পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কান্তিক বাগান করেছিল, তারা মরে কোনকালে ভূত হয়ে গিয়েছে, কিন্তু ওগুলো আজও মরেনি।” অজয় বলিল, “আপনি একটু বন্ধন এখানে, আমি কিছু ফুল সংগ্রহ করে আনৃছি।” : 的。 ৰীণা বলিল, “আমুন, জন্মদিনের একটা উপহার আপনার কাছথেকে অন্ততঃ পাওয়া যাবে।” ত্বরিত পদে অজয় উঠিয়া গেল । সে বুঝিতে পারিতেছিল ন, সে কি করিতেছে। তাহারও অজ্ঞাতে এ কোন গোপন প্রভাব ধীরে ধীরে বীণা তাহার উপর বিস্তার করিতেছে। অথচ ইহাকে প্রভাব বলিয়া চিনিবার উপায় নাই, যদি চিনিতে পারিত, সতর্ক হইত। বীণাকে যেন ঘটা করিয়া, চেষ্টা করিয়া কোনও প্রভাব বিস্তার করিতে হয় ন, যেন হষ্টির প্রথম দিন হইতে সকলের উপর তাহার প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হইয়াই আছে। অথচ প্রাকৃতিক নিয়মের মত ইহাকে বিনা দ্বিধায় মানিতে হয়, ইহাকে লইয়া বিচারবিতর্ক নিষ্ফল । একরাশ যুঁই গন্ধরাজ বেলফুল রঙনে রজনীগন্ধায় রুমাল বোঝাই করিয়া সে ফিরিয়া আসিল । বীণা যেখানে বসিয়াছিল, সেখানে তাহার পায়ের কাছে মাটিতে ফুলগুলিকে উজাড় করিয়া ঢালিয়া সে বলিল, “এই নিন।” বীণা বলিল, “ছি ছি, ও কি কবুলেন ? ওগুলোকে মাটিতে রাখলেন কেন?” বলিয়া মুঠি মুঠি করিয়া ফুলগুলিকে আঁচলে উঠাইতে প্রবৃত্ত হইল। একটি রজনীগন্ধার গুচ্ছ লইয়া অজয়ের হাতে দিয়া সে বলিল, “এইটি আপনি নিন্‌ ৷” অজয় বলিল, “শিরোধাৰ্য্য করা গেল।” বীণা বলিল, “টিকি ত দেখছি না আপনার মাথায়, শিরোধার্ঘ। আর কি ক’রে করবেন।” উচ্ছ্বসিত হালিগল্পের বান ডাকিতে লাগিল। কথার মাঝখানে কতগুলি ফুল হাতে লইয়া খোপায় পরিবার চেষ্ট করিতে করিতে অত্যন্ত স্বাভাবিক স্বরে বীণা বলিয়া উঠিল, “কোথায় কি গুজছি জানি না, ফুলগুলো খোপায় একটু পরিয়ে দেবেন ?” অজয়ের হঠাৎ চমক ভাঙিল। বুঝিতে পারিল অবস্থা ক্রমেই বিপদসঙ্কুল হইয়া আদিতেছে। অথচ বীণা এমন সহজভাবে এই অনুরোধ করিয়াছে, যে, কোনও So অজুহাতেই তাহাকে 'না' বলিবার উপায়:মার নাই ।

কোনও কথা না বলিয়া নিঃশব্দে সে বীণার-পশ্চাতে গিয় ৰুকিয় দাড়াইল, এবং কম্পিত হন্তে কয়েকটি ফুল কোনওরকমে তাহার খোপায় গুজিয়া দিল । * -- - - বীণা বল্লি, “যাক, এইতেই হবে । বন্ধন ।” অজয় যন্ত্রচালিতের মত নিঃশব্দে আবার পূর্কের জায়গায় আসিয়া বসিল । বীণা বলিল, “আপনাকে একটা কথা বলব, কিছু মনে করবেন না ?” - * অজয় মুখে মান হাসি আনিয়া বলিল, “মনে আবার কি করব ?” কিন্তু তাহার মনে মনে যে কি হইতেছিল তাহ একমাত্র অন্তৰ্য্যামীই জানেন । বীণা একটা গন্ধরাজ লইয়া নাকের কাছে খুরাইতে ঘুরাইতে ধীরে বলিল, “আজ জন্মদিনে আপনার সঙ্গে একটা সম্পর্ক পাতাতে ইচ্ছে করছে ” - অজয় ভাবিল, ভালই হইল । হয়ত এই সম্পর্ক পাতানোর সুত্রে তাহাদের মধ্যে যে সম্পর্ক ক্রমে জটিল হইতে । জটিলতর হইয়া চলিয়াছে তাহার একটা সহজ সমাধান হইয়া যাইবে । উদগ্রীব হইয়া বলিল, “সে বেশ ত কি সম্পর্ক পাতাতে চান বলুন।" ... . . বীণা একটু ভাবিয়া বলিল, “ঠিক বুঝতে পারছি না। আচ্ছা ভেবে দেখছি ।” - অনেকক্ষণ নীরবে কাটিলে হঠাৎ সে মাথা বাড়া দিয়া বলিয়া উঠিল, “না, যেগুলো মনে পড়ছে তার একটাও মনে ধরছে না ।” অজয় আবার শঙ্কিত হইয়া উঠিল। পাছে অলক্ষিতে বিপদ কোনও দিক্ হইতে আসিয়া অকস্মাৎ ঘাড়ে পড়ে, এই ভয়ে স্বতঃপ্রবৃত্ত হইয়া তাড়াতাড়ি কহিল, “আমি বলি, আমি ত আপনার চেয়ে বয়সে বড়--” বীণা বলিল, “থাক থাক, ঢের হয়েছে। এমনিতেই ত সর্দারির জালায় অস্থির, তার ওপর আবার বয়সে বড়র সম্পর্ক নিয়ে কাজ নেই।” - অজয় বলিল, “বয়সে ছোটর সম্পর্কই না হয় একটা নিচ্ছি।” বীণা বলিল, “গুমুন । নিজেদের ফাকি দিলে চলবে না । এমন সম্পর্ক নিতে হবে যাকে জীবনে আমরা সত্য করে তুলতে পারব । এইবার ভাবুন।” -