পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९७७ &#ffffãÉG Sово বিভাব, অল্পভাব ও ব্যভিচারী নাম দেওয়া হয় এবং এই বিভাবাদির দ্বারা প্রকাশিত যে স্থায়ী ভাব তার নাম রস। আমাদের বাইরে যে জগৎ তার সঙ্গে আমরা বিচিত্র সম্বন্ধস্থত্রে বাধা । আমাদের মনের সঙ্গে তার সংস্পর্শে রতি, হাস, শোক, ক্রোধ, উৎসাহ, ভয়, জুগুপ্ত, বিস্ময়, শম (নিৰ্বেদ) মোটামুটি এই নয়টি এবং আরও অনেকগুলি ভাবের উদ্ভব হয়। এই নয়টি মূলভাবকে বলা হয় স্থাস্থিভাব, শাখাভাবগুলির নাম সঞ্চারী বা ব্যভিচারী। এই ভাবগুলি ( emotion ) কিন্তু লৌকিক, যেহেতু এর আমাদের মনের বিরাগ-অনুরাগ, কামনা-বেদনার রঙে রঞ্জীন। অর্থাৎ বহির্বিশ্বের সঙ্গে যে স্বার্থের সম্বন্ধে আমরা জড়িত এই বিরাগ-অনুরাগের মূলে স্বার্থের সেই চিরন্তন প্রেরণা। কোন বস্তুকে আমরা ভালবাসি, কোনটিকে বা ঘৃণা করি। কেন ? যে সামাজিক রীতি-নীতির আবহাওয়ায় আমরা মানুষ, বাইরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অনেকটা তারই প্রভাবে গড়ে ওঠে । অর্থাৎ কোনও বস্তুর সহিত আমাদের ষে প্রতি বা অপ্রীতির সম্বন্ধ স্থাপিত হয় সামাজিক মানুষের বিশেষ শিক্ষা-দীক্ষা তার জন্য অনেক পরিমাণে দায়ী, তাই ভাল লাগা— না-লাগার জাদর্শ দেশে দেশে কালে কালে ভিন্ন । তবুও কোথায় যেন মাহুষের মনের একটা অখণ্ড ঐক্য আছে । ভূগোলের সীমারেখার বাইরে মনের সেই নিভৃত নন্দনে আনন্দের নিত্যলীলা । সেখানে জাতিতে জাতিতে ধনী দরিত্রে, উচ্চে নীচে প্রভেদ নেই—সকলেই প্রেমের ফাগ অঙ্গে মেখে হোলি খেলায় মেতে ওঠে। এই মণিমঞ্জুষার কুঞ্চিক আছে কবির কাছে—এই রহস্তলোকের পথ দেখিয়ে দেয় কাব্য। কেমন করে তা বলি । মনে করুন, আপনার কোন অন্তরঙ্গ বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে, আপনি শোকে একান্ত অভিভূত হয়েছেন। এক্ষেত্রে আপনার মনে শোকভাবের মূল বা আলম্বন কারণ বন্ধুর ' মৃত্যু অথবা বিনষ্ট বন্ধু। এইটি আলম্বন বিভাব। তারপরে তার সংকার, তার বিয়োগ, তার স্ত্রীপুত্রাদির কাতরতা এইসব উদ্দীপক কারণে শোকভাব ক্রমশঃ তীব্র ৪ ঘনীভূত হয়ে উঠল; অতএব ঐগুলি উদ্দীপন বিভাব। ভারপরে আপনার মনের সঙ্কীয়মান শোক উম্বেলিত হয়ে * নিশ, ভূমিপতন, উচ্ছ্বাস, বিবর্ণতা, রোদন প্রভৃতি নানা বিকার ও প্রবারে অভিব্যক্ত হ'ল ; এগুলি হল অস্থভাব । অবশেষে এর সঙ্গে নির্বেদ, মোহ, স্মৃতি, গ্লানি জড়তা প্রভৃতি বহু ব্যভিচারী বা শাখাভাব সংযুক্ত হয়ে মূল স্থায়িভাবটিকে পরিপুষ্ট করে তুলল। "স্তোকৈৰ্বিভাবৈরুৎপন্ন স্ত এব ব্যভিচারিণঃ” অর্থাৎ স্বল্প বিভাব থেকে উৎপন্ন যে ভাব তাকে বলা হয় ব্যভিচারী মূল—ভাবের পরিপোষণই হ’ল এর কাজ। কারণ আলঙ্কারিকদের মতে পরিপোষ ব্যতীত ভাবের রসত্ব হয় না—“পরিপোষ-রহিতস্ত কথং রসত্বম্।” যা হোক, এই রকমে মূল-ভাবটি ক্রমে এক অপূৰ্ব্ব প্রপানক রসে রূপান্তরিত হ’ল। কিন্তু এদের বিভাবঅকুভাবাদি সংজ্ঞা দিতে হলে এগুলিকে কাব্যনাটকে আরোপিত করা চাই। অর্থাৎ অন্ত কথায় কাব্য সংশ্রয়ে এই লৌকিক ভাবগুলিকে অলৌকিক বিভাবত্বে পরিণত করা চাই । বিশ্বজগতের সঙ্গে পরিচয়ের ফলে আমাদের মনে ক্রমশ: যে-সকল ভাব উদ্ভূত হয়, বাসলা বা সংস্কার রূপে সেগুলি আমাদের স্মৃতির মধ্যে স্থায়ী হয়ে যায় । যখন লৌকিক বিভাব ও অল্পভাব কবির রচিত চিত্রে সমর্পিত হয়ে নিখিল অনুরাগীর হৃদয়কে স্পর্শ করে তখনই তারা অলৌকিকত্ব প্রাপ্ত হয় এবং পাঠকের প্রক্ষপ্ত বাসনায় আঘাত্ত ক’রে রমণীয় ভাবের উদ্বোধন করে। আলঙ্কারিকেরা স্পষ্টই বলেছেন যে, লৌকিক ভাবগুলি ষে-পৰ্য্যস্ত না অলৌকিকত্ব প্রাপ্ত হয় সে-পৰ্য্যন্ত তার কাব্যের বিষয় হতে পারে না। কোন বস্তুর লৌকিক সত্তা ও ভাবসত্তা এক জিনিষ নয়। শিল্পী তার কল্পনা বা অন্তঃপ্রেরণার সাহায্যে একটি সম্পূর্ণ নূতন জগৎ স্বষ্টি করেন,—যেখানে ভাবগুলি সকলপ্রকার - সম্বন্ধ-নিরপেক্ষ হয়ে সহজ স্বরূপে প্রকাশিত হয় । “হেঙুত্বং শোকবর্ষাদোঁতেতো লোকসংশ্রয়াং শোকজৰ্যাদয়ে লোকে জায়ভাং নাম লৌকিকাঃ । জলৌকিক বিভাবত্বং প্রাপ্তেভাঃ কাব্যসংগ্রাৎ স্বখং সঙ্কায়তে তেভ্য: সৰ্ব্বেভ্যোংগীতি ক! ক্ষতিঃ ।” --সাহিত্যদর্পণ সেইজন্ত লৌকিক জগতে শোকহর্বাদির যেহেতু তা আমাদের শোক এবং হর্ষই দিয়ে থাকে, কিন্তু মনের মণিকক্ষে সম্বন্ধবিরহিত অবস্থায় তারাই আমাদের অনবচ্ছিন্ন আনন্দের কারণ হয়। সাংসারিক লাভক্ষতির প্রসঙ্গ অসঙ্গত ভাবে যুক্ত থাকে না বলে. কাব্যের