পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

३४e* করিয়া নামিল। আমরা কালীঘাটের গাড়ীতে উঠিা বসিলাম । এই গাড়ীতে মোটেই ভিড় ছিল না। আমরা সকলের সামনে গিয়া দুখান ছোট বেঞ্চে পাশাপাশি বসিলাম। আমি বলিলাম, “জাঃ বাচা গেল। শঙ্করদ, আজ আমরা কি কুক্ষণে বাড়ী থেকে যাত্রা করেছিলুম।” o শঙ্কর হাসিয়া বলিল, “এই ত আমাদের বেশ একটা সম্পর্ক আছে। এতদিন এ-রকম ডাকেন নি কেন ?” আমি হাসিয়া বলিলাম, “দরকার হয় নি বলে ডাকি নি । আজ আমার ট্রামে আসতে গিয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা লাভ হ’ল । প্রথমে সেই গুণ্ডাট, তার পরে সেই মজার বৃদ্ধ, আর শেষটায় এই দুটি ছোকরা । সে গুণ্ডাটার কথা মনে হ’লে কিন্তু এখনও আমার সর্বশরীর রাগে জলে উঠে।” “এতদিন ঘরের ভিতরে ছিলেন, বাহিরের ব্যাপার ত টের পান নি। সংসারের কর্দমাক্ত পথে বার হলেই কাদার ছিটে সময় সময় গায়ে লাগে । এ-সব মনে করলে আর পথ চলা হয় না।” “তা ত দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু আমার ভয় হচ্ছে, আপনি আজ সঙ্গে ছিলেন বলে অনেকটা বাচোয় । আমি একলা কি ক’রে এতটা পথ রোজ রোজ যাওয়া-আসা করব তাই ভাবছি।” “আমি ত রোজই সকালে ল-ক্লাসে যাই, যদি বলেন ত আমি রোজই আপনাকে সঙ্গে ক’রে আনতে পারি, ফেরবার বেলায়ও আমি আপনাকে সঙ্গে ক’রে বাড়ী পৌছে দিতে পারি, তবে আপনি যে-সময়ে আসবেন তখন গাড়ীতে ততটা ভিড় থাকৃবে না। প্রাতঃকালেও আমরা আজ যেসময়ে বেরিয়েছিলুম তার একটু আগে বেরুতে পারলে এত ভিড় হবে না।” “শঙ্কর-দ, আমি আপনাকে এতটা কষ্ট দিতে চাই নে । আপনার ল-ক্লাসের কাজ হয়ত তত শীঘ্ৰ শেষ হবে না।” “আমি ঠিক দশটার সময় আমাদের কলেজের সামনে ফুটপাথের উপর আপনার অপেক্ষ করব, তবে যে-দিন জাগে ছুটি হবে সেদিন আপনাদের বাড়ীতেও যেতে পারি।” “শঙ্কর-দ, আপনি আমার জন্য যা করছেন, এই ঋণ কি ক’রে শোধ দেব জানি না ।” » RESTEIG 'SO80 শঙ্কর হাসিয়া বলিল, “ঞ্চণ শোধ দেবার দরকার নেই, পুজি হয়ে থাক, আর তার স্বদ বাড়তে থাকুক।” আমাদের এইরূপ নানাপ্রকার কথাবার্তা হইতে হইতে আমরা ভবানীপুর আসিয়া পৌছিলাম। ট্রাম হইতে নামিলে শঙ্কর আমাকে সঙ্গে করিয়া স্কুলের সম্মুখের রাস্ত পৰ্যন্ত লইয়া গেল। ঘড়ী খুলিয়া দেখিলাম, আমি ১০ মিনিট লেট হইয়াছি । স্কুলে ঢুকিতেই হেড মিষ্ট্রেস মুখ ভার করিয়া বলিলেন, “আজ প্রথম দিনই তুমি লেট করে এলে, ঐ ঘড়ীর দিকে চেয়ে দেখ। তুমি নিজে স্কুল-কলেজে পড়েছ, সময়ের মূল্য অবশুই জ্ঞান ৷” আমি বলিলাম, “মাপ করবেন, আজ ট্রামের গোলযোগে একটু দেরি হয়েছে।”

  • অন্য দিন সকাল সকাল বাড়ি থেকে বেরুবে ।” “ত অবশ্বি বেরুবো, তবে আমি র্যার সঙ্গে আসি, তিনি ঠিক সময়ে এলে হয় ।”

“ঐ যে যুবকটিকে তোমার সঙ্গে দেখলুম, উনি তোমার কে ?” “উনি আমার দাদার শাল, উনি আমাকে অনেক সাহায্য করছেন ।” “এ সব ছোকরাদের সঙ্গে তোমার বেড়ান ভাল দেখায় না । যাক সে কথা, এখন ক্লাসে যাও।” হেড মিষ্ট্রেসের এই সব কথা শুনিয়া আমার মন বিরক্তিতে ভরিয়া উঠিল । এই লোকের অধীনে আমাকে চাকরি করিতে হইবে। ভগবান আমার সহায় হউন ! আমার মন অত্যস্ত দমিয়া গেল। আমি অত্যস্ত বিষগ্ন অস্ত:করণে ক্লাসে গিয়া বসিলাম ও পড়ানোর কাজ আরম্ভ করিলাম । কিন্তু অন্তমনস্কভাবে পড়াইতে বসিয়া ভাল পড়ান হইল না, তাহা আমি নিজেই বুঝিতে পারিলাম। টিফিনের ঘণ্টায়ু রমলার সঙ্গে দেখা হইল। প্রথম দিনই আমাদের বেশ ভাব হইয়াছিল। আমি তাহাকে একটু নিভৃতে ডাকিয়া লইয়। বলিলাম, "ভাই আমার বুঝি এখানে চাকরি করা পোষায় না। আপনাদের হেড-মিষ্ট্রেস কি রকম লোক ?” রমলা বলিল, “সে কথা আর বলে না, ভাই। ওঁর যে কত গুণ, তা বলে শেষ করা যায় না । আমিও জাহ্ম,