পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ای ૨૦૧ .م নাকের তলায় এক ইঞ্চ লম্বা, সিকি ইঞ্চ চওড়া গোঁফ, তাহার দুই আগা ছট, পাখীর ডানামেল-স্কলারযুক্ত গলাখোলা ময়লা শার্টের উপর ময়লা বুক খেলা কোট পরা–একটু দূরে দাড়াইয়া দাত বাহির করিয়া আমাকে দেখিতে লাগিল। শঙ্কর তাহার প্রতি কোপকটাক্ষ নিক্ষেপ করায় সে বলিল, “বাবা, ফুৰ্ত্তি করতে যাচ্ছ, আমাকে সঙ্গে নেবে ?” এই কথা শুনিয়া আমার আপাদমস্তক ক্রোধে জলিয়া উঠিল। আমার হাতে একটা চাবুক থাকিলে আমি তৎক্ষণাৎ তাহার মুখে এক ঘা বসাইয় দিতাম। শঙ্করও অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হইয়া বলিল, “ইউ ক্লাডি রাঙ্গেল! তোর চোখ নেই, ভদ্রমহিল| চিনতে পারছিস নে ?” সে লোকটী বিদ্রুপের হাসি হাসিয়া বলিল, “বাবা, ভদ্রমহিলা ত আজকাল সবাই হয়--ভদ্রমহিলার মুখে ঘোমটা থাকে, কপালে সিন্দুর থাকে,- ভদ্রমহিলা এরকম রাস্তায় বেরোয় না । তোমাদের কোথায় যাওয়া হচ্ছে, ইডেন গার্ডেনে, ন নৌকাবিহারে ?” শঙ্কর তাহার কথার উত্তর দিতে-ন-দিতেই ট্রাম আসিয়া পড়িল, আমরা ট্রামে উঠিয়া পড়িলাম। আমার মন ঐ গুণ্ডাটার কথা শুনিয়া অত্যন্ত তিক্ত হইয়া উঠিল, কারণ আমি জীবনে কখনও এরূপ অপমানসূচক কথা শুনি নাই। আমার অত্যন্ত কাল্লা পাইতে লাগিল এবং একবার মনে হইল ট্রাম হইতে নামিয়া বাড়ী ফিরিয়া যাই । যাহা হউক, আমি অতি কষ্টে আত্মসংবরণ করিলাম। শঙ্করও ক্রোধে অত্যন্ত উত্তেজিত হইয়াছিল, নিম্ফল ক্রোধ চাপিতে গিয়া তাহার মুখ-চোখ বিকৃত ভাব ধারণ করিল। আমরা তাড়াতাড়ি ট্রামে উঠিলাম বটে, কিন্তু ট্রামে অত্যন্ত ভিড়, বসিবার জায়গা পাওয়া কঠিন। আমাকে দাড়াইয়া থাকিতে দেখিয়া একটি বুড়া ভদ্রলোক সরিয়া বসিয়া জামাকে একটু জায়গা করিয়া দিয়া বলিলেন,—“ম, তোমাদের কি এরকম ট্রামে যাওয়া সাজে ?” আমি কোন কথা না বলিয়া চুপ করিয়া রহিলাম। শঙ্কর আমার পাশে দাড়াইয়া রহিল। আমাদের চোখমুখের ক্রুদ্ধ ভাব লক্ষ্য করিয়া সেই ভদ্রলোকটি বলিলেন, “তোমরা স্কুইজন বুঝি ঝগড়া করে বাড়ী থেকে বেরিয়েছ ? তা ম৷ স্বায়ু সঙ্গে যাচ্ছ, তার উপর রাগ করলে চলবে কেন ?” শঙ্করের দিকে চাহিয়া আবার বলিলেন, “বাব, তুমি বুৰ বসতে পারলে না ? আমি এখনই বৌবাজারের মোড়ে নেবে যাব, তুমি এখানে বসতে পাবে। বাব, দুই একটা মিষ্টি কথা বলে মাকে বুঝিয়ে-বিয়ে নিয়ে যাও।” বৃদ্ধের এই সকল কথা শুনিয়া অতি দুঃখেও আমার হাসি পাইল। আমি অতিকষ্টে হান্ত সংবরণ করিলাম। - শঙ্কর বলিল, “আমাদের মধ্যে কোন ঝগড়া হয় নি ।” বৃদ্ধ বলিলেন, “বেশ বাবা, বেশ । তোমরা কোথায় যাবে ?” শঙ্কর বলিল, “ভবানীপুরে।” “তুমি এবার আমার জায়গায় বসো” এই বলিয়া বৃদ্ধ নামিয়া গেলেন। শঙ্কর উাহার জায়গায় আমার পাশে বসিল । একটু পরে আমি লক্ষ্য করিলাম, আমাদের সম্মুখের বেঞ্চে দুইটি যুবক আমাদের দিকে আড়চোখে তাকাইয়া ফিস্ ফিস্ করিয়া কি বলিতেছে আর হাসিতেছে । আমি শঙ্করের গা টিপিয়া দেখাইলাম। শঙ্কর তাহাদিগকে লক্ষ্য করিয়া বলিল, “আপনার হাসছেন কেন ?" একটি ছোকরা মুখ হইতে হাসি মুছিয়া ফেলিয়া বলিল, “না--এমনি । আপনার কোথায় যাচ্ছেন ?” শঙ্কর বলিল, “ভবানীপুরে ।” সেই ছোকরাটি বলিল, “মাপ করবেন মশায়, একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি কি ?” শঙ্কর বলিল, “কি বলুন।” “আপনার দুইটি ভাইবোন, না আর কিছু ? আমি বলছি ভাইবোন, ইনি বলছেন ভাইবোন নম্ন " “আপনার অতুমান সত্য নয় ।” তবে কি ?” শঙ্কর হাসিয়া বলিল, “উই আর ফ্রেগুস্, তবে একটা সম্পর্কও আছে ।” অন্য ছোকরাটি বলিল, “আপনার কলেজে বুঝি একসঙ্গে পড়ছেন ?” 唱 “ন, আমি 'ল' পড়ছি, উনি বি-এ পড়েন ।” এই সময় গাড়ী আসিয়া ধৰ্ম্মতলায় থামিল, আমরা নামিয়া পড়িলাম। সেই ছোকরা দুটিও আমাদিগকে নমস্কার ।