পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আধঘণ্টা এক সঙ্গে বেড়িয়ে আসার ফলে ভয়ঙ্কর কিছু অনৰ্থপাত ঘটবে ?” ঐজিলা অবলীলায় তর্ক করিতেছিল, হঠাৎ এই ভাবে আক্রান্ত হইয়া অত্যন্ত বিপন্ন হইয়া পড়িল। স্বভঞ্জের এ প্রশ্নের কি জবাব দিবে ভাবিয়া পাইল না। ইহা সত্য যে স্বভত্রের আজকার বেড়ানোর পার্টির গল্প কলিকাতার প্রায় প্রত্যেক বাঙালী ড্রইংরুমে এবং খাইবার টেবিলে কয়েকদিন ধরিয়া চলিবে । সমাজ সম্পর্কে র্যাহারা উদারনৈতিক বলিয়৷ নিজেদের প্রচার করেন, তাহারাও এই লইয়া নানারূপ মন্তব্য করিতে ছাড়িবেন না। ঐন্দ্রিলা এবং সুভদ্র সম্বন্ধে ত কথা তাহাদের দলের লোকদের মধ্যেই উঠিবে। কিন্তু এই-সমস্ত মন্তব্যকে সে কি সত্যই কিছুমাত্র ভয় করে ? নিজের মনের মধ্যে তাকাইয়। সে স্পষ্টই দেখিতে পাইল যে নিজের কাছে খাটি থাকিতে পারিলে পৃথিবীর কাহারও কোনও মন্তব্যকে সে সত্যই ভয় করে না । কিন্তু ভয়ের কারণ ত শুধু তাহাই নহে। এই যে তাহার চোখের সম্মুখে অজয় এবং বীণাকে লইয়া একটি বিচিত্র সংশয়ের স্বষ্টি হইতেছে, সে ত জানে ইহার মধ্যে অর্থ যতখানি অনর্থ তাহার চেয়ে বেশী অথচ সমস্ত ব্যাপারটার মূলে দুইটি মানুষের অত্যন্ত সহজ মেলামেশা ভিন্ন আর কিছুই ত নাই। কিন্তু কতগুলি মানুষের জন্য কত দুঃখের আয়োজনই হয়ত ঐটুকুর সূত্র ধরিয়া নীরবে হইয়া চলিয়াছে। ইচ্ছা করিতে লাগিল, স্বভদ্রকে সেই কথাটা বলে। এমন হইতে পারে, হয়ত তাহারই ভুল হইতেছে । হয়ত যে জিনিসকে সে সংশয় মনে করিতেছে, তাহার মধ্যে সংশয় কিছু নাই, বীণা এবং অজয় পরস্পরের কাছে খুব সহজভাবেই ধরা পড়িয়াছে। স্বভদ্র সেবিষয়ে কি ভাবে তাহ অন্ততঃ সে জানিয়া লইতে পারিত কিন্তু পাছে ধরা পড়িয়া যাইতে হয়, এই ভয় আসিয়া বাধা দিল । স্বভদ্র স্বন্ধস্বরে বলিল, “ক্সাচ্ছা, এইটেকেই test case করে দেখা যাক। যদি সত্যি কিছু ঘটে তাহলে তর্কে আপনার জিত। আর কিছু আদি না ঘটে তাহলে হার মানবেন, স্বীকার করে যান ।” -. ঐজিল বলিল, “স্বীকার কাছি।” - . . . ১২গ্ৰ বীণা পথে বাহির হইয়াই বলিয়া উঠিল, “ব, স্থলতাদি, কি স্বন্দর রাস্তা." - স্বলতা বলিলেন, “তোর চোখে বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডের সবকিছুই এখন পরম স্বনীর লাগবে ।” বিচিত্র জনবিরল কৃষ্ণচূড় বীথিটির সত্যই অপরূপ শোভ হইয়াছিল। তবে ইহাও সম্ভবতঃ সত্য যে সেদিন সেই শোভাকে হৃদয়ঙ্গম করিবার ক্ষমতা বীণা অপেক্ষ বেশী আর কাহারও ছিল না। তাহার হৃদয় পরিপূর্ণ হইয়া ছিল, সমস্ত অস্তিত্বকে তাহার মধুময় মনে হইতেছিল। কি সে পাইয়াছে এবং কি সে পায় নাই, সেই হিসাব করিতে তাহার মন উঠতেছিল না। বহুদিন পর হারাইয়া-যাওয়া অজয়কে সে ফিরিয়া পাইয়াছে, আজ সারা সন্ধ্যা তাহাকে সে কাছে পাইছে, এখনও সে তাহার শেই আছে, এইটুকু জানাই তাহার পক্ষে যথেষ্ট । সম্প্রতিকার মত উহার বেশী আর কোনও স্বথ, ইহারও বাড়া আর কোনও সৌভাগ্য কল্পনা করাও তাহার ক্ষমতার বাহিরে। অজয়কে বলিল, “সত্যিই রাস্তাটা খুব সুন্দর দেখতে নয় ?” অজয় বলিল, “ মুন্দর বই কি ?” বীণার কানের কাছে মুখ লইয়া স্থলত মৃদুস্বরে বলিলেন, “চোরের সাক্ষী গাটকাট ।” - বীণা ঝঙ্কার দিয়া বলিল, “আচ্ছা, আচ্ছা, তুমি ত খুব সাধু আছ তাহলেই হ’ল।” অজয় ব্যাপারটাকে অনুমান দ্বারাই-বুঝতে চেষ্টা করিল এবং ভুল করিল না। বীণা বলিল, “সেদিনকার রাত্রে চাপাফুল কুড়নো মনে আছে আপনার ?” - দুৰ্দ্দমনীয় আবেগে অজয়ের সমস্ত চিত্ত আলোড়িত হইয়া উঠিল, সেদিনকার রাত্রির বিশ্বতপ্রায় মুখাবেশ আবার তাহাকে অভিভূত করিল, জোরের সঙ্গেই বলিল, “সেদিনকার কথা কোনোকালেও ভুলব না।” স্থলত সন্তপণে রাহকে লইয়া পিছনে পড়িয়া গেলেন। এমনভাবে গতিবেগ কমাইতে লাগিলেন যাহাতে ক্রমে আর তাহাদের কথার গুঞ্জন শুদ্ধ আর শুনিতে পাওয়া না যায়। রাহু অত্যন্ত ছটফট করিতে লাগিল, তাহাকে নানা জগতৰ