তাহাতে যদিও তাহার ছশ্চিন্তা বিশেষ কিছু কমে নাই, তবু সংবাদ শুনিয়া ভয়ে তাহার হাত-পা যেমন ঠাণ্ডা, হইয় আসিয়ালি, সেই ভয়ের ভাবটা কাল একটু কমিয়াছিল। আজ আবার নূতন কি ঘটিল যে বীণা কাহাকেও কিছু না বলিয়া ভোর হইতেই তাড়াতাড়ি বাহির হইয়া গেল ? হুমত অস্থখ বাড়িয়াছে, টেলিফোনে তাহার ডাক আসিয়াছে। হয়ত বীণা গিয়া অজয়কে দেখিতে পাইবে না। ঐন্দ্রিল বুঝিতে পারিল, ভয়ের উত্তেজনায় তাহার সমস্ত শরীর থরথর করিয়া কঁাপিতেছে। সেই ঝড়ের রাত্রির পর হইতে নিজের অবাধা মনটার সঙ্গে সে নিষ্ঠুর হইয়াই বোঝাপড় আরম্ভ করিয়াছিল। বারম্বার নিজেকে বুঝাইতেছিল, বীণা তাহার পরমাত্মীয়া, অন্ত সব কথা ছাড়িয়া দিলেও, বীণা মুখী হোক ইহাই তাহার কামনা করা উচিত। এমন হইতে পারে, অজয়ের অনভিজ্ঞ নমনীয় মন তাহদের উভয়েরই সম্বন্ধে অব্যবস্থিততার দোলায় দুলিতেছে । ইহাও সম্ভব, ঐজিলা ইচ্ছা করিলে, চেষ্টা করিলে বীণাকে পরাজিত করিয়া তাহার হৃদয় জয় করিতে পারে। কিন্তু বীণার প্রতি প্রচুর আস্তরিক স্নেহ সত্বেও, সে যে তাহার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ক্ষেত্রে নামিতেছে উহা চিন্তা করিতেও যেন তাহার গ্লানি বোধ হইতেছিল। নিজের মনে অন্ততঃ একটা জায়গাতে নিজেকে সমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার অতীত করিয়া সে ভাবিতে চায়। অন্ততঃ একটি মানুষের কাছে সে এমন মূল্য পাইতে চায় যে মূল্য একান্তভাবে তাহার একলারই পাওনা । যাহার জন্য বিনিময়ে ইচ্ছা হইলে সে কিছু দিতে পারে. নাও দিতে পারে। ইহা তাহার অহঙ্কার নহে । ভালবাসাকে এই রকম করিয়াই আশৈশব সে ভাবিত। যাহাকে ভালবাসিত প্রতিদানের আশা না রাখিয়াই বাসিত, এবং কাহারও ভালবাসা ভিক্ষা করিয়া কিম্ব বিরোধ করিয়া পাইয় তাহার মন ভরিত না। শৈশব হইতে আজ পর্যন্ত যেখানে তাহার বড় বন্ধু জুটিয়াছে, তাহদের কাহাকেও নিজে বাচিয়া লে জোটায় নাই, যদিও তাঁহাদের প্রায় সকলৰেই অত্যন্ত নিঃস্বার্থভাবে সে ভালবাসিয়াছে। জাবার সেই একই ... et–St ૩૧e কারণে এমন অনেককে সে ভালবাসিয়াছে যাহার কোনওদিন তাহার মনের সেইদিকৃটাকে ঘূণাক্ষরেও জানিতে পরিবে না। বীণার প্রতিদ্বস্থিতার প্রশ্ন যদি নাও থাঙ্কিত, তৰু ৷ একমাত্র এই কারণেই অজয়কে যে সে ভালবাসে ইহা তাহাকে সে জানিতে দিতে পারিত না। অজয় নিজে হষ্টতে তাহাকে বুঝিয়া লইবে এই অপেক্ষায় শেষদিন পৰ্যন্ত । তাহাকে বসিয়া থাকিতে হইত। সে অঘটন কিরূপে ঘটত তাহা চিন্তা করিবার প্রয়োজনও তাঙ্গর কিছুমাত্র ছিল না, স্বতরাং দুঃগভোগের জন্য স্বনির্দিষ্ট করিয়াই বিধাতা তাহাকে গড়িয়াছিলেন এবং নিজেও লে.তাহ জানিত। তাই সব প্রকারে সব বিষয়ে অঙ্গমের নিকট হইতে নিজেকে দূরে রাধিয়া বীণার সঙ্গে তাহার মিলনের পথকে স্বগম করিয়া দিবে ইহাই সে মনে মনে স্থির করিভেড়িল । - কিন্তু এই তিনদিন নিজের মনকে সংযত করিয়া রাখা তাহার অসাধ্য হইয়া উঠিয়াছে। আত্মপ্রবঞ্চনার চেষ্ট আবারও সে আরম্ভ করিয়াছিল । সুভদ্রের চিঠিটি বারবার বাহির করিয়া পডিয়া অজয়কে নূতনতর দৃষ্টি লইয়া দেখিতে চেষ্টা করিতেছিল। সতাই ত অপরিচয়ের মধ্যে কলুষ যত প্রশ্রয় পায় এত আর কিছুতে নহে । অজয় যদি তাহাকে ভালই বাসে, কেন সে সমস্ত বাধা দুই হাতে ঠেলিয়া একেবারে তাহার সম্মুখে আসিমা দাড়ায় না, মুক্তকণ্ঠে বলে না, আমি তোমাকে ভালবাসি, অক্ষরের পরমতম পরিচয়ে তোমাকে আমি কাছে পাইতে চাই ? কেন সে এমন করিয়া চোরের মত নিজের চারিদিকে আড়াল রচনা করিয়া চলে, ভিখারীর মত অন্ধকারে লুকাইয়া হাত পাতে ? অজয়ের চোখের যে গভীর দৃষ্টি একদা তাহাকে অভিভূত করিত, ভাবিতে চেষ্টা করিল, লে দৃষ্টি কলুষিত। সে-সৃষ্টি সত্যকার ঐন্দ্রিলাকে দেখে না, দেখিতে চায় না। অপরিচয়ের পার হইতে যতটুকুকে দেখা যায় কেবল সেইটুকুই দেখে এবং সেটা শ্রদ্ধা করিয়া দেখিবার মত জিনিস নয়। অজয়ের সম্বন্ধে নিদারুণ বিরূপতার মনকে ভরিয়া তুলিবে ভাবিতেছে, এমন সময় তাহার অন্ধস্বভার সংবাদে মুহূর্তে সব গুলট পালট হইয়া গেল। ঐজিলার সমস্ত শঙ্কিাশ ভরিয়া একটি ৰিণীৰ্ণ শুষ্ক । রোগ-পাণ্ডুর মুখ এবং একটি বেদন-ভারাতুর আঞ্জীa
পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩০৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।