পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

_অগ্রহায়ণ কিন্তু উনি নিজেকে পরম ধাৰ্ম্মিক ও কর্তব্যপরায়ণ ব’লে মনে করেন। অন্তের কোন একটু ক্রটি দেখতে পারেন না। অত্যন্ত খিটখিটে স্বভাব। বেশী বয়স পর্যন্ত অবিবাহিত থাকলে অনেকের যে দোষ হয় তাই। নিজের চেহারা ভাল নয়, সেজন্ত যে-সকল মেয়েরা সুন্দরী তাদের ঈর্ষা করেন। উনি হয়ত অনেক লোকের সঙ্গে প্রেমে পড়তে চেষ্টা করেছেন, কিন্তু ওঁর ঈপ্সিত পুরুষেরা বোধ হয় মেজাজ ও চেহারা দেখে ভয়ে পালিয়েছে। সেজন্য যদি কোন তরুণীর সঙ্গে কোন যুবককে মিশতে দেখেন, তবে উনি তা সহ করতে পারেন না ।” আমি বলিলাম, “ভাই, তোমার ত লোকচরিত্র অধ্যয়নের আশ্চৰ্য্য ক্ষমত আছে । আমি আজ একদিনেই মিস্ কাঞ্জিলালের এই সকল গুণের কিছু কিছু আভাস পেয়েছি। তুমি কি ক’রে টিকে আছ ?” রমল বলিল, “কি ক' ভাই, যেখানেই চাকরি করতে যাব সেখানেই ত মনিবের মন জুগিয়ে চলতে হবে । তোমার আজ একেবারে নতুন বলে মনে এতটা কষ্ট হচ্ছে, ক্রমে এ-সব সয়ে ফলে ।” শ্রীহট্টের হিন্দুসমাজে জঙ্গুষ্ঠ জাভি ও লারীর স্থান వలs আমি কাহারও তাবে থাকিব না বলিয়া চাকরি করিতে বাহির হইয়াছি, তাহার পরিণাম কি তবে এই ? বেলা চারিটার সময় স্কুলের ছুটি হইল। আমি বাহিরে আসিয়াই দেখিলাম, শঙ্কর অপেক্ষা করিতেছে। কিন্তু হেড মিষ্ট্রেসের গঞ্জনার পর শঙ্করকে সেখানে দেখিয়া আমি সন্তুষ্ট হইলাম না। তাহার সঙ্গে না গিয়াই বা করি কি ? আমি তাহার সঙ্গে মিলিত হইয়া দুই জনে ট্রামে গিয়া উঠিলাম। ধৰ্ম্মতলা পৌঁছিয়া আমি শঙ্করকে বলিলাম,“শঙ্কর-দ, এখন ট্রামে বেশী ভিড় নেই, আমাকে একটা সামনের বেঞ্চে তুলে দিয়ে আপনি বাড়ী যান। আমি নিজেই যেতে পারব, আপনাকে আর কষ্ট দেব না ।” - - শঙ্কর বলিল, “আপনার সঙ্গে যেতে আমার একটুও কষ্ট হয় না । আচ্ছা, আপনি এবেল একলা ধাওয়ার এক্সপেরিমেন্ট (পরীক্ষা) করে দেখুন। কাল সকালে সাড়ে নয়টার সমম্ব আমি আপনাদের বাড়ী যাব।” . এই বলিয়া আমাকে একটা খামবাজারের ট্রামে তুলিয়৷ শঙ্কর চলিয় গেল। ক্রমশঃ শ্রীহট্টের হিন্দুসমাজে অস্পৃশ্য জাতি ও নারীর স্থান শ্ৰীকৃষ্ণপদ ভট্টাচাৰ্য্য দুই বৎসরেরও পূৰ্ব্বে হঠাৎ একদিন সংবাদপত্রে দেখিলাম স্বনামগঞ্জ মহকুমার প্রায় দুই সহস্ৰ পাটনী ও নমঃপূত্র ইসলামধৰ্ম্ম গ্রহণ করিতে বদ্ধপরিকর হইয়াছে। এই সংবাদ যখন চতুদিকে বিস্তৃত হইয়া পড়িল, তখন নিখিলভারত হিন্দু মহাসভার সভাপভি হইতে আরম্ভ করিয়া আৰ্য্যসমাজ ও রামকৃষ্ণ মিশনের কল্পিগণের ভিতরেও সাড়া পড়িয়া গেল। সকলের চোখে মুখেই যথাসম্ভব দুঃখদৈন্তের চিহ্ন পরিস্ফুট হইয়া উঠিল। কলিকাতা হইতে আধাসমাজের অক্লাস্ত কৰ্ম্মী ঐযুক্ত দীনবন্ধু আচাৰ্য বেদশাস্ত্রী প্রভৃতি শ্ৰীহট্ট অভিমুখে ছুটলেন। পুত্ৰকস্তার মৃত্যুতেও বুঝি মানুষ এত ব্যাকুল হয় না। স্বৰ্থস্বাচ্ছন্দকে তুচ্ছ করিয়া শুষ্কমূখে যখন সুনামগঞ্জে গিয়া উপস্থিত হইলেন, তখন উচ্চ শ্রেণীর অনেক ব্রাহ্মণ কায়স্থ, তাহাদের মুখ হইতে এই সংবাদ শুনিয়া কেহ কেহ বলিলেন, “তাই নাকি ? আমরা ত ইহার কিছুই জানি না । তা ইহার আর কি প্রতিবিধান আপনার করিবেন ? ইহা ত আমাদের এতদঞ্চলে সৰ্ব্বদাই হইতেছে। আজ না হয় সঙ্ঘবদ্ধভাবে জাত্যন্তরিত হইতেছে। নতুবা দুই-একজন করিয়া প্রায়ই মুসলমান হয়। আপনার তথায় যাইবেন না, ফিরিয়া যাউন।” যাহারা জানিতেন র্তাহারা কহিলেন, “আপনারা কি পাগল হইয়াছেন ? ঐখানে গেলেই উহারা আপনাদের প্রাণসংহার করিবে: