কোণার্কের মন্দির ঐনিৰ্ম্মলকুমার বসু পুরী শহরের পূর্বদিকে, প্রায় বিশ মাইল দূরে, কোণার্কের স্বৰ্য্যমন্দির অবস্থিত। মন্দিরটি সমুদ্রের কূল হইতে প্রায় এক ক্রোশ দূরে। পুরী হইতে কোণার্কে যাইবার দুই তিনটি পথ আছে। তাহার মধ্যে একটি পথ প্রায় সমুদ্রের সহিত সমাপ্তরালভাবে কোণার্কের দিকে গিয়াছে। এ পথটির সবটুকুই বালির উপর দিয়া যাইতে হয়। দক্ষিণ দিকে উচ্চ বালিয়াড়িতে সমুদ্র ঢাকিয়া থাকে বলিয়া দেখা যায় না । কেবল কখনও কখনও বালির পাহাড়ের ফাক দিয়া সমুদ্রের ঘন নীল রেখা শ্রাস্ত পথিকের চোখ জুড়াইয় দেয়। উত্তর দিকে বহুদূরে কৃষ্ণবর্ণ বুক্ষশ্রেণীর অন্তরালে গ্রাম, সেগুলি প্রায়ই দেখা যায় না । উন্মুক্ত বালুর প্রান্তর, তাহার মধ্য দিয়া চলিতে চলিতে কখনও বা দু-একজন পথিকের সঙ্গে দেখা হয়, কখনও বা পিষ্ট্রের সবর্ণনিম্ন স্তরে হস্তী-শিকারের ছবি হয় না । কোথাও কোথাও দু-একটি মন্দির আছে, তাহাও অবিরাম হাওয়ার স্রোতে বালির আঘাতে প্রায় পুতিয়া গিয়াছে। দূর গ্রামের পুরোহিত দিনান্তে একবার বিগ্রহকে ফুল ও জল নিবেদন করিবার জন্ত আসিয়া আবার তাড়াতাড়ি গ্রামে ফিরিয়া যান। এই সমস্ত মিলিয়া কোণার্কের পথটিকে এমন করিয়া রাখিয়াছে যে পথিকের মন স্বভাবতই অবসন্ন ও ভারাক্রান্ত হইয়া উঠে । এই পথে পুরী হইতে ছয় সাত ক্রোশ অগ্রসর হইলে সিংহাসনের উপর রাজা নরসিংহদেব ও ঠাঙ্গর পুরোহিতের মূৰ্ত্তি দূরে কোণার্কের স্বৰ্য্যমন্দিরটি দেখা যায়। মন্দিরের চারিপাশে একটি ঘন ঝাউয়ের বন আছে এবং তাহার মধ্যে অসংখ্য পাথরের টুকরা ইতস্ততঃ স্তুপের মত পড়িয়া আছে। আমি যেবার প্রথম কোণার্কে যাই তখন প্রায় সন্ধ্যা নামিয়া আসিয়াছে। চারিদিকে বিশাল মন্দিরের ভগ্নস্তুপ,কোথাও জনপ্রাণী নাই, পথও অন্ধকারে দেখা যাইতেছে না। যাহাও আছে তাহাও বার-বার সম্মুখের স্ব-উচ্চ বালির পাহাড়ের দ্বারা প্রতিহত হইতেছে ; আর সকলের উপরে ঝাউপাতার সেই উদাস মর্শ্বরধ্বনি ! সব মিলিয়া চিত্তকে যেন অবসন্ন করিয়া দিল । মনে হইল, এমন স্থানেও কি শিল্প বাচিয়া
পাতা:প্রবাসী (ত্রয়স্ত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৩২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।