পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

"কার্তিক সারাটা দিন অপ্রসন্ন চিত্তে কাজে ঘুরিয়া সন্ধ্যার সময় পূর্ণেন্দু মায়ের কাছে থাইতে চলিয়া গেল। ম রান্নাঘরে তাহার খাবার ঠিক করিতেছেন, সে হাতমুখ ধুইয়া একটু বিশ্রামের চেষ্টায় মায়ের থাটে লম্ব হইয় গুইয়া আছে। এমন সময় বিনা বাক্যব্যয়ে ব্ৰজনাথ ঘটক আসিয়া ঘরে ঢুকিয় পড়িল । পূর্ণেন্দু বলিল, “কি খবর? খুব যে আমার পেছনে লেগেছ দেখছি।” তাহাকে বসিতে বলা হয় নাই, তবু একটা চৌকী টানিয় বসিয়া, ব্ৰজনাথ বিরলদস্তমুখে হাসি টানিয়া আনিয়া বলিল, “আপনাদের মত কুতী, বিদ্বান পাত্রদের রুপায়ই আমাদের দু-মুঠো জোটে। আপনার মুখ ফেরালে আমরা যে মারা ঘাই ?” পূর্ণেন্দু খানিক চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল, “ ত বেশ, একটু পর্যাগ করে দেখা ঋক্ তোমার রুতিত্ব কত। ভবানীপুরে—নং রোডের বাড়ি চেন ?” ঘটক বলিল, “ও আর চেনাচিনি কি ? লিথে নিচ্ছি, খঙ্গে নিলেই হবে।” পর্ণেন্দু বলিল, “আচ্ছ, বাড়ির কৰ্ত্তার নাম শ্রীরামনিধি দত্ত, কোথাকার যেন জমিদার । তার বাড়ির একটি মেয়ের সঙ্গে আমার সম্বন্ধ করতে হবে ।" ঘটক নোটবুক বাহির করিয়া পেন্সিল দিয়া নাম ঠিকান লিখিতে লিখিতে জিজ্ঞাস করিল, “মেয়ে করে ? তারই না কি ?” পূর্ণেন্দু বলিল, “ন, তার নয়, কার তা জানি নে । সম্ভবতঃ তার বাবা বেঁচে নেই ।” ঘটক জিজ্ঞাসা করিল, “মেয়ের নাম কি ?" পূর্ণেন্দু বলিল, “জানি নে।” ঘটক বলিল, “ত হ’লে মশায় আমি সম্বন্ধ করব কি ক’রে ? জমিদারের বাড়ি আমন দশ-বিশটি বিবাহযোগ্য মেয়ে থাকতে পারে। তার ভিতর যে-কোনও একটি হ’লেষ্ট ত আপনার চলবে না ?” পূর্ণেন্দু অনাবশ্বক ঝাজের সহিত বলিল, “নিশ্চয়ই না । মেয়ের ডাক নাম ঝুম্ন, দেখতে খুবই ভাল, বছর ষোলো-সতেরো বয়স । বাকিটা যদি তুমি নিজে না খুজে নিতে পার, ত তুমি কিসের ঘটক ?” ক’লে দেখা S? ব্রজনাথ উঠিয়া পড়িয়া বলিল, “দেখি চেষ্টা করে। পরপ্ত এই সময় আমি আসব,” বলিয়া চলিয় গেল । মাঝের দিনটা পূর্ণেন্দুর মোটেই ভাল কাটিল না । সচরাচর রোগী চটপট সারিয়া উঠিলেই সে খুশী হয়, এবার কিন্তু ভবানীপুরের রোগিণীর প্রতি বিবৃক্ত হইয়া উঠিল। এত তাড়াতাড়ি ভাল হইবার দরকার কি ছিল ? টাকার ত অভাব নাই, না-হয় আর এক দিন ডাক্তার ডাকিতই ? আর একদিন যাইতে পারিলে, রোগিণীর কন্যাকে কি ছুতায় ঘরে ডাকিয় আনা যায়, তাহাও পূর্ণেন্দু মনে মনে রিহাসলি দিয়া রাখিয়াছিল। ব্ৰজনাথ ঠিক সময় মতই আসিয়া উপস্থিত হইল, পূর্ণেন্দুকে নিরাশ করিল না। মাকে কোনোগতিকে রান্নাঘরে চালান করিয়া দিয়া পূর্ণেন্দু জিজ্ঞাস করিল, “কি, খোজ পেলে?” ব্ৰজনাথ বলিল, “খোজ পাব ন কেন ? গোজ পাওয়াই ত আমাদের ব্যবসা ? কিন্তু মেয়ের নাম এবং বাপের নাম ন জানাতে একটু গোলে পড়েছি । জমিদারের নিজের একটি মেয়ে বিবাহযোগ্য, তারা তার বিয়েই আগে দিতে চায়।” পূর্ণেন্দু অসহিষ্ণু হুইয়া বলিল, “কি উৎপাত ! দিতে চায়, দিক গিয়ে না ? আমি কি বারণ করছি ? আমি যে-মেয়েটির খোজ করতে বললাম, তার কি হ’ল ?” ব্ৰজনাথ বলিল, “মশায়, সেদিকেও বিভ্রাট ! ঝুমু বলে দুটি মেয়ে আছে, দুইটিই বিবাহযোগ্য, একটি জমিদারের স্তালিকার মেয়ে, আর একটি তার মৃত ভ্রাতার। এখন কোনটিকে আপনি পছন্দ করেছেন, কি ক’রে বোঝা যাবে ?” পর্ণেন্দু নীরবে ভাবিতে লাগিল। তাহার পর বলিল, “আচ্ছ, যে-কোনে একজনের সঙ্গে সম্বন্ধ কর, তারপর মেয়ে দেথার সময় বোঝাপড়া করা যাবে।” নিজের উপযুক্ততা সম্বন্ধে পূর্ণেন্দুর মনে অকারণ কোনে বিনয় ছিল না। তাহার মত ছেলে হাতে পাইলে কেহ যে সহজে ছাড়িবে না, চারিটি বিবাহযোগ্যার একটি-ন-একটিকে তাহার গলায় ঝুলাইয় দিতে চাহিবেই তাহ সে নিশ্চিত জানিত । ম। ছেলের জন্ত ঘন দুধ লইয়া ঘরে ঢুকিয় বলিলেন, “খুব ' যে ঘটকের সঙ্গে ভিটির ভিটির গল্প হচ্ছে ? মা বুড়ী বললেই যত খারাপ লাগে ",