পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*** রছিলাম। আমার একপাশে দাদা আর একপাশে শঙ্কর বসিল। আমার সম্মুখে যাহারা বলিয়াছিল তাহারা অাড়চোখে আমাকে দেখিতে লাগিল। আমি নিতান্ত অস্বস্তি বোধ করিতে লাগিলাম। ধৰ্ম্মতলায় নামিয়া আমরা কালীঘাটের ট্রামে উঠিলাম। সে গাড়ীতে তত ভিড় ছিল না। আমরা সামনের সটে বসিলাম। তাহাতে অনেকটা স্ববিধা বোধ করিলাম। যাহা হউক, ভবানীপুরে ট্রাম যেখানে থামিল সেখান হইতে আমরা পদব্রজে পাচ মিনিটের মধ্যেই সেই স্কুলে পৌছিলাম। - শঙ্কর সেক্রেটারীর নিকট হইতে একখানা চিঠি আনিম্নাছিল, আমি সেই চিঠি হাতে করিয়া হেড মিষ্ট্রেসের সঙ্গে দেখা করিলাম। দাদ ও শঙ্কর আপিস-ঘরে বসিল । হেড মিষ্ট্রেস মিস্ সাধনা কাঞ্জিলাল বি-এ, একটি ব্রাহ্ম মহিলা । তাহার বয়স প্রায় ৪০ বৎসর, মুখ গম্ভীর ও বিরস। আমি নিজের পরিচয় দিয়া তাহার সম্মুখে দাড়াইলাম। তিনি সেক্রেটারীর চিঠি পড়িয়া আমাকে সম্মুখের একটা চৌকিতে বসিতে বলিয়া আমার আপাদমস্তক নিরীক্ষণ করিয়ু বলিলেন, “আপনার বয়স ত খুব কম দেখছি। আপনি বলব, না ‘তুমি বলব ?” আমি হাসিন্ধা বলিলাম, “আমাকে ‘তুমিই বলবেন ?” “বি-এ পড়া ছাড়লে কেন ?” “ছাড়িনি, তবে কলেজে আর পড়ব না।” “নন-কো-অপারেশন করেছ বুঝি ?” “এক রকম তাই।” “এ কাজে টিকে থাকবে ত?” “সেই রকমই ত ইচ্ছা ।” “অর্থাৎ বিয়ে না-হওয়া পৰ্য্যস্ত। এতদিন বিয়ে হয় নাই কেন ?” “বিয়ের সঙ্গেও নন-কো-অপারেশন করেছি।” “নন কো-অপারেশন করে কয়দিন থাকবে, যে মুন্দর চেহারা (* * • এই বলিয়া মিস্ কাঞ্জিলাল যেন একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ত্যাগ করিলেন। আমি বলিলাম, “আমাকে কোন ক্লাসে পড়াতে হবে ?” - তিনি বলিলেন “হা, এখন কাজের কথা বলছি। চল, তোমাকে একবার সব ক্লাস কয়টা দেখিয়ে আনি। 39BD আজ তিন মাস স্কুল হয়েছে, এখনও উপরের ফ্লাসে বেশী ছাত্রী হয় নাই—ম্যাটিক ক্লাসে মাত্র দুটি মেয়ে, ক্লাল নাইনে ( IX ) চারটি, ক্লাস এইটে (VIII) ছয়টি, ক্লাস সেভেন (WII) বারটি নীচের ক্লাসেই বেশী মেয়ে ছে প্রায় একশ্বতটি। আর একজন গ্রাজুয়েট টীচার আছেন, শ্ৰীমতী রমলা চাটুজ্যে, তিনি আর আমি প্রথম দুই ক্লাসে পড়াই । তোমাকে ক্লাস এইট ( VIII ) আর ক্লাস সেভেনে (WII) পড়াতে হবে।” এই বলিয়া তিনি আমাকে একে একে সব ক্লাসে লইয়া গেলেন। রমলা চাটুজ্যে এবং অন্যান্ত টীচারদের সঙ্গেও আলাপ করিয়ে দিলেন । রমলার বয়স পচিশের কাছাকাছি, বেশ হাসিখুণী মানুষ। তাহার সঙ্গে আলাপ করিয়া স্বর্থী হইলাম, এবং দুই-একটি কথাতেই তাহার সঙ্গে আমার বেশ ভাব হইল। হেডমিষ্ট্রেস এই সব দেখাগুনার পরে আমাকে বলিলেন, “আজ তুমি বাড়ি যাও, কাল থেকে পড়ানো আরম্ভ করবে। ঠিক এগারটার সময় ক্লাস বসে। তোমার বাড়ি কোথায় ? কোথেকে আসবে ?” আমি বলিলাম, “আমার বাড়ি পটলডাঙ্গায়, আমার দাদার সঙ্গে আজ এসেছি, তার একটি বন্ধুও সঙ্গে আছেন।” “কিন্তু রোজ রোজ কি তার তোমায় সঙ্গে আনবেন ? তুমি ছেলেমানুষ, একলা কি করে এতদূর আসবে ? আমরা অবশু পারি, তুমি কি পারবে ?” “আমাকেও অবশ্য পারতে হবে । আমি আপনাদের মত স্বাবলম্বন শিক্ষা করতে চাই ।” তিনি বলিলেন, “বেশ, বেশ । আচ্ছ, তুমি আজ যেতে পার। কাল আর সব কথা হবে ।” এই বলিয়া তিনি আমাকে বিদায় দিলেন, আমি দাদার সঙ্গে বাড়ী আসিলাম । wరి পরদিন শঙ্কর তাহার ল-ক্লাস হইতে দশটার সময় আমাদের বাড়ীতে আসিল। আমি তাহার সঙ্গে স্কুলে রওনা হইলাম। আমরা ট্রামের জন্য অপেক্ষা করিতেছি, এই সময়ে একটা লোক—বয়স তাহার কুড়ি-বাইশ, ফ্যাশন করিয়া চুলছাটা ও টেড়িকাট, চোখে চশম খাট,