পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগ্রহায়ণ শিক্ষা এবং ব্যবসায় . 30 সূতন নূতন তত্ত্ব আবিষ্কৃত হইতেছে, আমরা যদি তাহার সন্ধান না রাখি তাহা হইলে বাস্তবজীবনে কৃতকাৰ্য্য হইব কেমন করিয়া ? আমরা যদি ইচ্ছা করিয়া স্বল্পরাজ্যে বিচরণ করি তাহা হইলে জাগ্রত অবস্থা কেমন তাহ বুঝিব কি করিয়া । কল্পনা এবং ভাবুকতায় উৎকৃষ্ট সাহিত্যের স্বষ্টি হইতে পারে, কিন্তু পেটে অল্প না থাকিলে ইহা উপভোগ করা যায় না। শুধু পুঁথিগত বিদ্যায় ব্যবসা আয়ত্ত করা যায় ন ইহা ঠিক, কিন্তু তাই বলিয়া এ-কথা ঠিক নয় যে, উচ্চশিক্ষা ব্যবসায়ে সফলতার অন্তরায় । ব্যবসায় এখন আস্তজাতিক ব্যাপার । ভারতের তুলার মূল্য নিৰ্দ্ধারিত হয় লিভারপুল এবং নিউইয়র্কে এবং সেখানকার মূল্যের হ্রাস বুদ্ধি নির্ভর করে আমেরিকা, মিশর, পূৰ্ব্ব-আফ্রিকা এবং ভারতে উৎপন্ন তুলার চাহিদার উপর। সেইরূপ গম এবং অন্যান্ত ভারতীয় কাচা মালের মূল্য বিভিন্ন দেশে উৎপন্ন ঐ জাতীয় মালের সহিত প্রতিযোগিতায় নিৰ্দ্ধারিত হয়। বঙ্গদেশ ছাড়া অন্যত্র প্রায় পাট উৎপন্ন হয় না, কিন্তু ইহার মূল্য বিশেষভাবে নির্ভর করে উত্তর-আমেরিক এবং দক্ষিণ-আমেরিকার চট এবং চটের থলির চাহিদার উপর। অতএব দেখা যাইতেছে, বৰ্ত্তমান যুগে কোন দেশই নিজের ক্ষুদ্র গণ্ডীর ভিতর ব্যবসায় সঙ্কুচিত করিয়া উন্নত হইতে পারে না । বৰ্ত্তমানে যে পুথিবীব্যাপী মন্দ চলিতেছে ইহার একটি প্রধান কারণ-প্রত্যেক দেশই নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থ সংরক্ষণ করিতে গিয়া নিজের এবং অপরের ঘোর অনিষ্ট করিয়াছে । আর্থিক স্বতন্ত্রত প্রথম দৃষ্টিতে মঙ্গলকর বলিয়া মনে হয় কিন্তু একটু তলাইয়া দেখিলেই বুঝা যাইবে যে, সকলেই যদি বিক্রেত হয় তবে ক্রেতা জুটিবে কোথায় ? আর কোন দেশই নিজের প্রয়োজনীয় সমস্ত জিনিষ উৎপন্ন করিতে পারে না, ইহা সত্বেও যদি অন্ত দেশের অপেক্ষ অধিক খরচে মাল উৎপন্ন করা যায় তাহা হইলে গুন্ধের হার সেই পরিমাণে বৃদ্ধি ন করিলে সেই সব শিল্প টিকিতে পারে না । গুষ্কের সহায়তায় বিদেশে উৎপন্ন সন্ত মাল প্রবেশের পথ রুদ্ধ করিয়া স্বদেশে উচ্চমূল্যে প্রস্তুত মালের কাটতি বৃদ্ধি করা যাইতে পারে, কিন্তু এ-কথা মনে রাখিতে হইবে যে মূল্যবৃদ্ধি হইলে ক্রেতার সংখ্যাও কমিক্স যাইবে । সব চেয়ে মুস্কিল এই যে, আমরা যদি বিদেশী মাল খরিদ না করি তাহা হইলে তাহারাও আমাদের ३€----é মাল খরিদ করিতে পারিবে না, কেন-ন বাণিজ্যের প্রগার মালের আদান-প্রদান দ্বারাই হয়। ইঙ্গ ছাড়া আধুনিক ব্যবসায়ীকে আরও অনেক খবর রাখিতে হয়। যেমন মুদ্রানীতি। অধুনা অনেক দেশই স্বর্ণমান পরিত্যাগ করিয়াছে, ইহাদের মুদ্রার মূল্য স্বর্ণে প্রতিষ্ঠিত মুদ্রার তুলনায় অনেক হ্রাস হইয়াছে। পূৰ্ব্বে জাপানী মুদ্রা ১•• ইয়েনের মূল্য ছিল ১৩০২ টাকারও অধিক, এখন হইয়াছে ৮০২ টাকারও কম। জাপানীরাও ইহা স্বীকার করে যে, ইয়েনের মূল্য বেশী হ্রাস হওয়াতে আন্তজাতিক বাণিজ্যে তাহারা এতটা সফলতা লাভ করিয়াছে । আমাদের দেশে অনেকের বিশ্বাস, টাকার মূল্য ১ শিলিং ও পেনিতে ধাধ করায় অন্যান্য দেশের সহিত প্রতিযোগিতায় আমাদেরও বিশেষ ক্ষতি হইয়াছে। & মোট কথা, বৰ্ত্তমান যুগে ব্যবসায়ে কৃতিত্বলাভ করিতে হইলে কূপমণ্ডক হইলে চলিবে না। আমাদের শিক্ষপ্রণালীর দোষ পূৰ্ব্বেই বলিয়াছি, যে-শিক্ষা জীবিকা উপায়ের পথ প্রদর্শন করে না, সে-শিক্ষা সাধারণের পক্ষে শ্রেয়স্কর নহে তাহাও ঠিক। তাই বলিয়া সামান্ত লিখিতে, পড়িতে এবং অঙ্ক কষিতে শিখিলেই যে ব্যবসায়ে সাফল্যলাভের স্বধৃঢ় ভিত্তি স্থাপিত হইল এইরূপ মত একান্তই ভ্রান্ত বলিয়া মনে হয়। ব্যবসায়ক্ষেত্রে শিক্ষার বিশেষ কোন প্রয়োজনীয়তাও নাই এরূপ মত প্রচার হইলে আমাদের ইষ্ট অপেক্ষা অনিষ্টই অধিক হইবে। ইউরোপ এবং আমেরিকায় পূর্বে এই প্রকার মত প্রচলিত ছিল। অনেকে বলিতেন যে, পুথিগত বিদ্যা দ্বারা ব্যবসায়ে কৃতিত্ব লাভ করা যায় না, হাতে-কলমে শিখিতে শিখিতে তবে সাফল্য লাভ করা যায়। এখন সেদেশে একথা প্রায় শোনা যায় না। উচ্চ ব্যবসায়িক শিক্ষার জন্য স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে এবং দেখা গিয়াছে ৰে এইরূপ শিক্ষিত যুবকেরা হাতে-কলমে শিক্ষিত যুবকদের অপেক্ষ কার্যাক্ষেত্রে অনেক সাফল্যলাভ করিয়াছে। ব্যবসায় এমন একটি পদার্থ নহে যাহাকে চতুৰ্দ্ধিকের আবহাওয়া হইতে পৃথক করিয়া চালান যাইতে পারে। বৈজ্ঞানিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক-প্রত্যেকটির ঘাতপ্রতিঘাত ব্যবসায়ের উপর পড়িতেছে এবং ইহার ধারা পরিবর্ধিত করিতেছে। অতএব যাহার বাবাক্ষেত্রে উচ্চস্থান