পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মিলন ঐঅমূল্যচন্দ্র ঘোষ মা শিন-এর বাবা ছিলেন পূৰ্ব্বতন ব্রহ্মরাজদের মণিপুরী ব্ৰাহ্মণ রাজ-পুরোহিতের বংশধর ; মং টিন ছিল সেনাপতি মহাবান্মুলার বংশোদ্ভূত। শোয়ে দাগোন ফায়ার উচ্চভূমিতে বসে মা শিন ছবি আঁকত ; ইরাবতীর নির্জন তীরে বসে মং টিন্‌ কবিতা লিখত। দু-জনের ছিল ভারি ভাব । তাদের দু-জনের মনের ঐক্য ছিল একটা জায়গায়— সেটা ব্ৰহ্মদেশের পুরাতন আভিজাত্য। কিন্তু তা ছাড়া দু-জনের প্রকৃতি বিভিন্নমুখী—ম শিন ধীর, স্থির, দৃঢ়চেতা ; ললাটে ব্রাহ্মণকুমারীর অম্লান গরিম ; মং টিন দাম্ভিক, চঞ্চল, উগ্রপ্রকৃতি—বাদুলী-বংশের উষ্ণ শোণিত শিরায় শিরায় প্রবাহিত । ব্ৰহ্মরাজার অধিকার বিলুপ্ত হবার পর এই দুই প্রাচীন বংশ পুরাতন রাজধানী মান্মালম্ব থেকে এসে নূতন রাজধানী রেঙ্গুনে বসবাস আরম্ভ করেছেন। বহুদিন থেকে পুরুষানুক্রমে এই দুই বংশে সৌহার্দ্য চলে এসেছে ; তাই জন্মাবধি মা শিন-এর সঙ্গে মং টিনের পরিচয় । মং টিন চিরকাল দুর্দান্ত প্রকৃতির ; ছেলেবেলা থেকে মা শিন তার ছোট-বড় উপদ্রব সঙ্ক করেছে—বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মং টিনের মা শিন্‌এর উপর একটা প্রভূত্বের, একটা অধিকারের ভাব জন্মেছে। মা শিনও জন্মাবধি মং টিনের আবদারে অত্যাচারে এতটা অভ্যস্ত হয়ে গেছে, যে, তার অধিকারের দাবিট। নিৰ্ব্বিবাদে স্বীকার করে নিয়েছে। কিন্তু মেয়ের উপর এতটা প্রভুত্ব ভাল লাগছিল না ম। শিন-এর বাবার। মং টনের পিতা এখন মৃত—সে এখন মুক্ত ও স্বাধীন। কোন কাজকর্ণ করে না। বংশানুক্রমিক বিষয়সম্পত্তির, যা কিছু অবশিষ্ট ছিল, তাতেই তার স্বল্প অভাব মিটে যায়। স্বেচ্ছাচারী মুক্তপক্ষ বিহঙ্গের মত সে সমস্ত নিটা ঘুরে ঘুরে বাঁশি বাজিয়ে কাটিয়ে দেয়। এ রকম মা শিমূ-এর দ্বাৰা কোন রকমে সদ্ধ করতে পারছিলেন না। কিন্তু ভীরুপ্রকৃতি ব্রাহ্মণের ছৰ্দান্ত তেজৰী মং টিনকে । কোন কথা বলবার সাহস ছিল না। তাই যত রোষ এসে চেপে পড়ত তাঁর এই ধীর প্রকৃতি মেয়েটির উপর। কিশোর বয়সের সঙ্গে সঙ্গে দুই দিকের এই নির্যাতন সয়ে সয়ে মেয়েটিও ক্রমে ক্রমে বয়সের অনুপযোগী গম্ভীর ও স্বল্পভাষী হয়ে পড়ছিল। - একদিন অপরাহ্লে ফায়ার সাক্ষরত ভূমিতে বসে মা শিন ছবি আঁকছিল। হঠাৎ পিছন থেকে মং টি এসে তার চোখ টিপে ধরলে । “আ, কি কর, ছাড়, এখুনি বাবা দেখতে পেলে আর রক্ষে থাকবে না।” বলে মা শিন তার হাত ছাড়িয়ে দিলে । রেগে উঠে মং টিন বললে, “আবার বাবার কথা ? বুড়োটা যদি ফের তোমার গামে হাত দেয় তো তাকে খুন করে ফেলব।” “কি, আমার বাবাকে এমন কথা বললে? আর তোমার সঙ্গে কথা বলব না—” সক্রোধে মা শিন উঠে দাড়াল। - মং টিন তার হাত চেপে ধরে বললে, “রাগের মাথায় ষতা বলে ফেলেচি, আমাম মাফ কর ভাই ! . আর কোনদিন এমন কথা বলব না । তোমার জন্তে কেমন কবিতা লিখে এনেচি, একটিবার দেখ ” এঞ্জির ভিতর থেকে মং টিন মোড়ক করা একখানা কাগজ বার করে খুলে ফেললে। দু-জনে বসে তখন কবিতা পড়তে লাগল। মং টিন লিখেচে—ইরাবতীর তীরে সন্ধ্যার চাদ উঠেছে, চাদের আলোয় ইরাবতীর জল, ইরাবতীর দুই তীর প্লাবিত হয়ে গেছে। আশেপাশে দুই তীরে সাৰোঁর আলো জলে উঠেছে। চাদের আলোয় নদীতে সোনার নৌকায় রাসনে বলে রাণী মা শিন শোভাযাত্রা করেছেন। তার স্বাখার