পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যুদ্ধতে পারছি মা'র কতদূর ভবিষ্যৎদৃষ্টি ছিল " “তুমি যাই বলে, আমি সে-বন্ধন মানিনে। যখন আমি তোমার মত ভাইয়ের বন্ধনও ছিন্ন করতে প্রস্তুত হয়েছি, তখন আমি জার কোন বন্ধনে বাধা পড়ব ?” "বেশ, বেশ, তোর যা খুণী তাই করিস। আমরা ত দিখিা খেয়ে-দেম্বে বসে গল্প করছি, এ-সময় কিশোর কি করছে জানি ? সে জেলখানায় গিয়ে একটা মোটা চটের মত হাফপ্যান্ট পরে, সন্ধ্যার সময় লোহার খালায় ক’রে মোট চালের ভাত ও যৎসামান্য তরকারি কি জলের মত ভাল থেয়ে—তাতে সকলের পেটও ভরে না-লোহার বাটিতে জল থেমে দু-তিন শ’ চোরডাকাত খুনী গুণ্ডার সঙ্গে একটা লম্বা ঘরে, একটা ঢিপির উপর, মোট কম্বল বিছিয়ে গুয়ে আছে,--আর আধ অন্ধকারে কড়িকাঠ গুণছে ।” দাদার এই সব কথা শুনিয়া আমার চোখে জল আসিল । জামি তাহ গোপনে মুছিয়া বলিলাম, “ও, জেলে এত কষ্ট ! দাদা, তুমি কি বলছ ! তবে ভদ্রলোকের সেখানে কি করে থাকেন ?” দাদা বলিল, “জেলখানা ত ভদ্রলোকের জন্যে নয় । সেখানে কি কাজ করতে হয় শুনবি ? হাতুড়ী দিয়ে ইট ভাঙা, জাতায় *ম ভাঙা, ঘানিতে সরষে পিষে তেল বের করা ইত্যাদি ।” আমি বলিলাম, “ভদ্রলোকদেরও এই কাজ ?” দাদা বলিল, “জেলখানায় ভদ্রলোক ছোটলোকের কোন পার্থক্য নেই, সেখানে সবাই সমান। তবে কোন কোন সময় অনুগ্রহ করে ভদ্রলোকদের লেখাপড়ার কাজ দেয়। কিন্তু আজকাল এত বেশী ভদ্রলোক জেলে যাচ্ছেন, যে, তাদের জন্তে এত লেখাপড়ার কাজ কোথায় পাবে ?” আমি বলিলাম, “তুমি এ-সব খবর কি ক’রে জানলে, বা বলিল, “আমি জেলফের লোকদের কাছে শুনেছি। বা এখন গুতে ধা-রাত হয়েছে।” এই ৰলির দাদা উঠিল। আমিও আমার ঘরে গেলাম। ৰিণ্ড জমি যে-সকল কথা শুনিলাম, তাহাতে আর জামার শঙ্কা গ্রহণ করিতে ইচ্ছা হইল না। আমি মেঝের উপর ই প্রবাসী ; কামড়ে ও নানা চিন্তার ভাল ঘুম হইল না। অনেক স্বশ পৰ্যন্ত কিশোরের কথা ভাবিতে ভাবিতে হৃদয় কারণ্যে পূর্ণ হইল । সকালে প্রমীলা আসিয়া আমাকে সেখানে দেখিয়া দাদাকে ডাকিয়া দেখাইল । দাদা বলিল, “কি রে নীর, এ আবার ৰি ঢং ? তুই সারারাত্তির বুঝি এখানে গুয়েছিলি ?” আমি চক্ষু মুছিয়া উঠিয়া বসিয়া বলিলাম, “স্থা। এ আমার প্রায়শ্চিত্ত ।” দাদা দশটার সময় খাইমা কলেজে গেল, আমি আহার করিবার সময় মাছ ও দুধ খাইলাম না। প্রমীলা অনেক সাধাসাধি করিল। আমি বলিলাম, “এও আমার প্রায়শ্চিত্ত ” দাদা কলেজ হইতে আসিলে বেলা চারিটার সময় একজন ভদ্রলোক তাহাকে ডাকিলেন । দাদা বৈঠকখানায় তাহার সঙ্গে বসিয়া অনেক ক্ষণ আলাপ করিল• এবং পরে আমাকে আসিয়া বলিল, “যিনি এসেছেন উনি হচ্ছেন কিশোরের বড় ভাই । টেলিগ্রাম পেয়ে কৃষ্ণনগর থেকে আজ সকালে এসে পৌছেছেন। কিশোর যে-মেসে থাকে সেখানে আছেন। উনি কিশোরের জন্য অনেক দুঃখ প্রকাশ করলেন। তাহাকে খালাস করবার কোন উপায় আছে কি-না আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ।” আমি বলিলাম, “তুমি তাকে কি পরামর্শ দিলে ?” দাদা বলিল, “পরামর্শ আর কি দেব ? আমি বললুম, কিশোর যখন নিজেকে ডিফেণ্ড ( নিজের পক্ষ সমর্থন ) করে নাই, তখন আর থালাসের উপায় কি ?” তিনি বলিলেন, "এ মোকৰ্দমায় ত আপিল নেই, হাইকোর্টে মোশুন করা যায়, কিন্তু তা’তে কোন ফল হবে ব’লে মনে হয় না । আমি কিশোরের সঙ্গে জেলখানায় গিয়ে দেখা করতে চাই, আমি ত সব জায়গা চিনি না, আপনি আমার সঙ্গে যাবেন ?” - —আমি বললুম, “ত অবশ্যই যাব, কাল সকালে যাওয়া যাবে ।” পরদিন দাদা সকাল সাতটার সময় বাহির হইয়া গেল, এবং বেলা এগারটায় সময় ফিরিয়া আসিয়া বলিল, তাহার জেলখানায় গিয়া কিশোরের সঙ্গে দেখা করিয়াছে। কিশোর বেশ প্রফুল্লচিত্তে সেখানে আছে। তার দাদাকে হাইকোর্ট মোগুন করিতে নিযেধ করিয়াছে। সে বলিল, “এই তিন মাস ত দেখতে দেখতে কেটে যাবে।” . . . . .