ।” মা চটিয়া বলিলেন, “কাজ কার জন্যে রে ? ঘর-সংসার পরিবারই যদি না রইল, তাহলে কার জন্যে খেটে-মরবি ? আজও সকালে ব্রজ ঘটক এসেছিল, সেই গোয়াবাগানের মেয়েটির কথা বললে। তারা ভারি ঝোলাখুলি করছে। নগদে গহনায় আট-দশ হাজার না-কি দেবে। একদিন মেয়েটি দেখলে হয় না ?” এ ধরণের কথা পূর্ণেন্দু পাস করিয়া বাহির হইয় অবধি চলিতেছে। পূর্ণেন্দু খালি হাসিয়া উড়াইয়া দেয়, বলে, “দেখন আর দিনকতক যাক, তখন নিজেই মাসে আট দশহাজার আনব।" আজ বলিল, “ত্ৰজটা ত জালিয়ে তুলে দেখছি । দিও ত একবার আমার কাছে পাঠিয়ে, সিধে ক’রে দেব ।” ম৷ বলিলেন, “তা আর করবে না। কত গুণের ছেলে তুমি। ব্ৰজর দোষ কি ? তাদের ব্যবসাই ঐ, তার বলবে ন! ?” বলিয়| উঠিয়৷ চলিয় গেলেন । পূর্ণেন্দুও খাওয়া সারিয়| প্রস্থান করিল। পরদিনও ভবানীপুরে যাহতে হইল, টেলিফোনে ডাক আসিল । সমরটা কপালক্রমে বাহির হইয়া গিয়াছিল, সুতরাং নিজের সনাতন বেশভূষা ছাড়িয়া, পূর্ণেন্দু যে ধতি চাদর পরিয়া বাবু সাজিয়া বাহির হইয়া গেল, তাহ লক্ষ্য কেহই করিল না । উপকথার রাজকন্যার সামনে কখনও অমন উৎকট ফিরিঙ্গী পোষাক করিয়া যাওয়া যায় ? সে ভাবিবে কি ? মহেন্দ্রবাবু উপস্থিত থাকিলে প্রিয় শিন্তোর শোচনীয় অধঃপতন দেখিয়া মৰ্ম্মাহত হইয়। যাইতেন । আজ কিন্তু রোগিণী ভিন্ন দ্বিতীয় কোনো নারীর সঙ্গে ডাক্তারের সাক্ষাৎ হইল না । হৃদরোগের চিকিৎসা করিতে গিয়া নিজেই যে একটা হৃদরোগ বাধাইয়া বসিল, তাহাতে পূর্ণেন্দু নিজের উপর অত্যন্তই চটিয়া গেল। কিন্তু মেয়েটি যে বড় চমৎকার! যুবকের কথায় কেমন ঝঙ্কায় দিয় উঠিয়াছিল, উহাতেই তাহাকে কেমন মানাইমাছিল ! নিজে ভালমানুষ বলিয়াই বোধ হয় পূর্ণেন্দুর খরখরে মেয়ে অত্যন্থ ভাল লাগিত । কাজ