পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আগ্রহায়ণ । গতিকে আসিয়া পড়ে তবে তাহাকে দিয়া স্বভদ্রকে সংবাদ দেওয়া যায়। কিন্তু পিওন কাহার চিঠি লইয়া আসিবে ? যদি পিতার কাছ হইতে চিঠি আসে ? পিতার কথা মনে হইতেই অজয়ের দুৰ্ব্বল বুকটা রুদ্ধ অশ্রুর বিপুল আবেগে শতধা হইয়া ভাঙিয়া যাইতে লাগিল। মনে পড়িল, তাহার সামান্ত একটু মাথা ধরিলে উদ্বেগে তাহার বাবার আহারনিদ্র ঘুচিয়া যাইত। একটুখানি তাহার গা তাতিলে তিনি মুহূর্তের জন্য তাহার কাছছাড়া হইতেন না। যখন সে অনাহারে মরিতে বসিয়াছিল, তখন পিতার প্রতি কোনওদিন এতটুকু অভিমান তাহার হয় নাই, সে জানিত অবস্থাটাকে সে নিজে সাধ করিয়া ডাকিয় আনিয়াছে, পিতাকে সেদিক্কার সমস্ত দায়িত্ব হইতে ইচ্ছা করিয়াই মুক্তি দিয়াছে। কিন্তু আজ , যে সে সত্যসত্যই মরিতে বসিয়াছে, ইহা ত তাহার নিজের কোনও অপরাধের দরুণ হয় নাই । ক্রমাগত ফুপাহমা কাদিয়া বুকের ব্যথা যখন আরও বাড়িয়া গেল তখন পিতার চিস্তাকেও জোর করিয়া মন হইতে দুর করিয়া দিল। বাহিরে মুষলধারে বৃষ্টি নামিয়াছে, অবিরাম বারিপাতের ঝঝর শব্দকে কীনে করিয়া দুৰ্ব্বল দেহে ঘুমাইতে চেষ্টা করিতে লাগিল, ঘুম কিছুতেই আসিল না। একএকবার তন্দ্রার মত ঘোর চেতনাকে আচ্ছন্ন করিয়া আসে, তখনই নিজের ঘোরতর বিপদের কথা মনে হুইয়া চমকিয়া জাগিয়া যায়। মনটাকে শান্ত করিবার জন্ত ঐন্দ্রিলাকে ভাবিতে চেষ্টা করিল, বুকের দ্রুত স্পননের সঙ্গে মিলাইয় সেই অপূৰ্ব্ব ধ্বনি-ঐশ্বৰ্য-ভরা নামটিকে বহুক্ষণ সে মন্ত্রের মত করিয়া জপ করিল। ক্রমে ভিতর এবং বাহিরের অন্ধকার ভরিয়া একটি আবেশময় সৌন্দৰ্য্যস্বপ্ন ধীরে তাহার চেতনাকে ঘিরিয়া মোহজাল বিস্তার করিল। আধঘুম আধ-জাগরণে আজও সে অনুভব করিল, এই অপরূপ আবেশ, তাহার চিত্তের এই আনন্দ-বেদন-মিশান অভিনব ব্যাকুলত ঐন্দ্রিলাকে ঘিরিয়া স্পদিত তরঙ্গিত হইতেছে বটে, কিন্তু ইহার কোথায় যেন বীণারও স্পর্শ অতি গভীর করিয়া রহিয়াছে। ঐন্দ্রিলার অনিন্দিত দেহকাস্তি, তাহার দীপ্তিময় মন, এবং এ-সমস্তকে অতিক্রম করিম তাহার চতুর্দিকৃকার যে-একটি নামহীন বিপুল রহস্ত হইতে এই সৌন্দর্ঘ্য স্রোত সহস্রধারায় উৎসারিত হইতেছে, ৰাস্তময়ী বীণাই যেন হাত ধরিয় তাহার পিপালিত श्रृंचन చ్చెఱు চিত্তকে সেই স্রোতের তীরে পথ দেখাইয়া লইয়া আসিয়াছে । নিজের প্রেমের জ্যোতিতে অজয়ের প্রেমকে সে দৃষ্টদান করিতেছে। স্বাধ চেতনায় ইহার বেশী স্পষ্ট করিয়া আর কিছু সে অনুভব করিল না। ধীরে নিদ্রা আসিয়া সৰ অনুভূতিকে মগ্ন করিম দিল । জ্ঞান হইতেই প্রথমে অনুভব করিল, বাতাসে কি একটা পরিচিত উগ্র গন্ধ। কপালে কাহার করম্পর্শ। চোখ তুলিয়া দেখিল, স্বভদ্র। কষ্টে উচ্চারণ করিল, “তুমি ?” স্বভদ্র বলিল, নিতান্ত বাচা তোমার অদৃষ্ট আছে, তাই গিয়ে পড়েছিলাম। যাক, এখনও কথা বলবার চেষ্টা কোরে ন, এই ওষুধটুকু খেয়ে ফেল, তারপর আবার চুপ করে ঘুমোও।” 爱 - দেখিল, মুভদ্রের ওয়েলিংটন স্কোয়ারের বাড়ীতে তাহার পূৰ্ব্বেকার সেই ঘর। ওষুধ খাওয়া হইলে বারণ না মানিয়া । আবার কথা কহিল। বলিল, “এখানে কখন এলাম ? ' ' স্বভদ্র বলিল, “এসেছ এরই মধ্যে একদিন । পরে সৰ শুনো এখন। সম্প্রতি কি রকম বোধ করছ? জরটা ত খুব কমে গিয়েছে।” স্বভত্র আবার তাহার কপালে হাত রাখিল, দুৰ্ব্বল হন্তে চোখের উপর টানিয়া আনিয়া অজয় সেটাকে অশ্রুসিক্ত করিয়া দিল। স্বভদ্র কিছুই বলিল না, অন্ত হাতের আঙুলগুলিকে গভীর স্নেহে নীরবে তাহার চুলের মধ্যে চালনা করিতে লাগিল । পাশের ঘরে বিমানের গলা শোনা গেল, “Some little germ will find you some day....” সঙ্গে সঙ্গে বীণার, "Little germদের একটা খুৰ গুণ আছে, তারা কথায় কথায় কানের কাছে গল ছেড়ে গান ধরে না।” বিস্মিত ভীত দৃষ্টিতে অজয় স্বভত্রের মুখের দিকে চাহিল। মৃদু হাসিয়া স্বভদ্র বলিল, “বীণা দেবী। রোজই স্থবেলা আসছেন।” সঙ্গে সঙ্গেই একটা বড় চামচ হাতে গাছ-কোমর বাধা ৰীণা আরক্ত মুখে ঘরে ঢুকিল। তাহার মুখের স্বাভাবিক স্বচ্ছ রংযেন আগুন তাতে আরও স্বচ্ছ হইয়া গিছে, ভিজ হইতে উধারণের দীপ্তি ফুটিয়া বাহির হইতেছে। ... "