পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

३०१ কল্প-কাননে দুঃখের স্বশালে লবণ্যের শতদল ফুটে ওঠে। মচুন্যজীবনে মৃত্যু একটি শোকাবহ বস্তু, স্বতব্যক্তির সহিত আমাদের ব্যক্তিগত অথবা সমাজগত সম্বন্ধ ষড়ই অধিক হয়, মৃত্যুজনিত শোকের মাত্রাও হয় ততই অধিক । কিন্তু সেই মৃত্যু বৈজ্ঞানিক আজীবনসন করেও বেসত বস্তুর সন্ধান পান না, কবি অন্তঃপ্রেরণার বলে চকিতে প্রবুদ্ধসদ্ধিতে সেই শাশ্বতপত্যের সাক্ষাৎ লাভ করেন। এই অন্ত:প্রেরণাকে (intuition') কান্ট বলেছেন তর্কবুদ্ধির অতীত বিচারশক্তি বা কামনাবিহীন ঘটনাকে অবলম্বন করে কবি যখন কাব্য রচনা করেন তখন হয়েও আনন্দ দান করে। এই আনন্দকে সাহিত্যাপশকার তিনি এই পার্থিব শোককে কল্পরথে অপার্থিব সৌন্দৰ্য্যধামে নিয়ে যান, তাই করুণরসাত্মক কাব্য পড়েও আমরা দুঃখিত না হয়ে হই আনন্দিত। উৎকট শারীরিক যন্ত্রণার অভিব্যক্তিও যে স্বন্দর ও আনন্দময় হতে পারে তার উদাহরণ মাইকেল এঞ্জিলোর Dawn বা “উষা” ছবিখানি। মদিরারস-বিহবল পাশবিকতাও ষে মনোগ্রাহী হতে পারে তার জলন্ত দৃষ্টান্ত কবি বর্ণসের “Jolly Beggers,” পরলোকের পথে যে চলে গেছে সে জীবিত থাকৃলে ব্যক্তি ও সমাজগত কোন স্নবিধ অসুবিধা হ’ত কি-না এ মাপকাঠি দিয়ে শিল্পের বিচার করা চলে না, আর করলেও সেই অকরুণ বিচারপ্রক্রিয় প্রতিপাদ্য করুণ রসের চেয়ে নিতান্ত কম করুণ হম্বে ওঠে না । মনে রাখতে হবে কাব্যের আনন্দও লোকোত্তর আনন্দ । লটারীতে লাখ টাকা পাওয়া গিয়েছে শুনলে কার না আনন্দ হয় ? তাহলে এই অভাবিত অর্থপ্রাপ্তির ব্যাপারকেও কি বলতে হবে কাব্য ? না, সাংসারিক লাভলোকসানের বুদ্ধি থেকে উদ্ভূত যে আহলাদ তার অলৌকিকতা কোথায় ? ধীজনস্য আহ্নাদস্ত ন লোকোত্তরতম্। প্রয়োজনে আনন্দ নেই।--তাই সে অসুন্দর ; অভাবের ঘরে রসদ জোগানই যে তার কাজ। প্রয়োজনের অতীত যা তাই ঐশ্বর্ঘ্যের প্রাচুর্ঘ্যে মহীয়ান—ম্বন্দরের মন্দিরে তাই সন্ধায়জনের আনন্দময় পরিচয়পত্র ! তবেই দেখা গেল বিভাবের সাহায্যে বাসনারূপে অবস্থিত রতি প্রভৃতি স্থায়িভাব রস অথবা রসাস্বাদনের অঙ্কুর অবস্থায় উপনীত হয়। অর্থাৎ একে বলা যেতে পারে তথ্যের সত্যে রূপান্তর। কোন্‌ কুহক এই অসাধ্য সাধন করে ? কবিপ্রেরণা বা কল্পনা। বুদ্ধির দিক থেকে বিচার-বিমর্শের সাহায্যে বহির্জগৎ ( আমাদের আত্মকেন্দ্রের বাহিরে ষে জগৎ ) থেকে আমরা পাই সত্যের সন্ধান-অনন্ত কাৰ্যকারণপরম্পরার শৃঙ্খলে বাধা যে সত্য তাকে আমরা লাভ করি জৰিক্ষিপ্ৰ বিচারবুদ্ধির সহায়তায়। কিন্তু দার্শনিৰ বা তুলনা করেছেন ব্ৰহ্মাস্বাদের আনন্দের সঙ্গে। অপূর্ণ প্রকৃতির মধ্যে যে পরিপূর্ণতার ব্যঞ্জন রয়েছে—পরিচ্ছিন্ন বিখলয়ের মধ্যে সম্পূর্ণ সঙ্গীতের যে অভ্রান্ত ইঞ্জিত রয়েছে কবি-মনে তার অনির্বচনীয় স্বযমাটুকু ধরা পড়েই। বুদ্ধির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে যা সত্য, আত্মসাধনার ক্ষেত্রে যা কল্যাণ, কবিকল্পনার দিক থেকে তাই আবার স্বন্দর। তাই ইউরোপে প্লেটে ও ভারতে পুণ্যতপা ঋষির পুনঃপুনঃ ঘোষণা করেছেন এই সত্যশিবসুন্দরের বাণী। আনন্দময় সত্যের অপর নাম স্বন্দর–হৃদয়ের কাজ আনন্দ দান ও আনন্দ গ্রহণ ৷ কবি দেখেন হৃদয় দিয়ে—তাই কবির স্বপ্নলব্ধ সত্য হয় সুন্দর। কীটসূও তার Grecian Urn কবিতায় অনেকট এই ভাবেরই ইঙ্গিত করেছেন। কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থ কাব্যের স্বত্র দিয়েছেন emotion recollected in tranquillity also own ogró যখন মনের ওপর কেবল এসে লেগেছে ভাবের একটা প্রকাও ধাক্কা ( আলঙ্কারিকদের মতে উদ্দীপনা ) তখন প্রকাশ সম্ভব নয়, কেন-না সেটা আত্মপ্রকাশের পূৰ্ব্বে ব্যাকুলতার অবস্থা । সংবেদনার পরে যখন ঐ ভাব সম্বন্ধে সম্বিং জেগে ওঠে, অর্থাৎ আবেগময় অস্ফুট ভাবকোরক যখন মনোলোকে ( imagination ) সৌন্দৰ্য্যময় প্রফুল্ল প্রস্থনে রূপায়িত হয়, বহিঃপ্রকাশের প্রসঙ্গ আসে তখনই । অনুপ্রেরণাবলে কবি সুন্দরকে লাভ করেন, বহিঃপ্রকাশের কুশলতায় তাকে সহৃদয়জনের হৃদয়সংবেদ্য করে তোলেন, ভাবকে রসে পরিণত করেন। নূতন মৃৎপাত্রের যে প্রচ্ছন্ন মৃদ্ধ সৌরভ আছে তা যেমন তাতে জল না ঢাললে বোঝা যায় না, সেই রকম সহৃদয় জনের হৃদয়ে রতি প্রভৃতি অব্যক্ত অবস্থায় বর্তমান —কাব্যপাঠ অথবা শ্রবণে মনের সেই রুদ্ধ উৎস সহসা মুক্ত হয়ে যায়—প্ৰাণে অপূর্ব সৌরভ তরঙ্গিত হয়ে ওঠে । এই অবস্থায় ভাব রসরূপ লাভ করে । কারণ, “জাস্বাদ্যতে ইভি রস?—ভাবের জাস্বাদিত অবস্থার নামই